ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

আর্থিক অনুদান

রাবির সাবেক সমন্বয়কের চিঠি নিয়ে আলোচনার ঝড়

রাজশাহী ব্যুরো ও রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ০১:১১ এএম

‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব’ নামে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা চেয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেওয়ার ঘটনায় রাজশাহীজুড়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ৭৬ লাখ টাকা তোলার জন্য ৭০ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাবির সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের করা এই আবেদনে ‘জোরালো সুপারিশ’ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব। আবেদনের একটি অনুলিপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। আবেদনের অনুলিপি কেউ কেউ ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। 
এই ঘটনা প্রকাশের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের নানা আলোচনা-সমালোচনা করতে দেখা গেছে। তাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন সংবাদ মাধ্যমগুলো একটা ‘প্রোপোজাল লেটারকে’ কীভাবে চাঁদা চাওয়া বলতে পারেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, বিপ্লবের নেতাদের বিতর্কিত করতেই মিডিয়ার এই কার্যকলাপ।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক সমন্বয়ক মাহায়ের ইসলাম ফেসবুকে লিখেন, ‘যারা সর্বপ্রথম স্পন্সরশিপ ও চাঁদাবাজির পার্থক্য না বুঝে সালাউদ্দিন আম্মারকে মিথ্যা ব্লেইম দিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করুন।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ পরান লিখেছেন, ‘আওয়ামী দালাল মিডিয়ার হেল্প লইয়া এক সালাহউদ্দীন আম্মারের চরিত্রহানি করার চেষ্টা করলেন। ভালো! কিন্তু এখন যে লীগ ওই ব্যক্তি আম্মাররে না গাইলায়া বিপ্লবটারেই গাইল্লানোর সুযোগ পাইতাছে।’

সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মেশকাত চৌধুরী মিশু লিখেছেন, ‘এই আওয়ামী মিডিয়া গান্ডুরা বছরের পর বছর ধরে গোয়েবলসের ভূমিকা পালন করেছে, লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগের সাথে মিলে। এখনো হাসিনা/আওয়ামী লীগ ফেরত আনার যুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। আজকে হাসিনার মিডিয়া উইং ন্যারেটিভ নির্মাণে যে সিন্ডিকেট এটাক দিল এটা আপনার কাছে বোধগম্য হতে সমস্যা হলে আপনি বোকার স্বর্গে আছেন। জুলাইয়ের একটা ফেস বিতর্কিত করতে আওয়ামী লীগ, মাস্টারমাইন্ডরা এক হয়ে গেছে। ঐক্যবদ্ধ ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে।’

এদিকে সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন রূপালী বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘বিজয় উদযাপন উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনার উদ্যোগে অনেকেই ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকা- নিয়ে ভয় কাজ করে, কারণ ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকা- বাড়লে রাজনৈতিক শক্তির আধিপত্যবাদ দূর হয়ে যায়’।

জানা গেছে, দুই দিনের অনুষ্ঠানের জন্য ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকার অনুদানের জন্য একটি লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ২১ প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৫ লাখ টাকার আর্থিক অনুদানের আবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। তার মধ্যে এখনো পর্যন্ত ১৪ প্রতিষ্ঠানে চিঠি পৌঁছানো হয়েছে।

কোনো প্রতিষ্ঠানে ইংরেজিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে, কোনোটিতে বাংলায়। চিঠির সঙ্গে অনুষ্ঠান এবং বাজেটের বিস্তারিত যুক্ত করে দেওয়া হয় বলে চিঠিতে লেখা রয়েছে। বাংলায় করা একটি আবেদনে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহীর গৌরবময় ইতিহাসে ৩৬ জুলাই একটি স্মরণীয় দিন। এই দিনটি আমরা ‘জুলাই আন্দোলন’ হিসেবে স্মরণ করি, যেখানে বহু তরুণ শহিদ হয়েছিলেন এবং অনেকে আহত হয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকারের সংগ্রামে। এই ঐতিহাসিক ঘটনার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আমরা আয়োজন করতে যাচ্ছি ‘৩৬ জুলাই: মুক্তির উৎসব। এই উৎসবে রাজশাহীর শহিদ পরিবার, আহতদের পরিবার, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সম্মানিত সমন্বয়কবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য হলো শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও তরুণ প্রজন্মকে তাদের আত্মত্যাগের গল্প জানানো।’

এই আবেদনপত্রে সালাউদ্দিন আম্মার ছাড়াও সই করেছেন কে এস কে হৃদয়। তিনি ৩৬ জুলাই মুক্তির উৎসবের অর্গানাইজার এবং ক্যাম্পাস বাউলিয়ানার ডিরেক্টর ও কো-ফাউন্ডার। ৯ জুলাই তাদের প্রস্তাবনায় সুপারিশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। তিনি লিখেছেন ‘স্ট্রংলি রিকমেনডেড’। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের কাছে ২১ জুলাই একটি আবেদন করা হয়েছে। তারা ২৩ জুলাই ২ লাখ টাকা অনুমোদনও করেছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘শুধু সালাউদ্দিন বলে নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সংগঠন, যেকোনো ব্যক্তি, বিভাগ, এক্সট্রাকারিকুলার একটিভিটিজের জন্য সহায়তা চাইতে আসলে আমি তাদের সুপারিশ করেছি। কারণ, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার মতো ফান্ড নেই। এমন সুপারিশ গত এক বছরে আমি শতাধিক করেছি’।

চিঠি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার পর ২৭ জুলাই ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছেন সালাউদ্দিন আম্মার। সেখানে তিনি বিষয়টিকে ‘ভয়াবহ মিডিয়া ট্রায়াল’ হিসেবে দাবি করেছেন। জুলাইয়ের পর চাইলে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করতে পারতেন উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘একটা বড় কনসার্ট করতে চেয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে। একটা প্রস্তাবনা রাবি প্রশাসনকে দেওয়া হয়। তবে প্রশাসন জানায়, এখন টাকা নেই। তবে টাকা বাদে যেকোনো সহযোগিতা তারা দেবে। এরপর সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে উপাচার্যের স্বাক্ষর নিয়ে প্রাইভেট কোম্পানি, ব্যাংক, নগর ভবন-এগুলাতে প্রস্তাবনা দেন’।

সালাউদ্দিন লিখেছেন, ‘আমি চেয়েছিলাম একবারে প্রোগ্রাম শেষে আপনাদের সবকিছু ক্লিয়ার করে দিতে। কিন্তু আমি আসলে আর নিতে পারতেছি না। এত অসুস্থতার মধ্যে একটা আয়োজন করতে চাচ্ছি, সেটা নিয়েও সমস্যা। এখন পর্যন্ত একই প্রপোজাল নিয়ে প্রায় ১৫টি ব্যাংকের হেড অফিসে যাওয়া হয়েছে, সবাই রিজেক্ট করেছে। শুধু ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৫ হাজার টাকা। চেম্বার অব কমার্স ৩০ হাজার টাকা, নগর ভবন-২ লাখ টাকা। এই ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো বাজেট আমরা ম্যানেজ করতে পারি নাই।’

আরেক স্ট্যাটাসে সালাউদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত ১৯টি প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছেন। এই আয়োজনের প্রতিটা টাকার হিসাব দিয়ে দিবেন তিনি। আয়োজন শেষে সব ডকুমেন্টসের স্বচ্ছতাও তুলে ধরবেন। 

সালাউদ্দিন আরও লেখেন, ‘বিজয় উৎসব গত বছর করতে চেয়েছিলাম পারি নাই ফেনীর বন্যার কারণে, রাজশাহীর বিশেষ অবদান ছিল এই আন্দোলনে, তাই বিজয় উৎসবও হবে রাজশাহীতে।’

তিনি আরও লিখেন, ‘এটা আমার ভ-ামিও না, ফুটেজখুরিও না। আমি সাংস্কৃতিক কর্মী। আমি খুব ভালোমতোই জানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে পারলে তোমাদের আধিপত্যবাদের রাজনীতি আর পেশীশক্তির রাজনীতিতে ভয়াবহ ভাটা পড়বে’।