বাংলাদেশের কৃষি মৌসুমি প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। শ্রাবণ মাস তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। বর্ষাকালের মাঝামাঝি এসে জমি থাকে ভিজে, সেচের ওপর চাপ কম থাকে এবং নদী-খাল-বিলের পানিও পর্যাপ্ত থাকে। তবে শ্রাবণের শেষ প্রান্তে এসে আবহাওয়া ধীরে ধীরে বদলে যায়। কখনো অতিবৃষ্টি, আবার কখনো অনাবৃষ্টি দেখা দিতে পারে। তাই এ সময় কৃষকদের সচেতনভাবে পরিকল্পনা করে কাজ করতে হয়, যাতে আগাম মৌসুমে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বাংলাদেশের কৃষি চক্রে শ্রাবণ একটি মৌসুমি সংযোগকাল। এই সময়ে সচেতনভাবে কৃষি কাজ পরিকল্পনা করলে এবং আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পদক্ষেপ নিলে ফসলের ভালো ফলন নিশ্চিত হয়।
জমি পরীক্ষা
বর্ষার বন্যা বা বৃষ্টিতে জমিতে প্লাস্টিক, কাদা বা আবর্জনা জমে থাকতে পারে। তাই জমিতে ফসল রোপণের আগে এসব সরিয়ে জমিকে পরিষ্কার করতে হবে। সুযোগ থাকলে মাটির পিএইচ ও পুষ্টি উপাদান পরীক্ষা করিয়ে সারের পরিমাণ নির্ধারণ করলে ফসল ভালো হয় এবং অযথা সার খরচও কমে।
বীজ নির্বাচন ও প্রস্তুতি
ভালো ফলনের মূল চাবিকাঠি হলো উন্নত মানের
বীজ। উচ্চ ফলনশীল, রোগমুক্ত ও মানসম্মত বীজ ব্যবহার করলে ফলনের মান ও পরিমাণ দুটোই বাড়ে। এ সময় বীজ ভিজিয়ে বা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অঙ্কুরোদ্গমের প্রস্তুতি নিতে হবে। এতে রোপণের পর চারা দ্রুত বেড়ে ওঠে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
রোপণের প্রস্তুতি
শ্রাবণের শেষ ভাগে অনেক এলাকায় বোরো ধানসহ অন্যান্য মৌসুমি ফসলের জন্য জমি প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়। জমি নরম করে চাষ দিয়ে তাতে গোবর বা অন্যান্য জৈব সার মেশানো দরকার হয়। এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তী সময়ে ফসল ভালো হয়। এ সময় বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, টমেটো, বেগুন ইত্যাদি রবি সবজির বীজতলা তৈরি ও বীজ বপন করা যেতে পারে। ধানের ভালো ফলনের জন্য জমি সমতল রাখা জরুরি, যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে এবং সেচের পানি সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে অতিবৃষ্টির সময় জমি ডুবে না যায়।
সেচ ব্যবস্থার প্রস্তুতি
শ্রাবণের শেষের দিকে বৃষ্টি কমে গেলে জমিতে সেচের প্রয়োজন দেখা দেয়। তাই আগেই পাম্প, নলকূপ বা গভীর নলকূপ পরীক্ষা করে প্রস্তুত রাখা জরুরি।
সেচের সঠিক ব্যবস্থাপনা শুধু বোরো ধান নয়,শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসলের জন্যও অপরিহার্য। জমিতে সেচের সময় সঠিকভাবে নির্ধারণ করলে পানি অপচয় কম হয় এবং ফসল ভালো থাকে।
সেচের পরিকল্পনায় ফসলের ধরন, জমির আকার ও পানির উৎস বিবেচনা করতে হবে।
পোকামাকড় ও রোগ প্রতিরোধ
মৌসুম পরিবর্তনের সময় ধানসহ বিভিন্ন ফসলে পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ বেশি হয়। ধানের পাতামোড়ানো পোকা, গলমাছি, ব্লাস্ট রোগ ইত্যাদি এ সময় সাধারণ সমস্যা। তাই নিয়মিত জমি পরিদর্শন করে সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। প্রয়োজনে কৃষি অফিসারের পরামর্শ নিয়ে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
পরবর্তী ফসলের পরিকল্পনা
শুধু ধান নয়, শ্রাবণের শেষে কৃষকরা শাক-সবজি, ডাল ও অন্যান্য ফসলের পরিকল্পনাও করতে পারেন। এজন্য আগে থেকেই বীজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করলে সুবিধা হয়। এতে করে বাজারে বীজের দাম বাড়ার ঝুঁকি কমে এবং মৌসুমে সময় নষ্ট হয় না।
পশুপালনে যত্ন
শ্রাবণের শেষ দিক শুধু ফসল নয়, পশুপালনের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় গরু-ছাগলের জন্য পর্যাপ্ত ঘাস ও খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। বর্ষায় অনেক জলাশয় নোংরা হয়ে পড়ে, যা পশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই জলাশয় পরিষ্কার ও পোকামাকড়মুক্ত রাখা দরকার। সুস্থ পশু কৃষকের আর্থিক নিরাপত্তা বাড়ায়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন