জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে বাংলাদেশের মতো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর টিকে থাকার সংকট আরও বাড়ছে। এ জন্য উচ্চঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে নিজস্ব সম্পদের ওপর নির্ভর করে শক্তিশালী স্থানীয় অভিযোজন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পরামর্শ দিয়েছেন জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘কপ-৩০ এর ফল : বাংলাদেশের পরবর্তী ভূমিকা ও নাগরিক সমাজের অভিমত’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিমত তুলে ধরেন তারা।
ইক্যুইডিবিডির চিফ মডারেটর এম রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়কারী শরীফ জামিল, সেন্টার ফর পার্টিসেপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) প্রধান নির্বাহী সামসুদ্দোহা, কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর হাসান মাসুম, বাংলদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি কাউসার রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন, সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, সাংবাদিক সালাহউদ্দিন বাবলু, কোস্ট ফাউন্ডেশনের এম. এ. হাসান প্রমুখ।
মূল প্রবন্ধে এম.এ. হাসান বলেন, জলবায়ু অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার থেকে পর্যায়ক্রমে সরে আসার রোডম্যাপ ছাড়াই বেলেম চুক্তি (কপ-৩০) চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস বাধ্যতামূলক না করে স্বেচ্ছায় করার আহ্বান মূলত বৈশ্বিক জলবায়ু সংকটের মূল কারণকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু অর্থায়নের সিংহভাগই আসে ঋণ হিসেবে। জলবায়ু অর্থায়নের জন্য দেওয়া প্রতি ৫ ডলারের বিপরীতে পরিশোধ করতে হচ্ছে ৭ ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু জলবায়ু ঋণের পরিমাণ বর্তমানে ৮০ ডলার। সুতরাং ঋণভিত্তিক পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে এবং নিজস্ব অর্থায়ন বাড়াতে ব্লু-ইকোনমির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, এবারের জলবায়ু সম্মেলনেও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্রতিশ্রুতি আসেনি, ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে এমন নয়; পেলেও যৎসামান্য অনুদানভিত্তিক, বাকি পুরোটাই ঋণনির্ভর। তাই ন্যায়ভিত্তিক জলবায়ু ক্ষতিপূরণ আদায়ের লক্ষ্যে বাংলাদেশকে অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। দেশের জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় নিজস্ব সম্পদের ওপর নির্ভর করে শক্তিশালী স্থানীয় অভিযোজন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
শরীফ জামিল বলেন, যদি জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কীভাবে পর্যায়ক্রমে বন্ধ হবে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেই এনডিসি-০৩ জমা দেয়নি, তারাই আবার এনডিসি পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করছে। এই সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলো, বিশেষ করে অর্থায়নের ক্ষেত্রে, কোনো তাৎপর্যই বহন করে না।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন