শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০৬:৪২ এএম

বিপৎসীমার ওপরে তিস্তার পানি উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০৬:৪২ এএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

টানা কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে তলিয়ে যাচ্ছে উত্তরের পাঁচ জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীর বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে করে এসব জেলার নিচু ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে এবং নিম্নাঞ্চলের শাকসবজি, রোপা আমনসহ বীজতলা তলিয়ে গেছে। এসব জেলার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডালিয়া ডিভিশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (পানি শাখা) তহিদুল ইসলাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে সকাল ৬টায় ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং সকাল ৯টার পর ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ডালিয়ায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তার পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় পানিতে ডুবে গেছে বসতবাড়ি। গবাদি পশুর চারণভূমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় পশুখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে ৫ জেলার প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা ও মর্নেয়া ইউনিয়ন, কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া, টেপামধুপুর ইউনিয়ন এবং পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর, দ্বীপচর, লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার ৩৩টি গ্রাম, কুড়িগ্রামের ২৭টি গ্রাম ও নীলফামারীর ১৪ গ্রামের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। ইতিমধ্যে পানিবন্দি মানুষ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

তিস্তাপাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা এনামুল কবির বলেন, সোলার প্যানেলের কারণে পানির চাপ পড়ছে লোকালয়ের রাস্তা ও বাঁধে। এগুলো রক্ষা করা না হলে হাজার হাজার বসতভিটা আর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হবে। তখন নদী এসে পৌঁছবে উপজেলা শহরে।

তিস্তাপাড়ের গোবর্দ্ধন গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন জানান, গতকাল সকাল থেকেই নদীর পানি দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে, ফলে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে গেছে এবং মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, তিস্তার পানি হুহু করে বাড়ছে। আমাদের জীবনযাপন এখন খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে।

পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের দিনমজুর সামসুল আলম জানান, নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় পরিবারগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। তিনি বলেন, পশু-পাখি, শিশু, বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে মানুষ চরম বিপাকে আছে। আমাদের বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে, কিন্তু কেউ খোঁজখবর নিচ্ছে না। তাই প্রশাসনের কাছে দ্রুত সহযোগিতা চাই।

এদিকে, গঙ্গাচড়া মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরে সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৭০ মিটার এলাকা ধসে পড়েছে। যার কারণে বাঁধে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবল স্রোতে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে লালমনিরহাট-রংপুর সড়কসহ পার্শ্ববর্তী হাজারের বেশি পরিবারের বসতবাড়ি। ভাঙন ঝুঁকিতে থাকায় বাঁধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পুরো বাঁধ ভেঙে গিয়ে সেতু ও যোগাযোগব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

মহিপুর এলাকার বাসিন্দা আব্বাস আলী বলেন, এর আগের দুইবারের বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তা রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এবার নদীতে পানি আসা মাত্রই বাঁধের ৭০ মিটার জায়গা ধসে গিয়ে বিশাল গর্ত হয়েছে। অথচ এখনো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। সব কিছু বিলীন হওয়ার পর পরিদর্শনে আসবে তারা, তখন আর করার কিছুই থাকবে না।

লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, আগের দুইবার বন্যায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলাম, কিন্তু তারা পদক্ষেপ নেয়নি। এবারও প্রবল স্রোত বাঁধে আঘাত হানছে, উজানে আরও বৃষ্টি হলে বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। বাঁধ ভেঙে গেলে তখন পানি সরাসরি লালমনিরহাট-রংপুর সড়কে আঘাত হানবে, এতে কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। পাশাপাশি তিনটি গ্রামের অন্তত দেড় হাজার পরিবার সরাসরি ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক রকিব হায়দার বলেন, বন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে বলেও জানান এই দুই জেলা প্রশাসক।

Link copied!