সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ০১:২২ এএম

নিরাপদ থাকবে রবিশস্য

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৯, ২০২৫, ০১:২২ এএম

নিরাপদ থাকবে রবিশস্য

সামনেই শীতকাল, আর শীত মানেই রবিশস্যের সময়। মাঠে তখন গম, সরিষা, মসুর, আলু, পেঁয়াজ, রসুনের মতো শস্যের চাষে ব্যস্ত সময় কাটান কৃষকেরা। তবে এই আনন্দঘন মৌসুমের মাঝেই কৃষকের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় পোকামাকড়। ফসলের কচিপাতা, ফুল বা দানায় আক্রমণ চালিয়ে এই পোকামাকড় অনেক সময়ই ফসলের বড় ক্ষতি করে। ফলে কৃষক বাধ্য হন কীটনাশক ব্যবহারে, যা সাময়িকভাবে ফলপ্রসূ হলেও দীর্ঘমেয়াদে মাটির উর্বরতা, পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ ক্ষতিকর। তবে কৃষিবিদদের মতে, কিছু প্রাকৃতিক উপায় অবলম্বন করে সহজেই অর্গানিক পদ্ধতিতে পোকা দমন করা সম্ভব। এ বিষয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বিস্তারিত জানাচ্ছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান

জৈব কীটনাশক ব্যবহার

প্রাকৃতিকভাবে পোকা দমনে সবচেয়ে কার্যকর উপাদান হলো নিমপাতা ও নিমবীজ। নিমবীজ গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে ছেঁকে স্প্রে করলে পোকামাকড়ের জীবনচক্র ব্যাহত হয় এবং ধীরে ধীরে তাদের সংখ্যা কমে যায়। প্রতি লিটার পানিতে প্রায় ৫০ গ্রাম নিমবীজ গুঁড়া মিশিয়ে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তৈরি করা নিমনির্যাস রবিশস্যে ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া মহুয়া ও তেতুল পাতার নির্যাসও পোকা দমনে কার্যকর। ১ কেজি পাতা ৫ লিটার পানিতে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে নিলে একটি প্রাকৃতিক স্প্রে প্রস্তুত হয়। এসব জৈব স্প্রে গাছের ক্ষতি না করে পোকা দূর করে এবং মাটির উপকারী জীবাণুগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখে।

ফাঁদ ও আলো ব্যবহার

রবিশস্যের খেতে আলোক ফাঁদ ও ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করা এখন একটি সহজ ও কার্যকর কৌশল। রাতে আলোর উৎসের দিকে অনেক ক্ষতিকর পতঙ্গ আকৃষ্ট হয়। একটি লণ্ঠন বা ব্যাটারিচালিত আলো নিচুতে ঝুলিয়ে নিচে সাবান পানিভর্তি পাত্র রাখলে পোকাগুলো আলো দেখে এসে পানিতে পড়ে মারা যায়। অন্যদিকে, ফেরোমন ফাঁদ বিশেষভাবে ফলছিদ্রকারী ও দানা ছিদ্রকারী পোকার জন্য কার্যকর। এই ফাঁদে স্ত্রী পোকার ফেরোমন-ঘ্রাণে পুরুষ পোকা আকৃষ্ট হয়ে ধরা পড়ে, ফলে তাদের প্রজনন বন্ধ হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বর্তমানে এসব ফাঁদ বিনা মূল্যে বা স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করছে, যা কৃষকদের জন্য বড় সহায়তা।

জীববৈচিত্র্যের ব্যবহার

রবিশস্যের খেতে সহচর ফসল চাষ পোকা নিয়ন্ত্রণের একটি পুরোনো কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর কৌশল। যেমন: সরিষার সঙ্গে মুগ বা ছোলা চাষ করলে একটির গন্ধে অন্য ফসলে আক্রমণকারী পোকারা বিভ্রান্ত হয়। গাঁদা ফুল, তুলসী বা ধনেপাতা রোপণ করলে এদের গন্ধ অনেক পোকাকে খেতের বাইরে রাখে। এ ছাড়া, খেতে ঘাস জাতীয় ও ফুলের গাছ রাখলে প্রাকৃতিক শত্রু যেমন: মাকড়, বোলতা, লেডিবার্ড, পরজীবী বোলতা ইত্যাদি উপকারী পোকা বাসা বাঁধে, যারা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসলকে রক্ষা করে। একে বলা হয় জীববৈচিত্র্যনির্ভর দমন পদ্ধতি। এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও পরবর্তী মৌসুমের জন্য পরিবেশ প্রস্তুত রাখতেও সাহায্য করে।

জৈব সার ও মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা

মাটির উর্বরতা ও গাছের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখলে স্বাভাবিকভাবে পোকা আক্রমণ কম হয়। এজন্য জৈব সার যেমন গোবর সার, কম্পোস্ট, কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) নিয়মিত ব্যবহার করা উচিত। এসব সার মাটিতে প্রয়োজনীয় অণুজীবের উপস্থিতি বৃদ্ধি করে, যা ক্ষতিকর পোকামাকড়ের ডিম ও লার্ভা নষ্ট করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া, খেতের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ঠিক রাখা ও নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার রাখলে অনেক পোকা ও তাদের আশ্রয়স্থল ধ্বংস হয়। মাটির ভারসাম্য রক্ষা মানেই গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি,  যা এক অর্থে প্রাকৃতিক পোকা দমন।

সমন্বিত পোকা ব্যবস্থাপনা (ওচগ)

সবশেষে, প্রাকৃতিক পোকা দমনকে টেকসই করতে হলে কৃষকদের সচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। শুধু একটি পদ্ধতি নয়, বরং একাধিক পদ্ধতির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ‘সমন্বিত পোকা ব্যবস্থাপনা’ বা ওচগ (ওহঃবমৎধঃবফ চবংঃ গধহধমবসবহঃ)। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকে পোকা শনাক্তকরণ, খেতে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, প্রাকৃতিক শত্রু সংরক্ষণ, জৈব স্প্রে ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব কৃষিকৌশল প্রয়োগ। প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় কৃষকরা যদি এই পদ্ধতিগুলো নিয়মিত অনুসরণ করেন, তবে রবিশস্যে পোকা আক্রমণ অনেকাংশে কমে যাবে, রাসায়নিকের ব্যবহার হ্রাস পাবে এবং নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে।

অনুলিখন: আরফান হোসাইন রাফি

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!