ঢাকা বুধবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৫

শিল্পী সমাজে স্বস্তি

বরিশালে শিল্পকলার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলি

বরিশাল ব্যুরো
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২৫, ১২:২৪ এএম

বরিশাল শিল্পকলা একাডেমির বিতর্কিত কালচারাল অফিসার অসিত বরণ দাস গুপ্তকে আকস্মিক বদলি করা হয়েছে। গত সোমবার রাতে তার কুড়িগ্রামে বদলিসংক্রান্ত একটি খবর ছড়িয়ে পড়লে শিল্পী সমাজের মধ্যে স্বস্তি লক্ষ্য করা যায়। এই কর্মকর্তার বদলি নিয়ে শিল্পী সমাজের ব্যক্তি-বিশেষকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে দেখা গেছে।

স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের দোসর অসিত বরণের বিরুদ্ধে কর্মস্থল বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম-দুর্নীতির খবর পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তন হলে এই কর্মকর্তা বরিশাল শিল্পকলা একাডেমিতে যোগদান করার পরপরই বিভিন্ন সমালোচিত কাজের মাধ্যমে নিজেকে বিতর্কের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যান। সম্ভবত বিতর্কিত কর্মকা-ের মধ্যে বরিশালে তার প্রথম পদক্ষেপ ছিল গত ৩০ জুন জেলা সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ বন্ধের ঘোষণা দেওয়া। এতে শিল্পকলা একাডেমিতে দায়িত্বরত প্রশিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হন।

উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কালচারাল কর্মকর্তা হাসানুর রশীদ শিল্পকলায় নিযুক্ত ১২ জন প্রশিক্ষকের ২০২৪-২৫ সালের চুক্তিনামা নবায়ন করে যেতে পারেননি। তবে প্রশিক্ষকরা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন এবং নবায়নের জন্য কয়েক দফায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে যান। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সুরাহা হয়নি। তাদের অভিযোগ, অসিত বরণ দাস গুপ্ত প্রশিক্ষক নিয়োগ নিয়েও দুর্নীতি করছেন।

অসিত বরণ দাস গুপ্তের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করে লিখিত অভিযোগপত্র দেওয়াও হয়েছিল। গত ১ জুলাই বরিশালের গণমাধ্যমকর্মী মুহম্মদ ইমন খন্দকার হৃদয় অভিযোগপত্রটি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক ওয়ারেছ হোসেন, বরিশালের জেলা প্রশাসক ও শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এবং দুদকের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এইচএম আক্তারুজ্জামানের বরাবর পেশ করেন।

অভিযোগপত্রে মুহম্মদ ইমন খন্দকার উল্লেখ করেন, অসিত বরণ দাস গুপ্ত ২০১৩ সালে কালচারাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে সিলেট, হবিগঞ্জ ও বর্তমানে বরিশালে দায়িত্ব পালনকালে নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৬ সালে সিলেটে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মীরা স্মারকলিপি দেন। ২০২৪ সালে সিলেটে তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়। ২০২৫ সালে তাকে বরিশালে বদলি করা হয়। বরিশালে যোগদানের পর থেকেই সরকারি রেস্ট হাউসে পরিবারসহ মাসের পর মাস অবৈধভাবে বসবাস করে প্রায় ৫ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। একই সঙ্গে হলরুম ভাড়ার টাকা গোপন রেখে তা ব্যক্তিগতভাবে এবং স্থানীয় ও সাধারণ ফান্ডের ২৯ লাখ টাকার একটি বড় অংশ তুলে আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়া জনসাধারণের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে পুরো প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন।

এই অভিযোগটি তদন্তে বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) উপমা ফারিসাকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৮ আগস্ট তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করেন।

শিল্পকলার একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন তুলে ধরার পরপরই তাকে বরিশাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে তার এই বদলিকে এক ধরনের শাস্তিমূলকও বলা যায়।

সূত্রটি জানিয়েছে, সোমবার এক আদেশে সারা দেশের অন্তত ১৯ জেলার কালচারাল অফিসারকে বদলি করে শিল্পকলা এডাডেমি। আদেশে বলা হয় স্ব-স্ব কর্মকর্তারা আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করবেন। যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে ওইদিনই কর্মস্থল থেকে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন। তবে বদলির বিষয়টি সম্পর্কে জানতে অসিত বরণকে ফোন করা হলে তিনি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বরং সংবাদ করার আগে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরামর্শ দেন।

কালচারাল কর্মকর্তার বদলির আদেশটি সঠিক বলে বরিশাল জেলা প্রশাসনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করে জানিয়েছে, অসিত বরণকে কুড়িগ্রামে পাঠানোর পাশাপাশি বরিশালে নতুন কালচারাল কর্মকর্তা হিসেবে পটুয়াখালীর তানবীর রহমানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বরিশালের শিল্পীসমাজ অসিত বরণের বদলির খবরে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। একাধিক ব্যক্তি জানান, স্বৈরাচারের দোসর অসিত বরণ বরিশালে যোগদান করে শিল্পকলাকে নিজের সম্পত্তি মনে করেছিলেন। বিএনপি ঘরনার ২-৩ জন রাজনীতিকের সাথে সম্পর্ক রাখতে বা তাদের খুশি করতে গিয়ে তিনি একাধিক বিতর্কিত কর্মকা- করেছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিল ভাউচার করে শিল্পীদের অর্থ আত্মসাৎ করার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।