শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


অনন্য কাওছার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৭:৩১ এএম

নিখোঁজ

অনন্য কাওছার

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৭:৩১ এএম

নিখোঁজ

নিখোঁজ

এক.
ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকায় পড়াশোনা করার অভিপ্রায় ছিল মানিকের। ঢাকা শহরে মানিকের আসা হলো ঠিকই, কিন্তু পড়াশোনার বদলে তাকে কর্মের দিকে মনোনিবেশ করতে হয়েছে। নি¤œবিত্ত পরিবারে মেধাবী ছেলে-মেয়ের শেষ পরিণতি যেমনটা হয়ে থাকে, তেমনটাই ঘটেছিল মানিকের বেলায়। এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের মারফতে ঢাকা শহরে পৌঁছায় মানিক। গ্রামাঞ্চলে বেড়ে ওঠা ছেলেটির চোখেমুখে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা। এই আধুনিক শহরের এক-ইঞ্চি মাটি ও মানুষের সঙ্গে কিঞ্চিৎ পরিচয় নেই যার; তাকে একা-একা এতদূর চলে আসার নেপথ্যে ছিল মায়ের চিকিৎসার তাগিদ।

মানিকের তিন ভাইবোনের সবাই স্ব স্ব পারিবারিক জীবনে ব্যতিব্যস্ত। তাই মায়ের প্রতি কেউই যতœশীল নয়। মানিকের বাবার মৃত্যুর পর থেকে মায়ের ভরণপোষণের দায়-দায়িত্ব যেন মানিকের একাই নিতে হচ্ছে। তাই ইন্টারমিডিয়েট কমপ্লিট করার পূর্বেই তাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেরোতে হলো। মানিক ভালো করেই জানত মাটির তৈরি ভাঙাচোরা ঘরে, ফুটো টিনের চালার তলে অতিকষ্টে জীবনচক্র যেখানে কঠিন সেখানে দুমুঠো ভাতের তালাশের বদলে পড়াশোনা করাও এক রকমের বিলাসিতা। তার ওপর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার তাগিদ।

এতদিন টিউটোরিয়ালে যে সামান্য টাকা পেত তা দিয়ে কোনোরকম ডালভাত খেয়ে দিবারাত্রি অতিবাহিত হতো মানিক এবং তার মায়ের। চার মাস ধরে টিউশনি কয়েকটা হাতছাড়া হয়ে গেল তার। মায়ের বার্ধক্যজনিত অসুস্থতাও আকাশ ছুঁইছুঁই। গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন সংগঠনের সুবাদে ফার্মেসিকেন্দ্রিক ডিগ্রিধারী ডাক্তারের পদচারণ ঘটে থাকে মানিকের গ্রামে। অবশ্য এই বিশেষ সুযোগ তিন মাস অন্তর অন্তর হয়ে থাকে। মানিক মনস্থির করল যে করেই হোক ডিগ্রিধারী ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে মায়ের অসুখটা সেরে যাবে।

তা ছাড়া পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলেও এমবিবিএস ডা. হিরীমানের নাম ডাক। দূরবর্তী অঞ্চল থেকেও মানুষের সমাগম ঘটে ডা. হিরীমানের পদচারণ পড়লে। এবারেও মাইকিং করে নিকটস্থ এলাকায় ডা. হিরীমানের আগমনী বার্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সংবাদটি মানিকের কর্ণগোচর হলে সে অগ্রিম টিকিট কেটে নেয়। অনেক জোরাজুরি করে মানিক তার মাকে রাজি করিয়ে যথাযথ তারিখে ডাক্তারের নিকটস্থ হয়। ডা. হিরীমান মানিকের হাতে প্রেসক্রিপশন তুলে দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বলেন, ‘আপনার মায়ের অসুখের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার লক্ষ্যে ছোট্ট একটি অপারেশন জরুরি।

মেডিসিনে সাময়িক স্বস্তি পাবেন ঠিকই কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না, বুঝলেন মানিক ভাই।’ মানিক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলেও তার ঘাড়টা যেন একটুও  হেলেনি। দীর্ঘশ্বাসের মাত্রাটা ভারী হয়ে উঠার আগেই মানিক তার মাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো। গ্রামের আত্মীয়ের ফার্মেসি থেকে অর্ধেক টাকা পরিশোধ করে প্রেসক্রিপশনের মেডিসিন কিনে নিল। মাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে মেডিসিন খাইয়ে দৈনিকের মতো টিউটোরিয়ালে যাওয়ার কথা মানিকের। বিলটা নৌকো করে পাড়ি দিতে দিতে সিদ্ধান্ত বদলে নিয়ে মানিক ইসমাইল মিয়ার বাসায় এলো। ইসমাইল মিয়ার এলাকা মানিকের গ্রামের থেকে ত্রিশ কিলোমিটার দূরে। মানিক হাট থেকে একটি সাইকেল ভাড়া করে ইসমাইল মিয়ার বাসায় পৌঁছে অবিলম্বে (খেত-খামারে) চাকরি-সন্ধানের কথা জানায়।

ইসমাইল মানিকের মেধাশক্তির প্রখরতা স্কুল-কমিটির সভাপতি থাকাকালীন জানতেন, তখনকার দিনে মানিকের পড়াশোনায় বেশ ঔদার্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন তিনি। তাই ইসমাইল মিয়া মানিকের দৈন্যদশা নিরসনের লক্ষ্যে বলেন, ‘এক্কান কাম করিলাও আমি যতখান ফারি হেল্প করমু, ঢাকা শহরে আমার এখজন দোস্ত আছে, তারে খইয়া দিমু তোমারে এখক্কান উপায় দিবএনে, তার বাক্কা বড় ফার্মেসি আছে। খাইলায়-দাইলায় বেতনও ফাইলায় আর তুমি তো শিক্কিত ফুয়া, আরামেও তাখলায়, বুচ্চোনিতে কিতা খইলাম?’

ইসমাইল মিয়ার কথা শোনে মানিকের আলজিভে যেন কুদরতিবারিশ ঝরল। সে সম্মতি জানিয়ে বলে, ‘জি আইচ্ছা চাচা, মুই তো কোনোদিন ঢাকা শহর গেছিনা, কিচ্ছু চিনি না। যাওয়ার টেকাপয়সাও তো নাই। কিলান কিতা করমু?’ ইসমাইল মিয়া মানিকের ঢাকা যাওয়ার পুরো জার্নি নিয়ে নির্ভার থাকতে বলেন।

দুই.

দুই বছর কেটে গেল। মানিকের ঢাকা শহরে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার ফার্মেসিতে মেধাশক্তি খাটিয়ে খুব কম দিনেই কর্মদক্ষ হয়ে উঠেছে। ঢাকা শহরের অলিগলি মোটামুটি নখদর্পণে, তবে বন্ধুবান্ধবদের আধিক্য ছিল না বললেই চলে। এখনকার দিনের মতো তখন স্মার্টফোনের অবাধ বিচরণ ছিল না। গ্রামাঞ্চলে পুরো গ্রাম খুঁজে হাতেগোনা কয়েকটি স্মার্টফোন পাওয়া যেত।

মানিক ক্লাস নাইন-টেন থেকেই বাটন ফোনে ছবিতুলা উপযোগী মোবাইল ব্যবহার করে ফেসবুক চালাত, শৌখিন মনের পরিব্যপ্তি দৈন্যদশার কবলে পড়ে চক্ষুগোচর হয়নি। তবে ঢাকা শহরের আধুনিকতার মাতাল বাতাসে মানিকের হৃদয়ের গুপ্ত অভিলাষ বারংবার উঁকি দিয়ে উঠে। মানিকের হৃদয়ে দৈন্যদশা দূরীকরণের তাগিদে সর্বদা অশান্ত, অস্থির। এবার মায়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার জন্য মানিক গ্রামের বাড়িতে এলো। ঢাকা শহরে যাওয়ার সময়টাতে ভাইয়ের হাতেই মাকে রেখে গিয়েছিল। ডা. হিরীমানের মেডিসিন খেয়ে মানিকের মা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন বলে অপারেশন করতে হয়নি। এই ঘটনাকে সবাই অলৌকিক বলেই ধরে নিয়েছিলেন। তবে মানিক এ রকম অলৌকিকতায় তেমন বিশ্বাস করে না।

মানিকের গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসার দুটো উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমটা ছিল মায়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ, দ্বিতীয়টা ভাঙাচোরা ঘরে টিনের মেরামত করা যাতে করে বৃষ্টি-বাদলে মোটামুটি নিশ্চিন্তে থাকা যায়। গ্রামের বাড়িতে মানিকের পদস্পর্শ পড়তেই নিকটাত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবদের কণ্ঠস্বরে তার একতরফা প্রশংসা। যেমন কেউ বললেন মানিক তার বাবার মতো অতি-সুঠাম-সুন্দর-স্মার্ট হয়ে গেছে। কেউ বললেন মানিক কথায়-কথায় বিদেশিদের মতো ইংরেজি বলে, গ্রামের ভাষা ভুলে গিয়ে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলে। বাহ্ কী চমৎকার।

গ্রামের মুরব্বিরা এসেছেন তাদের ছেলে-সন্তানদের কীভাবে ঢাকা শহরে পাঠানো যায়। মায়ের সঙ্গে মানিকের বেশ ভালোই দিন কাটছিল। গ্রামাঞ্চলে সবাই তাকে আলাদা মর্যাদায় আসীন করেছে। কিন্তু মানিকের সমবয়সি উঠতি ছেলেরা তাকে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারেনি। এসব পাশ কাটিয়েই মানিক চলাফেরা করে। ফের ঢাকা শহরে যাওয়ার সময়টা ঘনিয়ে এলো। মায়ের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিয়ে বের হয় মানিক। অশ্রুসিক্ত নয়নে মানিকের মা তাকে বিদায় দিতে গিলে বলেন, ‘বাবা মানিক রে, দেইখা রাস্তাঘাট যাইয়ো, মাই রে আরেখবার আইয়া ফাইতায় না, মাই আখতা মরা যাইমু, মাই রে দাফন খরাত আইয়ো বাবা।’

মানিক মায়ের স্পর্শকাতর কথা শোনে মাকে জড়িয়ে হাউমাউ স্বরে কান্না করে বিদায় নিল। যাবার পূর্বে মায়ের ডান-মুঠোয় হাজার দুইএক টাকা ধরিয়ে দিয়ে আশ্বস্ত করল যে, পৃথিবীতে মায়ের জন্যই মানিকের সবকিছু। মায়ের হাসিমুখ দেখার জন্য মানিক বেঁচে থাকবে, কিন্তু সুদিন আসার পূর্বে মায়ের মৃত্যু সে কখনোই ভাবতে পারে না।

এগারো মাস পর একদিন।

মানিক উপলব্ধি করল পরের অধীনে থেকে চাকরি করে উন্নতি করা যাবে না। নিজের বিজনেস দাঁড় করলে বাড়িতে একটি ইটের দালান উঠানো যাবে। মায়ের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে গ্রামে যেতে হয়, বিজনেস থাকলে মাকে নিয়ে একসঙ্গে ঢাকা শহরে থাকা যাবে। এ ছাড়া বিয়েসাদি করতে হলে টাকা-পয়সা জমি-জমা দরকার। এভাবে আর কতদিন। মানিক সিদ্ধান্ত নিল একটি বিজনেস দাঁড় করাবে। কর্মচারী দরকার হলে গ্রাম থেকে নিয়ে আসবে। এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় নেই। কিন্তু এই বিজনেস দাঁড় করানোর জন্য অনেক টাকা দরকার। ঢাকা শহরের মতো জায়গায় বিজনেস স্টার্ট করতে হলে টাকা-পয়সার ঘাটতি থাকলে চলবে না। একটি উপায়ন্তর বের হবে ভেবে মানিক মনস্থির করে। বিশ্বস্ত সহযোগী ছাড়া বিজনেসের আইডিয়ার কথা আর কাউকে বলেনি। গ্রামের বাড়িতে চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া দরকার। তাই ঢাকা থেকে উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষা করছিল মানিক। অবশেষে একটি চমৎকার সুযোগ এলো।

তিন.
বিল ভর্তি পানি।
গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল, রাস্তা-ঘাট পানিতে থইথই করছে। মাঠ-ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর মানুষের রাস্তা-ঘাট পারাপার হয় নৌকানির্ভর। যাদের নৌকা নেই তারা কেউ কেউ কলাগাছের আঁটি দিয়ে একধরনের ভাসমান ‘পানি-বোর’ অর্থাৎ ভেলা তৈরি করেন। মানিকের গ্রামের বাড়িতে যেতে হলে একটি ছোটখাটো বিল পেরোতে হবে। ঘাটে নৌকা নেই। কলাগাছের তৈরি ভাসমান ভেলা (পানি-বোর) দিয়ে বিলটা অতিক্রম করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছে না মানিক। এ ছাড়া নৌকায় আসা-যাওয়া ঘণ্টা দুয়েক অন্তর অন্তর হয়ে থাকে। এমনও হয় যে তিন ঘণ্টা অতিবাহিত হয়ে যায়, অথচ নৌকার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। পূর্বাবস্থা বিবেচনা করে মানিক হাত উঁচিয়ে ভেলা নিয়ে ভাসমান দুই বালককে ডাক দেয়। বালকদের সহায়তায় মানিক বাড়ি পৌঁছে। মানিকের উপস্থিতিতে বিয়ের অনুষ্ঠান আনন্দমুখর হয়ে উঠে। আনন্দে হাসি-উল্লাসে কেটে যায় দিন। পরের দিন ফের ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে মানিকের ইচ্ছে হচ্ছিল না। সপ্তাহ দুয়েক থেকে যেতে পারলে ভালো হতো।

মানিক মনস্থির করে আরও দুদিন  বাড়িতে অবস্থান করবে এবং বিজনেস রিলেটেড আলোচনা করবে তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে। ভালো পরামর্শ পেলেও পেতে পারে বলে তার বিশ্বাস। মানিকের বিজনেসে যথাসাধ্য সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বস্ত করলেন তার চাচাতো ভাই বারিশ। প্রায় তিন-লক্ষাধিক টাকা বারিশ মানিকের হাতে একটি সহজ শর্তে তুলে দিলেন যে, দুই বছর পর সেই টাকা কুড়ি হাজার মুনাফাসহ ফেরত দেবে মানিক। একইভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মোটামুটি একটি বিজনেস দাঁড় করানোর মতো অর্থ নিয়ে ‘সিলেট টু ঢাকা’র উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মানিক।

চার.
গভীর রাত্রি। 
বাইরে ঝড়বৃষ্টির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বজ্রপাতের তীব্র শব্দে মানিকের মায়ের ঘুম ভেঙে গেল। চোখের সামনে মানিকের চশমাটা টেবিলে পড়ে আছে, দেখে তিনি মানিককে টেলিফোন করেন। টেলিফোনে সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না দেখে বেশ চিন্তিত হলেন তিনি। মাঝরাতে বড় ছেলেকে ডেকে তুলে মানিকের কথা জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু মানিক যে বিকেল বেলা মায়ের নিকট থেকে বিদায় নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিল সে কথা মানিকের মায়ের স্মৃতিতে নেই। সবাই তাকে আশ্বস্ত করলেন দিনের বেলা মানিক ঢাকা পৌঁছানোর পরপর টেলিফোন করবে। পরদিন সকাল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল কিন্তু মানিকের টেলিফোন বেজে ওঠেনি। বারবার চেষ্টা করার পরও মানিকের মোবাইল ফোনে কল যাচ্ছে না। নিকটাত্মীয়, পাড়াপ্রতিবেশী, সবাই উদ্বেগ প্রকাশ করায় বিষয়টি গণ-চিন্তায় রূপান্তরিত হলো।

মানিকের চাচাতো ভাই বারিশ প্রবল চিন্তিত হয়ে পড়লেন, তিনিও বারবার মানিকের মোবাইলে কল দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু মোবাইলের সুইচ অফ। মানিকের ভাইয়েরা, নিকটাত্মীয়রা ঢাকা শহরে গিয়ে নাসিরুদ্দিন হোজ্জার ফার্মেসিতে খোঁজখবর করেও মানিকের কোনো সন্ধান মেলেনি। গ্রামের সর্বদিকে মানিকের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। থানা-পুলিশ, নিখোঁজ-বিজ্ঞাপন, পীর-মুরশিদ, গণমাধ্যম কোনো প্রচেষ্টাই বাকি থাকেনি। কিন্তু মানিকের দেশে-বিদেশে কোনো অস্তিত্ব পাওয়া গেল না।

পনেরো বছর কেটে গেল।

মানিকের মা এখন পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন। তিনি এখনো মানিকের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। দরজার আড়ালে থেকে মানিকের সঙ্গে কথা বলেন। মানিকের অস্তিত্ব পৃথিবীতে না থাকলেও মানিকের মায়ের চোখে তার ছেলে-মানিক সর্বদা বর্তমান। অথচ মানিক আজও ঘরে ফেরেনি।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!