টানা কয়েক বছর ধরেই ধান ও চাল সংগ্রহে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ কক্সবাজার জেলা খাদ্য বিভাগ। এবার পরিস্থিতি আরও কঠিন। স্থানীয় বাজারে ধানের দাম সরকারি দামের চেয়ে বেশি আর গুদামের ঝামেলা যেন কৃষকের অনীহাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে জেলা খাদ্য বিভাগের সংগ্রহের লক্ষ্য এবার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হয়েছে।
জানা গেছে, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জেলার ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ১৪ হাজার ৫৬৬ মেট্রিক টন। এবার নতুন অর্থবছরে সেই লক্ষ্য কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮ হাজার ২৪৯ মেট্রিক টনে। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় ৬ হাজার ৩১৭ মেট্রিক টন কম। খাদ্য বিভাগ বলছে, উৎপাদন কমে যাওয়া এবং বাজারের অস্থিরতার কারণে কেন্দ্রীয়ভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাজারে এখন ধানের দাম সরকারি দরের চেয়ে বাড়তি। প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৩৭ থেকে ৪০ টাকায়। সেক্ষেত্রে সরকারি গুদামে ৩৪ টাকায় বিক্রি করতে অনেকেই রাজি নন। আতপ ও সিদ্ধ চালেও একই ব্যবধান। ফলে কৃষকের স্বাভাবিক প্রবণতা হলো সরাসরি বাজারেই ধান বিক্রি।
কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ধান বিক্রি করে ৩৮-৩৯ টাকা পান। গুদামে দিলে কম দাম, আবার অনেক কাগজপত্র লাগে, তাই তারা বাজারেই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
কৃষকেরা আরও জানান, সরকারি গুদামে ধান দিতে গেলে নানা যাচাই-বাছাই, ওজন জটিলতা এবং অপেক্ষার কারণে অনেক সময় নষ্ট হয়। তারা বাড়িতে বা সরাসরি বাজারে বিক্রিকে সহজ মনে করেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকার ধান উৎপাদন কম হওয়ায় টার্গেট কমিয়েছে। দেশীয় উৎপাদন ও বাজারদর বিবেচনায় অনেক চাল বিদেশ থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সিন্ডিকেটের চাপও কিছুটা কমবে।
চলতি মৌসুমে জেলায় সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা ৭৩৬ টন ধান এবং ৭ হাজার ৫০০ টনের মতো চাল। অথচ শুরুতে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৩ টন। ৭৮টি মিলের মধ্যে ৫৪টি মিল সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেÑ যারা ৩ হাজার ৫৩৫ মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করবে। চুক্তির সময়সীমা ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
মিল মালিকরা জানান, বাজারে চালের দাম বেশি। তারা সরকারের সঙ্গে চুক্তি করলেও বাজারের সঙ্গে তাল মিলাতে চাপ থাকে। তারপরও সরকারি টার্গেট অনুযায়ী চাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান মিলাররা।
কক্সবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে জেলার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৮ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমি। ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকেরা। মাড়াই-শুকানোর পর ধান বাজারে তোলার প্রস্তুতি চলছে। তাই ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই ধান-চাল সংগ্রহের ‘মূল সময়’ বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. আবু কাউছার জানান, উৎপাদন কম হওয়ায় সংগ্রহ শতভাগ হয় না। কৃষকেরা গুদামে ধান দিতে অনীহা দেখান। তবে এবার টার্গেট তুলনামূলক কম। এ কারণে আমরা আশাবাদী যে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।
দেশের মোট চাহিদা পূরণে সরকার আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করছে ৩ লাখ টন ধান এবং সাড়ে ১৪ লাখ টন সিদ্ধ চাল। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাপ কমবে বলে আশা নীতিনির্ধারকদের।
কক্সবাজারে ধান-চাল সংগ্রহ কতটা এগোবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করছে বাজারদর ও কৃষকের আগ্রহের ওপর। লক্ষ্যমাত্রা কমেছে ঠিকই, কিন্তু শতভাগ সংগ্রহ এবার আদৌ সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ের পাশাপাশি রয়েছে আশাও।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন