ব্রোকলি বা সবুজ ফুলকপি বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন কপি গোত্রের সবজি। কয়েক বছর আগেও ব্রোকলি বাংলাদেশের মানুষের কাছে অপরিচিত ও অপ্রচলিত সবজি ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটা লাভজনক হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং সবার কাছে সমাদৃতও বটে। ব্রোকলির উৎপত্তি ইতালিতে। চমৎকার এই সবজিটি এখন বাংলাদেশেই চাষ হচ্ছে এবং এটি দেশের চাইনিজ রেস্টুরেন্টগুলোর চাহিদা মিটিয়ে এখন দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে।
উপকারিতা
কপি গোত্রের অন্যান্য সবজির চেয়ে ব্রোকলি অপেক্ষাকৃত বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ ও ক্যানসার প্রতিরোধক। এতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, সি এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে এবং এর গন্ধটাও আকর্ষণীয়। ব্রোকলি ফুলকপির মতো অতবড় হয় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী সান্টা বারবার জানিয়েছেন, ব্রোকলিতে আইসোথিয়োসায়ানেটস নামে বিশেষ ধরনের যৌগ রয়েছে যা ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। ব্রোকলি স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ যে ভূমিকা রাখে তা মোটামুটি সবার জানা।
প্রয়োজনীয় জলবায়ু ও মাটি
সাধারণভাবে যে ধরনের জলবায়ুতে ফুলকপির চাষ হয় সেখানে ব্রোকলিও ভালো জন্মে। তবে ব্রোকলির পরিবেশিক উপযোগিতার সীমা একটু বেশি বিস্তৃত। পানি জমে না এরূপ উঁচু জমি, উর্বর দোআঁশ মাটি হলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। ব্রোকলির গাছ ১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবচেয়ে ভালো জন্মে। দেশের সব অঞ্চলেই ব্রোকলি চাষ করা যেতে পারে। সেচ ও পানি নিষ্কাশনের সুবিধা আছে এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
জাত
ব্রোকলি শুধু সবুজ রঙের হয় না। এর বিভিন্ন রঙের বিভিন্নতা আছে। বেগুনি বা সাদা রঙের ব্রোকলিও আছে। বেগুনি রঙ্গের জাতগুলো বেশি শক্ত এবং সবুজ রঙের চেয়ে কম স্বাদের হয়ে থাকে। উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হচ্ছে- প্রিমিয়াম ক্রপ, গ্রিন কমেট, ডিসিক্কো, টপার-৪৩, ডান্ডি, সপ্রডিটিং টেক্সাস ১০৭, গ্রিন ডিউক, ক্রুসেডার, ওয়ালথাম ২৯, গ্রিন মাউন্টেইল, ইতালিয়ান গ্রিন, গ্রিন বাড ইত্যাদি।
বীজ বপনের সময়
ভাদ্র-কার্তিক মাস পর্যন্ত বীজতলায় বীজ বোনা যায়। তবে সেপ্টেম্বরের শেষে সপ্তাহ বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।
চারা তৈরি
বীজতলায় বীজ দেওয়ার সময় কিছু বেশি বীজ ফেলতে হবে। প্রধান খেতে বা জমিতে চারা লাগানোর পর কিছু চারা মারাও যেতে পারে। মূল খেতের চারা মারা গেলে যেন একই বয়সের এসব চারা দিয়ে শূন্যস্থান পূরণ করা যায়। মনে রাখবেন মাস খানেকের কম বয়সি চারা লাগানো ভালো। লক্ষ্য রাখতে হবে কখনো যেন বীজতলা একেবারে শুকিয়ে না যায় আবার বেশি পানি জমেও না থাকে। চারা তোলার পূর্বে বীজতলায় সেচ দিয়ে নিতে হবে। তাহলে চারার গোঁড়া নরম হয়ে আসে এবং বীজ তুলতে সহজ হয়।
উপযুক্ত জমি তৈরি ও চারা রোপণ
ব্রোকলি ঠান্ডা আবহাওয়ার ফসল বলে বাংলাদেশে শুধু রবি মৌসুমে এর চাষ হয়। ব্রোকলির চাষ অবিকল ফুলকপির মতোই। সারাদিন রোদ পায় এমন জমি ব্রোকলি চাষের জন্য নির্বাচন করতে হবে। চারা লাগানোর পর চারার গোড়ায় অবশ্যই পানি দিতে হবে। চারা রোপণের পূর্বে গোড়ার দিকে দু-একটি বড় পাতা কেটে বাদ দিলে চারা কম মরবে। চারার মাথা থেকে নতুন পাতা ছাড়া শুরু হলেই বুঝতে হবে চারা মাটিতে লেগে গেছে এবং নতুন শিকড় ছেড়ে মাটি থেকে খাবার ও পানি গ্রহণ শুরু করেছে।
চারার রোপণ দূরত্ব
চারা থেকে চারা- ৫০ সেন্টিমিটার। সারি থেকে সারি- ৬০ সেন্টিমিটার।
সার প্রয়োগ/ব্যবস্থাপনা
ব্রোকলির জন্য সার খুবই উপকারী। ইউরিয়া সারের পরিমাণ বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ফলনও বাড়ে। জমি তৈরির সময় ও পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। প্রতি হেক্টরে গোবর ১৫ হাজার কেজি, ইউরিয়া ২৫০ কেজি, এমপি ২০০ কেজি, টিএসপি ১৫০ কেজি এবং প্রতি চারায় পচা খৈল ৫০ গ্রাম হারে প্রয়োগ করতে হয়। জৈব সারের সঙ্গে ইউরিয়া সার চারা রোপণের ১৫ দিন পর থেকে দুই কিস্তিতে সমান ভাগ করে দিতে হবে।
সেচ ও পানি নিষ্কাশন
সার দেওয়ার পরপরই সেচ দিতে হবে। জমি শুকনো দেখলে সেচ দিতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন
ব্রোকলি চাষের সময় জমিতে পোকার আক্রমণ হতে পারে। পোকা দমনের জন্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। আমাদের দেশে ব্রোকলির সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা হলো মাথাখেকো লেদা পোকা।
ফসল সংগ্রহ
ব্রোকলি রোপণের ৬০-৭০ দিনের মধ্যে পুষ্পমঞ্জুরি সংগ্রহের উপযুক্ত সময়। ধারালো ছুরি বা ব্লেড দ্বারা তিন ইঞ্চি কা-সহ পুষ্পমঞ্জুরি কেটে সংগ্রহ করতে হয়। এভাবে একই জমি থেকে ১ মাসব্যাপী কয়েকবার ব্রোকলি সংগ্রহ করা যায়। পুষ্পমঞ্জুরি মোটামুটি জমাট বাঁধা অবস্থায় সংগ্রহ করা উচিত।
সাবাব ফারহান
বিসিএস (কৃষি)
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা
ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন