সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের অধিকাংশ শিক্ষক বিভিন্ন দাবি আদায়ে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। এতে দেশের বেশির ভাগ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। গতকাল সোমবার থেকে শুরু হওয়ার কথা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা। কিন্তু প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। আর একই দিন থেকে বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন দেশের ৭২১টি সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকরা। পরীক্ষা বর্জন না করার জন্য প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কড়া বার্তা দিলেও তা আমলে নেননি শিক্ষকরা। আজ মঙ্গলবারও দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
সরকারি মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত :
সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। তবে ৭২১টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা চার দফা দাবিতে গতকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। ফলে স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা হয়নি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার ও রোববার রাজধানীর আব্দুল গনি রোডের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর কার্যালয় চত্বরে ‘বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (বাসমাশিস)’ ব্যানারে চার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর কর্মবিরতির কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের চার দাবি হলোÑসহকারী শিক্ষক পদ নবম গ্রেডে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত ও দ্রুত সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করে গেজেট প্রকাশ, বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন, বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়া এবং ২০১৫ সালের পূর্বের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২-৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন সুবিধা বহাল।
এদিকে সারা দেশে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশির ভাগ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। শেরপুর সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমিতে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত আছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সহকারী শিক্ষক আনিস রহমান। তিনি বলেন, ‘ স্কুল কর্তৃপক্ষ গত রাতেই পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে নোটিশ জারি করেছে।’
চট্টগ্রামের পটিয়ার আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ মাহফুজুল আলম। আর রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত আছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সিনিয়র শিক্ষক ও বাসমাশিসের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, ‘আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি। স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত আছে।’
এ ছাড়া ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, রাজধানীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলসহ বেশ কিছু স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রেখে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন বলে জানা গেছে।
পরীক্ষা হচ্ছে না অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে :
এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ গতকাল থেকে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রেখে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন। ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ কয়েক দিন আগেও দশম গ্রেডে বেতনসহ ৩ দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। পরে ১১তম গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন। নোয়াখালী সদর উপজেলার ত্রিপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালনের তথ্য দিয়েছেন ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক ও স্কুলটির শিক্ষক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ।
তিনি বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস অনুযায়ী ৩ দফা দাবির মধ্যে ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি ও অন্যান্য দাবি বাস্তবায়নে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছি। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলবে।’
ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও কর্মবিরতি পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক ও পরিষদের আরেক আহ্বায়ক মো. আবুল কাসেম।
এ ছাড়া সুনামগঞ্জে জামালগঞ্জ উপজেলার ২০নং শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরগুনার আমতলী উপজেলার পূর্য চওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী সদর উপজেলার বাজারঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝালকাঠির নলছিটি উপর যারা পূর্ব কুলকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি পালন করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে শিক্ষকদের একটি পক্ষ আন্দোলনে থাকলেও ক্লাসে ফিরেছেন প্রাথমিক শিক্ষকদের বারোটি সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ অনুসারীরা; তারা বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন।
এদিকে ঠিকমতো বার্ষিক পরীক্ষা না নিলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আদেশে বলা হয়েছে, এই পরীক্ষা গ্রহণে কোনো প্রকার ‘শৈথিল্য বা অনিয়ম’ পরিলক্ষিত হলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পরীক্ষা কার্যক্রম বিনা ব্যর্থতায় নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করতে হবে। তবে অধিদপ্তরের সতর্কতা উপেক্ষা করেও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবারও কর্মবিরতি ও পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চলবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন