ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকটে নাকাল সিলেটবাসী

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ০১:২৫ এএম

একদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে গড় তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে, অন্যদিকে ঘনঘন লোডশেডিং এই দুইয়ে মিলে সিলেটবাসীর এখন নাভিশ্বাস। সিলেটজুড়ে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট এখন জনজীবনকে করে তুলেছে দুর্বিষহ। প্রতিদিন গড়ে অন্তত সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। কখনো মাঝরাতে, কখনো ভোরে, আবার দিনভর যেকোনো সময় হঠাৎ করে চলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ। নেই কোনো নির্ধারিত সময়সূচিও।

এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থরা। নগরীর লাখো মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এতে সিলেটে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। এমন পরিস্থিতিতেও কোনো সুখবর দিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ।

বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সিলেটের বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র কুমারগাঁও ২৫ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশনটি প্রায় ১০ দিন ধরে বন্ধ থাকায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে সহকারী প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ আচার্য বলেন, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্টেশনটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। বড় কোনো সমস্যা নেই। 

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, আমাদের হাতে এখন কোনো নিজস্ব জেনারেশন নেই। পুরোপুরি গ্রিডের ওপর নির্ভর করছি। কুমারগাঁও স্টেশনের ট্রান্সফরমার সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। কিন্তু সেটি আমাদের নিয়ন্ত্রণেও নেই।

সূত্র জানায়, মূলত জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কমিয়ে আনার কারণে সিলেটে বিদ্যুৎ সংকট তৈরি হয়েছে। চাহিদার তুলনায় এখন সরবরাহ অর্ধেকে নামানো হয়েছে। এটি সামাল দিতে গিয়ে স্টেশনগুলোকে করতে হচ্ছে লোডশেডিং। অপরদিকে আন্ডারলোড ফ্রিকুয়েন্সির কারণে শিডিউল ছাড়াই দীর্ঘ সময় লোডশেডিংয়ের মুখ পড়তে হয় সিলেটকে। বিদ্যুৎ চাহিদা যখন নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে বেড়ে যায়, তখন ঢাকা-সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আপনাআপনি লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিলেটে তখন নেমে আসে অন্ধকার। 

বিউবো সিলেট বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন বলেন, আমরা পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। ঢাকা থেকে হঠাৎ বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সিস্টেমে ফ্রিকোয়েন্সি ড্রপ হলে সেটি করা হয়। ফলে আমরা বাধ্য হয়েই লোডশেডিং করি।

এদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ ফোন করে বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করছেন, কেউ আবার সরাসরি গালাগাল করে ক্ষোভ ঝাড়ছেন।
দক্ষিণ সুরমার বাসিন্দা আমিনা বেগম বলেন, রাত ৩টার সময় লোডশেডিং হয়। গরমে ঘুমানো যায় না, দিনের বেলাতেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। আমরা কীভাবে বাঁচব?

সিলেট মহানগরীর মেডিকেল কলেজ এলাকার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাফি হোসেন বলেন, পরীক্ষা সামনে। বিদ্যুৎ না থাকায় পড়াশোনার পরিবেশ নেই। ইন্টারনেট চলে যায়, মোবাইল চার্জ থাকে না, ফ্যান চলে না। বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করে না।

মহানগরীর শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী আজহার উদ্দিন বলেন, দিনে ৪-৫ বার বিদ্যুৎ যায়। ফ্রিজের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ছোট ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারছি না।
সূত্র জানায়, সিলেট মহানগরীর ১৩টি সাবস্টেশন ও পাঁচটি ডিভিশন বর্তমানে শুধু জাতীয় গ্রিডের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু জাতীয় লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার (এনএলডিসি) থেকে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবারও সিলেটে ৩৩ শতাংশ লোডশেডিং রেকর্ড হয়েছে। কম ভোল্টেজ, সাবস্টেশনে বারবার ফিউজ ছিঁড়ে যাওয়া এবং তার ছিঁড়ে পড়ার মতো ঘটনাও বেড়েছে। এতে আরও ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।

বিউবো সিলেট বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামস-ই আরেফিন বলেন, অনেক গ্রাহক ফোন করে গালাগাল করেন। কিন্তু আমরা নিজেরাও অসহায়। দায় অন্য জায়গার, কিন্তু ভোগান্তির দায় নিতে হয় আমাদের।

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল কাদির বলেন, ভোল্টেজ কমছে, ফিউজ ও তার ছিঁড়ে পড়ার ঘটনা বাড়ছে। কুমারগাঁও চালু হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে, কিন্তু কবে চালু হবে বলা যাচ্ছে না।