* দাবি পূরণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে এবার জোরালো আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) অস্থায়ী শতাধিক কর্মচারী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাদের চাকরি স্থায়ীকরণে দীর্ঘদিন ধরে আশ^াস দিয়ে এলেও তা বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি, বরং সিটি প্রশাসন তাদের এক পাশে রেখে নতুন করে কর্মী নিয়োগে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে, যা আন্দোলনরতদের সংক্ষুব্ধ করে তোলে। এই ক্ষুব্ধ অংশ গতকাল বুধবার বরিশাল নগর ভবনের সম্মুখে অংশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিশ্রুতি পূরণে সিটি প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, গত দুই যুগে বিভিন্ন সময়ে ১২১ কর্মচারীকে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলেও তাদের স্থায়ী করেনি বরিশাল সিটি করপোরেশন। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে উল্লেখিত কর্মচারীরা চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে এক সপ্তাহ আগে আন্দোলন শুরু করেন।
জানা গেছে, কর্মচারীদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পানি সরবরাহ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আরাফাত হোসেন মনির, সহকারী পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মাহবুব আলম মিন্টু, ট্রেড লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আনিচুর রহমান,যানবাহন লাইসেন্স পরিদর্শক মো. আতিকুর রহমান মানিকসহ বিসিসির বিভিন্ন শাখার নেতারা।
তাদের অভিযোগ, চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে সপ্তাহ দুয়েক আগে কর্মচারীরা অন্দোলনের পরিস্থতি তৈরি করলে করপোরেশনে অচলাবস্থা দেখা দেয়। তখন পরিস্থিতি বেগতিক দেখে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে সুরাহার আশ^াস দিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরে সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলেও ইস্যুটি নিয়ে বিসিসি কর্তৃপক্ষ নিজেদের মধ্যকার আলোচনা পর্যন্ত করেনি। কর্মকর্তাদের এমন বিরূপ আচরণে কর্মচারীরা সংক্ষুব্ধ হয়ে ফের আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
করপোরেশনের একটি সূত্র বলছে, পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্তদের স্থায়ী না করে নতুন কর্মী নিয়োগ দিতে প্রশাসনের তোড়জোড়ের বিষয়টি বেশি মাত্রায় সংক্ষুব্ধ করেছে কর্মচারীদের। সম্ভবত এ কারণে তারা বুধবার অপরাহ্নে করপোরেশনের সামনে বিক্ষোভ করে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়েছেন।
এই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের একজন বরিশাল সিটি করপোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী আরাফাত হোসেন মনির। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে জানান, দুই সপ্তাহ আগে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ১২১ কর্মচারী। এতে বিসিসির কাজ গতিহীন হয়ে পড়লে নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। তখন নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারীসহ কর্মকর্তারা তাদের সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন। এর পরে সপ্তাহখানেক পেরিয়ে গেলেও সিটি প্রশাসন তাদের সমস্যার সমাধান দূরে থাক, বিষয়টি নিয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি।
সিটি প্রশাসনের এই উদাসীনতা আন্দোলনরত কর্মচারীদের আরও বেশি মাত্রায় বিক্ষুব্ধ করেছে বলে অভিযোগ করেন পানি সরবরাহ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আরাফাত হোসেন মনির। এই কর্মকর্তা সিটি প্রশাসনকে দোষারোপ করাসহ অবৈধ নিয়োগ বন্ধ এবং অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে অস্থায়ী ১২১ কর্মচারীকে নিয়ে আগামী রোববার থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। তিনি রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, সিটি প্রশাসনের আশ^াসে তারা একবার আন্দোলন স্থগিত করেছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা পাননি। ফলে বাধ্য হয়ে কর্মচারীরা ফের আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছেন। বৃহস্পতিবারের (আজ) মধ্যে তাদের স্থায়ীকরণসহ অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে প্রশাসন ভূমিকা না রাখলে রোববার অফিস খোলার দিন থেকে কর্মবিরতি পালন করবেন সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকেরা।
অস্থায়ী শ্রমিকদের এই আন্দোলন এবং রোববার থেকে কর্মবিরতিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারির বিষয়ে জানতে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল বারীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন