শিশুর নিরাপত্তা ও সুস্থতা কামনা করেন প্রত্যেক মা-বাবা। শিশুর সুখের জন্য নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেন। অনেক সময় শিশুর ওপর এসবের প্রভাব এমনভাবে পড়ে যে শিশুকে আর সুস্থ করা যায় না। আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় বদনজরের মন্দ ক্রিয়া।
কারো বদনজর লেগে গেলে এ থেকে রক্ষায় আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত। এ বিষয়ে আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বদনজরের প্রভাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কেননা নজরের প্রভাব সত্য।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫০৮)।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের দুই প্রাণপ্রিয় নাতি হজরত হাসান-হুসাইনের জন্য নিরাপত্তার দোয়া করেছেন। এ ছাড়াও বদনজর থেকে বাঁচাতে নবীজি (সা.) ছোটদের কোলে নিয়ে দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন।
হাদিসের গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত এমন একটি দোয়া হলো-
উচ্চারণ : আউযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিওঁ ওয়া হা-ম্মাহ, ওয়ামিন কুল্লি আইনিল্লা-ম্মাহ্।
অর্থ : আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি আল্লাহর পরিপূর্ণ কথাসমূহের, সকল শয়তান থেকে, সকল ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও প্রাণী থেকে এবং সকল ক্ষতিকারক দৃষ্টি থেকে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩৭১)।
দোয়াটি এক সন্তানের জন্য পড়লে ‘উয়ীযুকা’, দুইজনের জন্য ‘উয়ীযুকুমা’ আর দুইয়ের অধিক হলে ‘উয়ীযুকুম’ বলতে হবে। এর সঙ্গে আয়াতুল কুরসি, তিন কুল ও হাদিসে বর্ণিত অন্যান্য দোয়া পড়া যেতে পারে।
সকালে ও সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে পুরো শরীরে বুলিয়ে দিন।
সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করুন:
বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামা-ই ওয়াহুয়াস সামীউল আলীম অর্থাৎ- আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে যার নামের সঙ্গে পৃথিবীর ও আকাশের কোনো জিনিস ক্ষতি সাধন করতে পারে না এবং তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা। (সুনান আবু দাউদ, সুনান তিরমিজি)।
কোনো কিছু দেখে ভালো লাগলে সুবাহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, মাশাআল্লাহ বলুন। তাহলে আপনার নজরের ক্ষতিকর প্রভাব ওই ব্যক্তি বা বস্তুর ওপর পড়বে না।
কেউ ইতোমধ্যে বদনজরের শিকার হয়ে গেলে নিচের দোয়াটি পড়ে ফুঁ দিতে হবে। যেটি ফেরেশতা জিব্রাইল আলাইহিস সালাম নবীজিকে অসুস্থতার সময় পড়ে ফুঁ দিয়েছিলেন।
‘বিসমিল্লাহি আরকিকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ু’যিকা, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন ও ওয়া হাসিদিন আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিকা।’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি; যেসব জিনিস আপনাকে কষ্ট দেয়, সেসব প্রাণের অনিষ্ট কিংবা হিংসুকের বদ নজর থেকে আল্লাহ আপনাকে শিফা দিন; আল্লাহর নামে আপনাকে ফুঁ দিচ্ছি। (মুসলিম: ৫৫১২)।
আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার কোনো রোগে আক্রান্ত হলেন। তখন ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) নবীজি (স.)-এর কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! আপনি কি অসুস্থতা বোধ করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন জিব্রাইল (আ.) দোয়াটি পড়ে নবীজিকে ফুঁ দিলেন। সুতরাং দোয়াটি পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারবার ফুঁ দিলে ধীরে ধীরে বদনজর কেটে যাবে ইনশাল্লাহ।
বদনজর আমলে নেওয়ার নজির কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে। আল্লাহর নবী ইয়াকুব আলাইহিস সাল্লাম তাঁর ছেলেদের একসঙ্গে মিসর শহরে না প্রবেশ করে আলাদা আলাদাভাবে প্রবেশ করতে বলেছিলেন; যেন তারা মানুষের হিংসা ও বদনজরের শিকার না হয়।