ঢাকা বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫

৭১ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে  বাড়তি বরাদ্দের দাবি

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২৫, ০৭:১৬ এএম
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

দেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশ ঘটছে অসংক্রামক রোগে (এনসিডি) আক্রান্ত হয়ে, যার মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ প্রধান কারণ। জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়ানো এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যয় করার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে ‘বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: অগ্রগতি, বাধা এবং করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে এ দাবি জানানো হয়। প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজন করে কর্মশালার, সহযোগিতা করে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)। এতে প্রিন্ট, টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমের ২৬ জন সাংবাদিক অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সম্প্রতি অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে সরকারের ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে একটি ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা প্রশংসিত হয়েছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। তারা বলেন, উচ্চ রক্তচাপ মোকাবিলায় দেশের প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা জরুরি আর এা জন্য টেকসই অর্থায়ন অত্যাবশ্যক।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, সারা দেশে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপারেশনাল প্ল্যান কার্যকর না থাকায় সাময়িক কিছু অসুবিধা হলেও খুব শিগগির উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধের ধারাবাহিক সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে রোগীরা প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা পাবেন, যা হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ উচ্চ রক্তচাপ সম্পর্কিত জটিলতা কমাতে সহায়ক হবে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হলেও তা যথেষ্ট নয়। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে বাড়তি বাজেট বরাদ্দ এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ মোকাবিলায় প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ নিশ্চিত করতে বাজেট থেকে আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে।

এ সময় বক্তারা আরও জানান, অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় এখনো বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে সচেতনতার অভাব, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পাওয়া। এর জন্য জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালী করতে হবে। বক্তারা মনে করেন, দেশের জনস্বাস্থ্য রক্ষায় উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এখন জাতীয় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। টেকসই অর্থায়ন, সরকারি আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় এবং ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ উচ্চ রক্তচাপ ও অন্যান্য অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় কার্যকর অগ্রগতি অর্জন করতে পারবে।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পটলাইটনিউজ২৪-এর সম্পাদক মোর্শেদ নোমান, জিএইচএআইয়ের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর (এনসিডি) এজিনে এজেকোয়েম, অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্সÑ আত্মার কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের।

এ ছাড়া প্রজ্ঞার পরিচালক মো. শাহেদুল আলম ও কো-অর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা দেন। তারা বলেন, উচ্চ রক্তচাপ শনাক্তকরণ, নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং সহজলভ্য ওষুধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা গেলে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব।