শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:৩৮ এএম

নির্বাচনি আলোচনায় হুমায়ুন কবির

সালমান ফরিদ, সিলেট

প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০২৫, ০৬:৩৮ এএম

নির্বাচনি আলোচনায় হুমায়ুন কবির

সিলেটের আলোচিত সংসদীয় আসন সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর)। যে আসনে এতদিন বিএনপির একক প্রার্থী ছিলেন ২০১২ সালে নিখোঁজ হওয়া দলটির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা। বর্তমানে এই আসনে গণজোয়ার তুলেছেন বিএনপির আরেক নেতা। তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির। তারেক রহমানের নির্দেশে জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নেমেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। 

বিশ্বনাথ ও ওসমানী নগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী লুনা ছাড়া গত ১৬ বছরে এ আসনে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার মতো কোনো নেতা আসেনি বিএনপি পরিবার থেকে। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন হুমায়ুন কবির। ফলে নির্বাচনকেন্দ্রিক আলোচনার কেন্দ্রে এখন তিনি। ইলিয়াস আলী গুমের শিকার হওয়ার পর থেকে সিলেটের এ আসনে অনেকটা প্রাণহীন, নিস্তব্দ হয়ে পড়ে বিএনপি। বর্তমানে সিলেটের এ দুই উপজেলায় নির্বাচনের আমেজ বইছে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সিলেট-২ থেকে তাহসিনা রুশদির লুনার সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে হুমায়ুন কবিরের নামও।

হুমায়ুন কবিরের বাড়ি সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায়। স্থায়ী বসবাস যুক্তরাজ্যে। সেখানকার বিএনপিতে প্রভাবশালী তিনি। থাকেন দলের প্রধান নীতিনির্ধারক তারেক রহমানের কাছাকাছি। ব্রিটেনে উচ্চশিক্ষা শেষে কাজ করেছেন সে দেশের সরকারের সঙ্গে। বিভিন্ন দপ্তরে রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। যেকোনো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তারেক রহমানের ড্রয়িংরুমে তার ডাক পড়ে সবার আগে। সে হিসেবে তিনি পরিণত হয়েছেন দলের অন্যতম নীতিনির্ধারকে। বেগম জিয়ারও স্নেহের পাত্র তিনি। বিগত আওয়ামী সরকারের সময় বিরোধী অবস্থানের কারণে দীর্ঘদিন দেশে ফিরতে পারেননি। এসেছেন ৫ আগস্টের পরে। দেশে ফিরে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসেছেন আলোচনায়। নেতাকর্মীরা জানান, এ আসনে সংসদে দলের হয়ে প্রার্থিতা করার মতো নেতা গড়ে উঠছে না। কেউ উঠতে চাইলেও তাকে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। এলাকার জনপ্রিয় নেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর নেতৃত্বে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। হুমায়ুন কবির বুঝি এবার সেই শূন্যতা পূরণ করবেন। এলাকার নেতাকর্মীদের আলোচনায় তাদের আশা-আকাক্সক্ষা, দুঃখ-ক্ষোভ, ব্যথা-বেদনা ফাইলবন্দি করে মাস-দুয়েক আগে নিয়ে যান ব্রিটেনে। পরামর্শ নেন তারেক রহমানের। কিছুদিনের মধ্যে ফেরত এসে হুমায়ূন কবির জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ পেয়েই তিনি দেশে এসেছেন। সাবেক এমপি ইলিয়াস আলীর দুর্গ উদ্ধার করে বিএনপিকে উপহার দিতে মাঠে কাজ করতে তাকে বলা হয়েছে।

দেশে ফিরেই তিনি আলাদাভাবে বৈঠক করেন দুই উপজেলার বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা ও সিলেট বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে। তাদের পরামর্শে তিনি ওসমানী নগর ও বিশ্বনাথে বিএনপির ব্যানারে সুধী সমাবেশ করার সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দলকে চাঙা করার প্রস্তুতি নেন। দুই উপজেলার বর্তমান অনেক দায়িত্বশীল ছাড়াও তার সঙ্গে রয়েছেন বিএনপির বঞ্চিত, সিনিয়র অনেক নেতাকর্মী যারা এতদিন কোণঠাসা ছিলেন। 

ইতোমধ্যে হুমায়ূন  কবিরের তৎপরতায় সিলেট-২ আসনে বিএনপি চাঙা হয়ে উঠেছে। নির্বাচনের আগে এলাকাটিতে এখনই নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। চায়ের টেবিল ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির দুই গ্রুপের বাকযুদ্ধ জমে উঠেছে, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে বিশেষ আগ্রহে তৈরি হয়েছে নির্বাচনের আবহ। লুনা ও হুমায়ুন কবিরÑ দুইজনই বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী। নির্বাচন নিয়ে তাদের তৎপরতা অনেকেই বিশ্বনাথ-ওসমানীনগরের জন্য সুসংবাদ হিসেবে দেখছেন। তাদের মাধ্যমে এখন উন্নয়ন ও ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকার আশা এলাকাবাসীর।

হুমায়ুন কবির দেশে ফিরে গত ৭ আগস্ট বৃহস্পতিবার ওসমানীনগরে সুধী সমাবেশ করেন। পরদিন বিশ্বনাথে নাগরিক সমাবেশে তিনি ছিলেন প্রধান অতিথি। তার এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিশ্বনাথে বিএনপির স্মরণকালের অন্যতম শোডাউন অনুষ্ঠিত হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশের আলোচিত রাজনৈতিক এই জনপদে হঠাৎ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই কূটনৈতিক ব্যক্তিত্বের এমন শোডাউন স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন বার্তা দিয়েছে। এ আসনে ইলিয়াস পরিবারের বাইরের কেউ বিএনপির এমপির টিকিট দাবি করার সাহস ছিল না। হুমায়ুন কবিরের আবির্ভাব লুনার জন্য মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সমাবেশে উপস্থিত নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেটের স্বজ্জন রাজনৈতিক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইমরান আহমদ চৌধুরী। এ ছাড়াও সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি আশিক চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সুহেল আহমদ চৌধুরী, লামাকাজি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া, দেওকলস ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান খায়রুল আমিন আজাদ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে সমাবেশ ও হুমায়ুন কবিরের রাজনৈতিক তৎপরতা ইলিয়াসপত্নী লুনা তার ক্যারিয়ারের হুমকি হিসেবে দেখছেন বলে মনে করছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। কারণ একদিন পরই গত ৯ আগস্ট বিকেলে তিনি অনুসারীদের দিয়ে পাল্টা শোডাউন করেন। সেখানে হুমায়ুন কবিরকে ইঙ্গিত করে আপত্তিকর স্লোগানও দেওয়া হয়। ‘যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার খোরাক জোগায়।

বিশ্বনাথের সমাবেশে হুমায়ুন কবিরের বক্তব্যের পুরোটাজুড়েই ছিল ইলিয়াস আলীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা মেশানো। সেখানে তিনি বলেছেন, ইলিয়াস আলী ও তার পরিবারের প্রতি মানুষের ভালোবাসার অন্ত নেই। কিন্তু রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নতুন নেতৃত্ব তৈরি করবে। সেই জায়গায় শূন্যতা কোনো দলের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ৫০ দিনের মধ্যে একটি কমিশন গঠন করে আমাদের এলাকার জনপ্রিয় সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলী গুমের রহস্য উদ্ঘাটন করা হবে।

দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে হুমায়ূন কবির বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাকে সিলেট-২ আসনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার নির্দেশেই আমি এলাকায় সমাবেশে অংশ নিচ্ছি। এটি আমার ব্যক্তিগত সমাবেশ ও রাজনৈতিক তৎপরতা নয়, এটি বিএনপির সমাবেশ। নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত ও নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করতেই এই উদ্যোগ। এতে আমরা সফল। পুরো আসনে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।

আলোচনার কেন্দ্রে এখন বিএনপি। দল যাকেই মনোয়নয়ন দেবে, আমরা সবাই তার হয়েই কাজ করব। দল যদি এ আসনে আমাকে যোগ্য মনে করে এবং ভোটে নির্বাচিত হই, তাহলে এখানকার মানুষের আকাক্সক্ষার ধন ইলিয়াস আলীর গুম রহস্য প্রকাশ করবই। আগামীতে আমার নেতা তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হলে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটবে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!