ভাবা যায়? পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী দেশ আমেরিকার নামেই তৈরি হয়েছে একটি টয়লেট, তাও আবার ১০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের। সম্পূর্ণ খাঁটি সোনা দিয়ে তৈরি এই টয়লেট এখন নিলামে উঠছে বিশ্বের সবচেয়ে দামি টয়লেট হিসেবে। এটি কোনো কল্পনা নয়, বরং ইতালীয় শিল্পী মাউরিজিও ক্যাটেলানের বাস্তব শিল্পকর্ম, যার নামই ‘আমেরিকা’। এই ভাস্কর্যটি বানাতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০১.২ কিলোগ্রাম সোনা। বাজারমূল্যে যার দাম প্রায় ১২২ কোটি টাকা। সদবিস নিলামঘর এটি ১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে বিক্রির জন্য তুলছে।
শিল্পকর্ম হিসেবে এটি যতটা মূল্যবান, তার চেয়েও বেশি মূল্য রয়েছে এর ভাবনা, ব্যঙ্গ ও সাংস্কৃতিক অর্থে। ক্যাটেলান তার ব্যঙ্গাত্মক ও বিতর্কিত শিল্পের জন্য বিশ্বজোড়া পরিচিত। তার মতে, এ টয়লেট আসলে অতিরিক্ত বিলাসিতা ও বৈষম্যের ওপর সরাসরি আঘাত। এ বিষয়ে তার মন্তব্য, ‘তুমি ২০০ ডলারের লাঞ্চ খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষমেশ সবার গন্তব্য এক জায়গা।’ এই এক বাক্যেই তিনি মানব সভ্যতার অহংকারকে ভেঙে দিয়েছেন। ২০১৯ সালে তার শিল্পকর্ম ‘কমেডিয়ান’ দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো একটি সাধারণ কলা, ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। আরেকটি ভাস্কর্য ‘নতজানু হিটলার’, যেখানে হিটলারকে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করতে দেখা যায়, বিক্রি হয়েছিল ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারে। ‘আমেরিকা’ টয়লেটের দুইটি সংস্করণ তৈরি করা হয়েছিল ২০১৬ সালে। যার একটি এবার নিলামে উঠছে। অন্যটি ছিল নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের বাথরুমে।
সেখানে দর্শকদের প্রকৃত ব্যবহার করার সুযোগও দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ১ লাখ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে সোনার টয়লেটের অভিজ্ঞতা নিয়েছিলেন। সে সময় গুগেনহাইম জাদুঘর টয়লেটটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধার দেওয়ার প্রস্তাব করে, যখন তিনি জাদুঘর থেকে একটি ভ্যান গঘ চিত্রকর্ম চাইছিলেন। শিল্পকর্মটির নাম ছিল ‘আমেরিকা’, আর সেটি পাঠানোর প্রস্তাব ব্যঙ্গটুকু কেউই মিস করেনি। ২০১৯ সালে টয়লেটটির আরেকটি সংস্করণ প্রদর্শিত হয় যুক্তরাজ্যের ঐতিহাসিক ব্লেনহাইম প্রাসাদে। কিন্তু প্রদর্শনীর কয়েক দিনের মধ্যে একদল চোর প্রাসাদে ঢুকে পাইপলাইন খুলে পুরো টয়লেট চুরি করে নিয়ে যায়। আজ পর্যন্ত সেই টয়লেট উদ্ধার হয়নি।
তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, সেটি ভেঙে সোনা গলিয়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। চুরির ঘটনায় দুই ব্যক্তিকে পরে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদ- দেওয়া হয়। তবুও টয়লেটটির নিখোঁজ হওয়া এখনো রহস্য। এখন যে সংস্করণটি নিলামে উঠছে, সেটি প্রদর্শিত হচ্ছে সদবিসের নতুন নিউইয়র্ক কার্যালয় ব্রয়্যার বিল্ডিংয়ে। দর্শকরা এটি কাছ থেকে দেখতে পারবেন, কিন্তু ব্যবহার করতে পারবেন না। আর সেটাও যেন শিল্পীর কৌশল, শুধু দেখার বিলাসিতা, ভোগের নয়। সদবিসের শিল্প বিভাগের পরিচালক ডেভিড গ্যালপারিন বলেন ‘ক্যাটেলানের ‘কমেডিয়ান’ ছিল অমূল্য ধারণাকে মূল্যবান বানানোর শিল্প। ‘আমেরিকা’ তার উল্টো, এখানে উপকরণই এত মূল্যবান যে ধারণা যেন তারও উপর যায়।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন