শুধু জ¦ালানি তেল কিনতেই গত বছর ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম-ঢাকা পাইপলাইনের উদ্বোধানী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান তিনি। এ সময় উপদেষ্টা বলেন, এই পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় সড়ক ও নৌপথে অনেক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে, পরিবেশদূষণ কমাবে, সময়ও বাঁচবে। আগে যেখানে ট্যাংকারে নারায়ণগঞ্জে জ¦ালানি পরিবহন করতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেখানে মাত্র ১২ ঘণ্টা লাগবে। তবে এ পাইপলাইনের নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। বলেন, পুরো পাইপলাইন অপারেশনে পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানিকে দায়িত্ব নিতে হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম-ঢাকা জ¦ালানি তেল সরবরাহের পাইপলাইন প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সচিব আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ মেজর জেনারেল মু. হাসান-উজ-জামান।
জ¦ালানি উপদেষ্টা বলেন, আগে যে প্রক্রিয়ায় জ¦ালানি তেল আমদানি করা হতো, তা কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। নানান সীমাবদ্ধতার কারণে তাতে চার-পাঁচজন বিট করতে পারত। পরে জ¦ালানি আমদানির ক্ষেত্রে আমরা কয়েকটি স্পেসিফিকেশন তুলে নিয়েছি। এতে করে এখন ১০-১২ জন বিট করতে পারছে। এর সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। গত এক বছরে জ¦ালানি তেল কেনার ক্ষেত্রে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। বিগত এক বছরে আমাদের বিভিন্ন প্রকল্পে ৪৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার অনন্য অবদান ঢাকা-চট্টগ্রাম পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন প্রজেক্ট। মানবসম্পদ ছাড়া আমাদের উল্লেখযোগ্য প্রাকৃতিক সম্পদ নেই। আমাদের সম্পদও অনেক কম। দুর্নীতি ও অবচয়ের কারণে তারও সঠিক ব্যবস্থাপনা করা যাচ্ছে না। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা সাধন করা গেলে আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পে অবচয় ও দুর্নীতি কমাতে হবে। তবে এর আগে আমরা চাইছি অবচয় কীভাবে কমানো যায়।
প্রকল্পব্যয় আমাদের উন্নয়নকাজের বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশী দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায়ও আমাদের প্রকল্প ব্যয় বেশি। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক বিলম্ব হয়। যত বেশি বিলম্ব হয়, তত প্রকল্প ব্যয় বাড়ে। ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পও তিনবার রিভিশন হয়েছে। অনেক প্রকল্প আছে ১৭-১৮ বছরও হয়েছে, কিন্তু শেষ করা যাচ্ছে না। সেগুলো আমাদের আর টেনে নেওয়া সম্ভব না।’
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি পর্যালোচনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে বিদেশি অর্থায়নে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, তার বেশির ভাগের স্থানীয় ভ্যালু এডিশন নেই। এটা সামনে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে স্থানীয় ভ্যালু এডিশন বাড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকৌশলীরা তাদের যথাযথ দক্ষতা দেখাতে পারেন না। এটা আমাদের ভাবতে হবে। আর কতকাল চায়না কোম্পানি আমাদের প্রকল্প করে দেবে, ভারতীয় কোম্পানি আমাদের প্রকল্প করে দেবে? পেশার সাথে যায় না এমন অনেক কাজও প্রকৌশলীরা করছে।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ পাইপলাইন প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ায় সড়ক ও নৌপথে অনেক দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে, পরিবেশদূষণ কমাবে, সময়ও বাঁচবে। আগে যেখানে ট্যাংকারে নারায়ণগঞ্জে জ¦ালানি পরিবহন করতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগত, এখন সেখানে মাত্র ১২ ঘণ্টা লাগবে। তবে এ পাইপলাইনের নিরাপত্তায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন। বলেন, পুরো পাইপলাইন অপারেশনে পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানিকে দায়িত্ব নিতে হবে।
৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম পেট্রোলিয়াম জ¦ালানি পাইপলাইন প্রকল্পটি নির্মাণ করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ও ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত আড়াইশ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন