বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৪:৩৩ এএম

গোপনে ২২ হাজার কোটি টাকার নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছিল আ.লীগ সরকার 

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২৫, ০৪:৩৩ এএম

গোপনে ২২ হাজার কোটি টাকার নজরদারি সরঞ্জাম কিনেছিল আ.লীগ সরকার 

বাংলাদেশ সরকার গত এক দশক তথা ২০১৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ১৬০টিরও বেশি নজরদারি প্রযুক্তি এবং স্পাইওয়্যার আমদানি ও ব্যবহার করেছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এসব প্রযুক্তি অস্বচ্ছ ক্রয় প্রক্রিয়া এবং তৃতীয় দেশের মধ্যস্থতায় অনেকটা গোপনে আনা হয়েছে। এসব নজরদারি প্রযুক্তি ইসরায়েল, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও আরব আমিরাতের মতো দেশ থেকে কেনা হয়েছে। 

টেকগ্লোবাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য ডিজিটাল পুলিশ স্টেট: সার্ভিলেন্স, সিক্রেসি অ্যান্ড স্টে পাওয়ার ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আসল সংখ্যা ও ব্যবহৃত প্রযুক্তির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। এ ছাড়া সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে কেনার কথা বলা হলেও সাইবার নজরদারি রাজনৈতিক বিরোধী, সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সাধারণ নাগরিকদের লক্ষ্য করে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচনের সময় এবং গণবিক্ষোভের সময়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক আমলের পুলিশিং ঐতিহ্য থেকে আধুনিক সাইবার-ভিত্তিক নেটওয়ার্কে রূপান্তরিত হয়েছে। এক বছর ধরে চলা গবেষণার ভিত্তিতে তৈরি ৭০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলা এবং ২০১৬ সালে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে এই নজরদারির বিস্তার ঘটে। 

এসব নজরদারি প্রযুক্তি ও খরচ সম্পর্কে টেকগ্লোবাল ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ যে ধরনের প্রযুক্তি আমদানি করেছে, তার মধ্যে রয়েছে আইএমএসআই ক্যাচার, ওয়াই-ফাই ইন্টারসেপ্টর অ্যান্ড সেলিব্রাইট, ফিনফিশার, প্রিডেটরের মতো উন্নত স্পাইওয়্যার। এসব প্রযুক্তি বিস্তৃত এবং প্রায়শই পরোয়ানা ছাড়া নজরদারি চালানোর সুযোগ করে দেয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই ১৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের মধ্যে কমপক্ষে ৪০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে ইসরায়েলি উৎস থেকে আসা প্রযুক্তিগুলোর জন্য। এসব প্রযুক্তির বেশির ভাগই বিশ্বজুড়ে অন্যান্য স্বৈরাচারী শাসনেও ব্যবহৃত হয়েছে বলে জানা যায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুসন্ধানে দেখা যায়Ñ রাইডশেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি, বিভিন্ন গেমস, ই-কার্মসের মতো দৈনন্দিন ব্যবহার হতো এমন সাধারণ অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্ট ফোনে ছড়িয়ে দেওয়া হতো নজরদারি ম্যালওয়ারগুলো; যার মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো খুব সহজেই গোপনে ওই স্মার্ট ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নজরদারি চালাতে পারত। এ ছাড়া বাংলাদেশ সরকারের গোপন নজরদারির বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আসে সিটিজেন ল্যাবের ২০১৮ সালের একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে। যেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৫টি দেশের মধ্যে একটি, যারা ইসরায়েলের সাইবার ইন্টিলিজেন্স ফার্ম এনএসও গ্রুপের পেগাসাস ব্যবহার করে। 

এসব প্রযুক্তির ক্রেতা সংস্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি): নজরদারি প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো এনটিএমসি, যা মোট ব্যয়ের ৫৮ শতাংশ অর্থাৎ, প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। তারা ইন্টারনেট ট্র্যাফিক পর্যবেক্ষণ ও ডিক্রিপ্ট করার জন্য ডিপ প্যাকেট ইন্সপেকশন (ডিপিআই) এবং কনটেন্ট ফিল্টার করার জন্য স্পাইওয়্যার কিনেছে। ২০২২ সালে, এনটিএমসি ফরাসি সাইবারসিকিউরিটি ফার্ম ইন্টারসেক থেকে ১৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি নেটওয়ার্ক ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম এবং আমেরিকান ফার্ম ইয়ান্না টেকনোলজিস (ণধহহধ ঞবপযহড়ষড়মরবং) থেকে ৫১ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি ‘ইন্টিগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম’ ক্রয় করে।

র‌্যাব ও পুলিশ: এই সংস্থাগুলো ওয়াই-ফাই ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ইন্টারসেপশন, সিগন্যাল জ্যামিং এবং বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষভাবে তৈরি প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করেছে। 

ডিজিএফআই: ডিজিএফআই প্রাথমিকভাবে সেল নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ, ট্যাপ করা এবং সিগন্যাল জ্যামিংয়ের জন্য অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করেছে। ২০১৫ সালে তারা সিটিজেন ল্যাব থেকে ফিনফিশার নামের একটি কম্পিউটার স্পাইওয়্যার কিনেছিল, যা ডিভাইসে ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে ডেটা চুরি করতে পারে।

বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি (ইএউ ব-এঙঠ ঈওজঞ) : এই সংস্থা সামাজিক মাধ্যম, মেসেজিং ও ওয়েব কনটেন্ট পর্যবেক্ষণের জন্য স্পাইওয়্যারে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। তারা অক্সিজেন ফরেনসিক ডিটেকটিভ এবং বেলকাসফটএক্সের মতো টুলও ব্যবহার করেছে।

বাংলাদেশের কাছে এসব নজরদারি প্রযুক্তির বিক্রেতার তথ্যও জানানো হয়েছে টেকগ্লোবাল ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়Ñ অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের কাছে নজরদারি প্রযুক্তি বিক্রি করেছে। সবচেয়ে সমালোচিত বিষয় হলো, ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও সেলেব্রাইট (ঈবষষবনৎরঃব), এনএসএ গ্রুপ (পেগাসাস), ইনটেলেক্সা, কোরালকো টেক এবং ইউটিএক্স টেকনোলজিসের মতো ইসরায়েলি কোম্পানিগুলোর তৈরি প্রযুক্তি সাইপ্রাস, সিঙ্গাপুর ও হাঙ্গেরির মতো তৃতীয় দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এ ছাড়া তুরস্কের স্পাইওয়্যার ফার্ম বিলগি টেকনোলজি টাসারিমও (ইরষমর ঞবশহড়ষড়লর ঞধংধৎরস-ইঞঞ) নজরদারি সরঞ্জাম বিক্রি করেছে। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশ ইসরায়েলের কাছ থেকে ক্রয় করেছে ২৪ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সরঞ্জাম। এ ছাড়া ফ্রান্স থেকে ১৬ দশমিক ৭১ মিলিয়ন ডলার, সিঙ্গাপুর থেকে ৭ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার, জার্মানি থেকে ১ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার, কানাডা থেকে  ১ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন ডলারের নজরদারি সরঞ্জাম কেনে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নজরদারি ব্যবস্থার এই বিস্তারের পেছনে রয়েছে আইনি দুর্বলতা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০১; টেলিগ্রাফ আইন, ১৮৮৫ এবং ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইন, ১৯৩৩-এর মতো পুরোনো আইনগুলো এমনভাবে ব্যবহার করা হয়, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে ব্যাপক নজরদারির ক্ষমতা দেয়।

এই নজরদারি কার্যক্রমে কোনো সংসদীয় তদারকি, বিচারিক সম্পৃক্ততা বা জবাবদিহির ব্যবস্থা নেই। ফলে রাষ্ট্রীয় নজরদারি ব্যবস্থা জনগণের সুরক্ষার পরিবর্তে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এবং ভিন্নমত দমনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে নজরদারি প্রযুক্তির ক্রয় নাটকীয়ভাবে বেড়েছিল, যা ইঙ্গিত দেয় যে এই প্রযুক্তিগুলো রাজনৈতিক ও নাগরিক আন্দোলন দমনে ব্যবহৃত হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতেও র‌্যাবকে জনসমাবেশ ও বিক্ষোভে ব্যবহারের জন্য মোবাইল ইন্টারসেপশন ডিভাইস কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

পদ্ধতিগত এসব সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিবেদনে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। যদি এ ধরনের সংস্কার না করা হয়, তবে দেশটিতে ডিজিটাল স্বৈরাচারী শাসনের মডেল আরও শক্তিশালী হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যেখানে নজরদারি জনগণের স্বার্থ বা নিরাপত্তার বদলে রাজনৈতিক ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে।
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!