ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

সালমান এফ রহমান, শিবলী ও সায়ান পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত

রূপালী প্রতিবেদক
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০১:১১ এএম

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে সায়ান এফ রহমান ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতকে পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই সঙ্গে অনিয়মের ঘটনায় বেক্সিমকোর পরিচালক নাসিমা রহমান, কমিশনার ড. শামসুদ্দিন আহমেদ ও এ এম আহসান উল্লাহকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে বিএসইসি।

বিএসইসির ৯৬৫তম কমিশন সভায় গতকাল বুধবার এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিএসইসি এ সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি জানায়, বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে পুঁজিবাজারে বন্ড ইস্যুতে প্রতারণার অভিযোগে ১০০ কোটি টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। একইসঙ্গে তাকে পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। একই অনিয়মের কারণে সালমান এফ রহমানের ছেলে সায়ান এফ রহমানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা এবং পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতও পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষিত হয়েছেন। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ২০২৩ সালের ৪ জুন ১৫০০ কোটি অভিহিত মূল্যে এবং ১০০০ কোটি টাকা ইস্যু মূল্যে অনুমোদন দেয় তৎকালীন বিএসইসি। শ্রীপুর টাউনশিপ নামে একটি কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার পরই তারা বন্ড ইস্যুর আবেদন করে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৫০ কোটি এবং মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়নের জন্য উত্তোলন করা হয়। কমিশনের কাছে যা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি, জামিনদার ছিল। কিন্তু  ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে। সালমান এফ রহমান ওই সময় ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। আর সায়ান রহমান ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ‘বেক্সিমকো সিকিউরড কনভার্টিবল অর রিডিমেবল অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুক’ নামে ৩০০০ কোটি টাকা পাঁচ বছর মেয়াদি একটি বন্ড ২০২১ সালের ২৩ জুন অনুমোদন হয়। এ বন্ডের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ২০২১ সালের ১৭ জুলাই অনুমোদিত পাঁচশ কোটি টাকার সুকুকের মধ্যে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করে ৩২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বিএসইসি আরও জানায়, অনিয়মের ঘটনায় বেক্সিমকোর পরিচালক নাসিমা রহমান, কমিশনার ড. শামসুদ্দিন আহমেদ এবং এ এম আহসান উল্লাহকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক নাজমুস সাকিব, গোলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ ও সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক শুদ্ধাংশু শেখর বিশ্বাসকে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া রেটিং প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে (ইসিআরএল) ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সুকুকের গ্রিন ভ্যালিডেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইসিআরএল এবং নিরীক্ষক এমজে আবেদিন অ্যান্ড কো. চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ভূমিকাও তদন্ত করে দেখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও বিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ মিলেছে।

আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ডটির জামিনদার হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, অ্যাডভাইজর ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ট্রাস্টি হিসেবে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড (ইসিআরএল) ও নিরীক্ষক হিসেবে এম জে আমেদিন অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট দায়িত্ব পালন করেছে।