ঢাকা রবিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৫

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৫, ০১:২৫ এএম

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতি এক অস্থির ও স্পর্শকাতর সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা এবং এর অঙ্গসংগঠনের অনেক সিনিয়র নেতা এখন দেশের বাইরে, বিশেষ করে ভারতে অবস্থান করছেন। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, তারা সেখান থেকেই বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, অন্তর্বর্তী সরকারকে বিব্রত করা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালের নীলনকশা করছেন। বিদেশ থেকে তারা শুধু রাজনৈতিক নির্দেশনা দিচ্ছেন না, বরং অর্থনৈতিক সহায়তাও পাঠাচ্ছেন। কোটি কোটি টাকা ঢালছে এই অরাজক কর্মকা-ে।

এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিল, গোপন বৈঠক ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানোর ঘটনা ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন, কিন্তু তাতে তাদের কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতারা নভেম্বর ও ডিসেম্বরকে লক্ষ্য করে বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছেন। তাদের উদ্দেশ্য একটাই নির্বাচনের আগে রাজপথ উত্তপ্ত করে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং গণঅভ্যুত্থানের পর প্রতিষ্ঠিত নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতাকে অচল করে দেওয়া।

রাষ্ট্রবিরোধী এ তৎপরতা শুধু আওয়ামী লীগের টিকে থাকার লড়াই নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য ভয়াবহ হুমকি। যারা বিদেশে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তারা শুধু সরকারের প্রতিপক্ষ নয়, রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। এমন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব আরও বেড়ে যায়। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, নজরদারি, প্রতিরোধমূলক অভিযান ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণসহ সবকিছুতেই এখন দ্রুততা ও দৃঢ়তা প্রয়োজন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে প্রশাসনের সব পর্যায়ে সতর্কতা জারি এবং বলা হয়েছে, যে থানার আওতায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল বা নাশকতা ঘটবে, সেই থানার ওসিকে দায় নিতে হবে। এটি নিঃসন্দেহে একটি কঠোর কিন্তু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দায়িত্বের জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ। দেশের ভেতর এখনো কিছু গোষ্ঠী বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে; সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়াচ্ছে। এসবের মোকাবিলায় শুধু আইন দিয়ে নয়, তথ্যের স্বচ্ছতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা জোরদার করতে হবে। জনগণকে জানতে হবে, কারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করছে এবং তাদের উদ্দেশ্য কী।

এ ছাড়া ধর্মীয় উৎসব, নির্বাচনকালীন কিংবা অর্থনৈতিক টানাপোড়েন, প্রতিটি সংবেদনশীল মুহূর্তে উসকানিমূলক কর্মকা-ের আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত হবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বহুমাত্রিক কৌশল গ্রহণ করা। একদিকে দৃঢ় নিরাপত্তাব্যবস্থা, অন্যদিকে সামাজিক সচেতনতা ও রাজনৈতিক সংযম। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষায় সব পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন। অপরাধী বা নাশকতাকারী যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে কোনো আপস নয়।

বাংলাদেশ এক কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে জাতীয় নির্বাচন, যার ওপর নির্ভর করছে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা এবং দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা। এ মুহূর্তে যেকোনো ধরনের অস্থিরতা, নাশকতা বা বিদেশি প্রভাবিত ষড়যন্ত্রকে দৃঢ়ভাবে প্রতিহত করাই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। তাই এখনই সময় প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থা ও সাধারণ নাগরিক সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশবিরোধী অপচেষ্টা মোকাবিলা করার।

আমরা আশা করব, সরকার রাষ্ট্রের শান্তি, স্থিতি ও নিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কেননা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকারের নয়, পুরো জাতির স্বার্থে অপরিহার্য।