কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশে দফায় দফায় ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গত বছরের ১৮ই জুলাই প্রথম দফায় সারা দেশে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়, যার ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
সপ্তাহখানেকের মধ্যে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ফিরতে শুরু করলেও বন্ধ রাখা হয় সামাজিক সব যোগাযোগ মাধ্যম। দশ দিন বন্ধ থাকার পর চালু হয় মোবাইল ইন্টারনেট।
কিন্তু ততদিনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যায়, যা পরবর্তীতে শেখ হাসিনার সরকারের পতনকে তরান্বিত করে।
ইন্টারনেট বন্ধের এই ঘটনাটি এমন একটি সময় ঘটে, যখন আন্দোলন দমনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক বলপ্রয়োগ শুরু করে।
আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলির ঘটনায় বাড়তে থাকে হতাহতের সংখ্যা। আইনশৃঙ্খলা বহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও হামলার জন্য দায়ী করা হয়।
সেসব ঘটনার ছবি ও ভিডিও মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকসহ সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে, যার ফলে ক্রমেই আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে।
ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের সংগঠিত করার পাশাপাশি সমন্বিতভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। নতুন কর্মসূচি ঘোষণাসহ আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছিলো অনলাইনে।
এমন পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরই আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়ন আরও বাড়ে।
পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে নিহতের সংখ্যা দুইশ' ছাড়িয়ে যায়। সেইসঙ্গে চলতে থাকে ব্যাপক ধর-পাকড়।
কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো তাৎক্ষণিকভাবে সেসব সংবাদ অনলাইনে প্রকাশ করতে পারছিলো না। ফলে কারফিউয়ে ঘরবন্দি মানুষের পক্ষে তখন দেশের খবরাখবর পাওয়া রীতিমত কঠিন হয়ে পড়ে, যা তাদেরকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিলো।
তবে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার পরেও বিশেষ ব্যবস্থায় সংবাদ প্রকাশ অব্যাহত রেখেছিল বিবিসি বাংলা।