মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


লাবনী আক্তার কবিতা, লোকপ্রশাসন বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

ডিগ্রিধারী অথচ দক্ষতাহীন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কোথায়

লাবনী আক্তার কবিতা, লোকপ্রশাসন বিভাগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ১১:৩৫ পিএম

ডিগ্রিধারী অথচ দক্ষতাহীন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কোথায়

আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা কাকে বলে? আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কি আদর্শ? আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা কি সত্যিই দক্ষ প্রজন্ম গড়ে তোলে নাকি শুধুই তৈরি করে সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত বেকার জনবল। দেশে বর্তমানে বেকার জনগণের সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। দেশে প্রতিবছর যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটের হার তেমনি বৃদ্ধি পাচ্ছে বেকারের হার, অথচ হওয়ার কথা ছিল সম্পূর্ণ উল্টো। তাহলে ভুল কোথায় আর এমন হওয়ার কারণ কি? আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাই কি এর আসল কারণ নাকি রয়েছে পারিপার্শ্বিক প্রভাব।

যে শিক্ষাব্যবস্থা একজন ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটায় এবং সমাজ প্রসারে ভূমিকা রাখে তাকেই আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা বলা যায়। ফিনল্যান্ড, জাপান, কানাডার শিক্ষাব্যবস্থা পুরো বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত এবং আদর্শ শিক্ষাব্যবস্থা বলা যায়। যদি একটু ভালো করে খেয়াল করেন তবে দেখবেন এই প্রতি দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা মিল রয়েছে। এ মিলটা হলো, এরা প্রত্যেক দেশই শিশুর নিজস্ব দক্ষতা বুঝে চাপ প্রয়োগ করে অর্থাৎ এখানে মাছকে গাছে উঠার জন্য মূল্যায়ন করা হয় না।

অপরদিকে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা পুরোটাই মুখস্থনির্ভর এবং বিশ্লেষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের কোনো সুযোগ বলেই চলে। আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শুধু পাশের হারকেই মূল্যায়ন করা হয়, ব্যক্তিগত দক্ষতাকে নয়। যার ফলে প্রতিবছর শিক্ষার হার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেকারের হারও বেড়ে যায়। কারণ এই শিক্ষিত প্রজন্মের নিজস্ব দক্ষতা প্রায় ধ্বংসের পথে।

আমাদের দেশের একজন শিক্ষার্থী প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মুখস্থনির্ভর বিদ্যা অর্জন করে। তারপর ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সৃজনশীলতা ভিত্তিতে পড়ার কথা থাকলে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন গাইড এবং কোচিং ব্যবসা শিক্ষার্থীদের এই সৃজনশীলতা ধরে রাখতে পারে না।

ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে, জিপিএ ৫ পেতে হবে এ রকম কিছু অসুস্থ প্রতিযোগিতার জন্য শিক্ষার্থীরা নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে কোনো কিছু বিশ্লেষণ না করে গদবাধা গাইড মুখস্থ করে যায়।

এরপর শুরু হয় ভর্তিযুদ্ধ। ইঁদুর দৌড় খেলায় যাতে পিছিয়ে না পড়ে তারজন্য প্রতি শিক্ষার্থী নিজের প্যাশন, দক্ষতা সব ভুলে নেমে পড়ে মেডিকেল, বুয়েট, পাবলিকের মতো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে। এসব এক থেকে দেড় ঘণ্টায় পরীক্ষায় যাচাই করা হয় শুধুই শিক্ষার্থীর মুখস্থ বিদ্যা। তারপর আবার চান্স পেলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ দক্ষতা বিচার বিবেচনা না করেই একটা সাবজেক্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। অনেক শিক্ষার্থীই নিজের অপছন্দের সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করে, চারবছর পর উচ্চশিক্ষিত এর সার্টিফিকেট তো পেয়ে যায়, কিন্তু বাস্তবে থাকে না কোনো দক্ষতা। ভার্সিটিতে ভর্তি থেকে শুরু করে গ্র্যাজুয়েট হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শুধু মুখস্থ বিদ্যার ওপর নির্ভর থাকতে হয়।

তারপর কোনো শিক্ষার্থী যদি স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে চায় তবুও কম্পিউটার থেকে শুরু করে যেকোনো স্কিল ডেভেলপ করার জন্য শিক্ষার্থীর নিজের অর্থ খরচ করতে হয়। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতেই সবার মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয় সেখানে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে স্কিল ডেভেলপ করা অনেকেরই হয়ে ওঠে না। তাহলে কী লাভ এই শিক্ষাব্যবস্থার, যা ১৬ বছর পড়াশোনা করেও একটা মিনিমাম স্কিল শেখাতে পারে না।

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায়: বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান যখন প্রায় তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে তখন এর থেকে পরিত্রাণের জন্য প্রয়োজন সরকার এবং কিছু ব্যক্তিগত উদ্যোগ। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কি কি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ অভিশাপ থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত পাওয়া যেতে পারে।

জীবনে চাকরি করেন অথবা ব্যবসা কিছু এমন দক্ষতা রয়েছে যা আপনাকে অর্জন করতেই হবে। সরকারের উচিত স্কুল-কলেজে এই স্কিলগুলো কারিকুলামভুক্ত করা। যেমনÑ কম্পিউটার দক্ষতা, কমিউনিকেশন, সময়ানুবর্তিতা, বক্তৃতা বা কথা বলা।

কম্পিউটার দক্ষতাÑ আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, বর্তমান যুগে কম্পিউটার না জানা আর অশিক্ষিত হয়ে থাকা দুটো একই ব্যাপার। সরকারের উচিত গ্র্যাজুয়েট হওয়ার আগেই প্রতিটি শিক্ষার্থীর কম্পিউটার স্কিল বাধ্যতামূলক করা। প্রতি স্কুল-কলেজে ফ্রি কম্পিউটার কোর্স করানো। একবিংশ শতাব্দীতে এসে যেই দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে যত দক্ষ হবে, অর্থনীতিতে ততই উন্নত হবে।

কমিউনিকেশনÑ আমাদের দেশে অনেক দক্ষ তরুণ বেকার বসে আছে শুধু তার সঠিক জায়গায় কমিউনিকেশন না থাকার কারণে। বিভিন্ন কোম্পানি বলছে তারা দক্ষকর্মী পাচ্ছে না আবার বেকাররা বলছে তারা চাকরি পাচ্ছে না। এখানে মাঝে রয়েছে শুধু একটু কমিনিকেশন গ্যাপ। আর এই গ্যাপ দূর করতে সরকারের চেয়ে নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগ বেশি কার্যকর। তাই কীভাবে নিজের কমিউনিকেশন বাড়ানো যায়, সেদিকে মনোযোগ দিন।

সময়ানুবর্তিতাÑ দেরি করাই যেখানে বাঙালির স্বভাব সেখানে সময়ানুবর্তিতা যে কত উপকারে আসে তা আপনার ভাবনার বাইরে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই প্রতিটি কাজ সময়মতো করার চেষ্টা করুন। সময়মতো কাজ করলে পরে কিছুর জন্যই দেখবেন আফসোস করতে হবে না।

জনসমক্ষে বক্তৃতাÑ আপনি যদি ৫০ জন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথাই বলতে না পারেন, আপনার যদি হাত-পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়, তাহলে চাকরির ইন্টারভিউতে যে আপনি ফেল করবেন এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই ছাত্রজীবন থেকেই বিতর্ক করা শিখুন। পড়াশোনা শেষ হলে নিজে একা একা চর্চা করুন। কিন্তু নির্ভয়ে কথা বলা শিখে নিন।

দেশে এই বেকারের অভিশাপ থেকে মুক্তির জন্য সরকার এবং নাগরিক সবার প্রচেষ্টাই প্রয়োজন। তাই শুধু বইয়ের বিদ্যার ওপর নির্ভর না থেকে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন। সরকার শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন না করলে, নিজের থেকে অল্প অল্প করে পরিবর্তন শুরু করুন। মনে রাখবেন শূন্য থেকেই সমুদ্র হয়।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!