সোমবার, ০২ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৪:০১ পিএম

ই-কমার্স খাতের জন্য বাজেট প্রস্তাবনা এবং প্রত্যাশা

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা

প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২৫, ০৪:০১ পিএম

কিনলে ডট কম এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)।   ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

কিনলে ডট কম এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)।  ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

ই-কমার্স বাংলাদেশের উদীয়মান খাত হলেও প্রতি অর্থবছরের বাজেটে এই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রত্যাশা পূরণের হার খুবই সামান্য। ই-কমার্স খাতের উদ্যোক্তারা দীর্ঘদিন রাজস্ব বোর্ড এবং সরকারের কাছে দাবিদাওয়া উপস্থাপন করলেও, সেগুলোর বেশিরভাগই রাখা হয়নি।

তবে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস নেতৃত্বাধীন স্বাধীন বাংলাদেশ ২.০ এর এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি নতুশ আশায় বুক বেঁধেছি। আমাদের প্রত্যাশা যে এবার অন্তত ই-কমার্স খাত সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশার সিংহভাগ পূরণ হবে। এই খাতের অধিকতর অগ্রসরের প্রত্যাশায় ই-কমার্স উদ্যোক্তা হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে ১০টি প্রস্তাবনা পেশ করছি।

১. ই-কমার্সকে ‘আইটি এনাবলড সার্ভিস’ (আইটিইএস) হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণ

অর্থ আইন, ২০১৬ অনুযায়ী ‘ই-কমার্স ও অনলাইন শপিং’কে আইটিইএস থেকে বাদ দেওয়ায় এর আয় করযোগ্য হিসেবে গণ্য হচ্ছে। তবে আইটিইএস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে, ই-কমার্স একটি নতুন ব্যবসায়িক খাত হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ প্রক্রিয়াকে আরও বেগবান করবে।

২. ট্রেড লাইসেন্সে ই-কমার্স ক্যাটাগরি ও ন্যূনতম ফি

ই-কমার্স একটি ব্যবসায়িক খাত হিসেবে স্বীকৃত হলেও স্থানীয় সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্সে ‘ই-কমার্স’ ক্যাটাগরি হিসেবে উল্লেখ থাকে না, যা উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি করে। পৃথক তথ্যপ্রযুক্তিখাত ভিত্তিক ‘ই-কমার্স’ সেবাখাত হিসেবে অন্তর্ভুক্তির পরিপত্র জারি এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি ন্যূনতম ধার্য করার প্রস্তাব করছি। ট্রেড লাইসেন্সে ই-কমার্স ক্যাটাগরি উল্লেখ থাকলে উদ্যোক্তারা নিজেদের দেশে-বিদেশে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন এবং এটি তরুণ, নারী ও গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের আত্মকর্মসংস্থানে উদ্বুদ্ধ করবে।

৩. ই-কমার্স ভিত্তিক ডেলিভারি চার্জের ভ্যাট কমানো

ই-কমার্স ভিত্তিক ডেলিভারি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ডেলিভারি চার্জের ওপর ১৫% মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রযোজ্য, যা লাভজনকতার জন্য একটি বড় চাপ। প্রতিষ্ঠান যদি নিজের পণ্য নিজে ডেলিভারি করে তাহলে ভ্যাট না রাখা এবং তৃতীয় পক্ষের ডেলিভারির ক্ষেত্রে ৫% মূসক প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি ডেলিভারি সেবা খাতে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে, সরকারের মূসক রাজস্ব আদায়ে নির্ভরযোগ্য উৎস তৈরি করবে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে শৃঙ্খলা আনবে।

৪. অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিজ্ঞাপন আয়ে ভ্যাট হ্রাস

অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর বিজ্ঞাপন আয়ে ১৫% মূসক ধরা হয়, যা দেশীয় প্ল্যাটফর্মগুলোর তুলনায় বিদেশি প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন খরচ কমিয়ে দেয়। এই ভ্যাট হার ১৫% এর বদলে ৫% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বিদেশে টাকা যাওয়ার পরিমাণ কমবে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো থেকে সরকারের মূসক আয় বৃদ্ধি পাবে এবং ডিজিটাল অর্থনীতির কর পরিবেশ আরও সুশৃঙ্খল হবে। 

৫. ন্যূনতম করের বিধান যৌক্তিকীকরণ

যেসব ই-কমার্স কোম্পানি এখনো লাভের মুখ দেখেনি, তাদের ক্ষেত্রে মোট আয়ের ০.৬% ন্যূনতম কর ধার্য করা হয়, যা তাদের জন্য বোঝা। লোকসানে থাকা ই-কমার্স কোম্পানিগুলোর জন্য ন্যূনতম কর ০.১% করা প্রস্তাব করছি। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা স্বস্তি পাবে, নতুন বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে সরকার আরও বেশি করদাতা তৈরি করতে পারবে।

৬. দেশীয় ই-কমার্স খাতের সুরক্ষা

ডিজিটাল প্রচারণার খরচ দেশীয় ও অনুমোদিত মাধ্যম দ্বারা পরিশোধ এবং ডাটা সেন্টার দেশেই স্থাপনের ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকায় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা বাইরে চলে যাচ্ছে। ডিজিটাল প্রচারণার খরচ দেশীয় মাধ্যমে পরিশোধ এবং ডাটা সেন্টার দেশেই স্থাপনের বাধ্যবাধকতা করা জরুরি। এতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ই-কমার্সগুলো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উঠে আসতে পারবে, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি কমবে এবং দেশীয় মুদ্রা খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

৭. ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স সুবিধা ও প্রণোদনা

বন্দরে ওয়্যারহাউজ সুবিধা চালু করা এবং দেশীয় পণ্য অনলাইনে বিদেশে বিক্রির ক্ষেত্রে ক্যাশ ইনসেনটিভ (রেমিটেন্সের মতো) প্রদান করা যেতে পারে। ডাক বিভাগের মাধ্যমে বিদেশে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে শিপিং চার্জে ৫০% ছাড় দেওয়াও যেতে পারে। ফলে ই-কমার্স ব্যবসায়ের প্রসার বাড়বে, দেশীয় পণ্যের বাজার বিভিন্ন দেশে প্রসারিত হবে এবং রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

৮. স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কার্ড পেমেন্ট সরলীকরণ

স্থানীয় ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড থেকে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে কার্ডধারীদের বিশেষ কোনো সুবিধা নেই এবং বিদেশী ক্রেতাদের অনলাইনে পে করার সময় পাসপোর্টের কপি দিতে হয়। ডিজিটাল লেনদেন উৎসাহিত করতে স্থানীয় কার্ড থেকে পেমেন্টের সুবিধা বৃদ্ধি এবং বিদেশী ক্রেতাদের জন্য পাসপোর্ট কপি প্রদানের নিয়ম রহিত করার প্রস্তাব করছি। ফলে ই-কমার্স লেনদেন বৃদ্ধি পাবে, ক্যাশলেস সোসাইটি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে বড় ধরনের বাধা দূর হবে।

৯. অফিস ভাড়ার মূসক অব্যাহতি

‘অনলাইন পণ্য বিক্রয়’ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা হলেও অফিস ভাড়ার ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি সম্পর্কিত সুস্পষ্ট এসআরও নেই। অনলাইন পণ্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে অফিস এবং গোডাউন ভাড়ার ক্ষেত্রে মূসক অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করছি। এটা করা হলে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ব্যবসাকে বিকশিত করার সুযোগ পাবেন এবং সেবার মান উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে।

১০. প্রচারণামূলক ব্যয়ের অনুমোদনযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি

বিজ্ঞাপন ব্যতীত অন্যান্য প্রচারণামূলক ব্যয়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক টার্নওভারের ০.৫% অনুমোদনযোগ্য ব্যয় হিসেবে পরিগণিত হয়। তবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য এই হার কমপক্ষে ৫% করা প্রয়োজন। এটি ব্যবসায়িক পরিবেশে স্বস্তি আনবে, বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য, এবং ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়ক হবে ।

এ ছাড়াও, বাজেটে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বরাদ্দ, গ্রামীণ ই-কমার্স উন্নয়ন, স্থানীয় পর্যায়ে সেবার রপ্তানি আয়কে স্বীকৃতি প্রদান, স্থাপনা মালিকের আয়কর রিটার্ন সংক্রান্ত জটিলতা দূরীকরণ, উৎসে আয়কর কর্তনের দাখিলপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা বৃদ্ধি, বার্ষিক রিটার্ন দাখিলের জন্য বর্ধিত সময়, পারকুইজিট বাবদ প্রদত্ত অর্থের অনুমোদনযোগ্য পরিমাণ বৃদ্ধি, ব্যাংক ব্যতীত অন্য মাধ্যমে প্রদত্ত অর্থের সীমা বৃদ্ধি, এবং চাল ও ফলমূলকে প্রথম তফসিলের অন্তর্ভুক্ত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরও প্রস্তাব করছি। এই প্রস্তাবনাগুলো কার্যকর হলে বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত নতুন দিগন্তে উন্মোচিত হবে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও জোরালো ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

লেখক : মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা (সোহেল মৃধা)  
ই-কমার্স উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা-কিনলে ডট কম 
ইমেইল[email protected]

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!