বাতাসে থাকা ধুলোবালি, ধোঁয়া, রাসায়নিক, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এলে অনেকেরই অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তবে এই অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার একটি প্রধান কারণ হলোÑ ডাস্ট মাইট অ্যালার্জি। এটি ধুলো মাইটের বিষ্ঠা বা দেহাবশেষের প্রতি আমাদের শরীরের একধরনের অতিসংবেদনশীলতা। প্রতিকারের উপায় জানাচ্ছেন ডা. মো. সাইদুজ্জামান সাইদ।
ডাস্ট মাইট কী এবং কেন অ্যালার্জি হয় : ডাস্ট মাইট হলো খালি চোখে দেখা যায় না, এমন অতি ক্ষুদ্র প্রাণী। এই মাইটগুলো প্রধানত মানুষের মৃত ত্বকের কণা খেয়ে বেঁচে থাকে। এদের প্রিয় বাসস্থান হলো আমাদের বিছানার চাদর, গদি, কম্বল, কার্পেট এবং আসবাবপত্র। এই মাইটগুলো নিজেরা ক্ষতিকর নয়, কিন্তু এদের শরীর থেকে নিঃসৃত হজমকারী এনজাইম এবং এদের বিষ্ঠা (মল) ও মৃত শরীরের অংশ বাতাসে মিশে অ্যালার্জেন হিসেবে কাজ করে। যখন এই অ্যালার্জেনগুলো আমাদের নাক, চোখ বা ত্বকের সংস্পর্শে আসে, তখন আমাদের শরীরে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। ধুলো-ময়লার মধ্যে শুধু মাইট নয়, পোষা প্রাণীর লোম, খুশকি, ছত্রাক, পরাগরেণু এবং তেলাপোকার অংশও থাকতে পারে, যা অ্যালার্জির কারণ হয়।
প্রধান লক্ষণসমূহ : ডাস্ট মাইট অ্যালার্জির উপসর্গগুলো সাধারণ সর্দি-কাশির মতো মনে হতে পারে, তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং বারবার ফিরে আসে, যেমনÑ
নাকের উপসর্গ : অনবরত হাঁচি, নাক দিয়ে পানি পড়া এবং নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। চোখের উপসর্গ : চোখ লাল হওয়া, চোখ চুলকানো এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া।
শ্বাসকষ্ট : হাঁপানির মতো শ্বাসকষ্ট, বুক টানটান অনুভব করা এবং কাশি।
ত্বকের সমস্যা : কিছু ক্ষেত্রে ত্বকে চুলকানি এবং ফুসকুড়ি বা র্যাশ দেখা দিতে পারে।
এই অ্যালার্জি প্রাথমিক অবস্থায় সামান্য হলেও, বারবার অ্যালার্জেনগুলোর সংস্পর্শে এলে এর তীব্রতা বাড়তে থাকে।
প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের উপায়
ডাস্ট মাইট অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো অ্যালার্জেন বা উদ্দীপকগুলো থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকাÑ
১. ঘর পরিষ্কার রাখা : নিয়মিত ঘর, বিছানার চাদর, বালিশের কভার ও গদি গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
২. অ্যালার্জেন নিয়ন্ত্রণ : কার্পেট, ভারী পর্দা এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যা ধুলো জমতে সাহায্য করে, তা কমিয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে বেডরুমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।
৩. ওষুধ গ্রহণ : অ্যালার্জির উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে।
৪. চিকিৎসকের পরামর্শ : যদি উপসর্গগুলো মারাত্মক হয় বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তবে অবশ্যই দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের (অ্যালার্জি বা বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ) পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী অ্যালার্জি টেস্টিং এবং ক্ষেত্রবিশেষে ইমিউনোথেরাপিরও প্রয়োজন হতে পারে।
ডাস্ট মাইট অ্যালার্জি জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন এবং নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই দূরে থাকা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন