ঢাকা রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

মানহীন গল্পে কোটি কোটি ভিউ

রুহুল আমিন ভূঁইয়া
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ১২:১০ এএম

জীবন সংগ্রামের গল্পে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনুদান পাওয়া ‘আজিরন’ সিনেমার কাজ শেষ করলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী গোলাম ফরিদা ছন্দা। চলতি বছরের শুরুতে সিনেমাটির কাজ শুরু হয়ে সম্প্রতি এর নির্মাণকাজ শেষ হয়ে বর্তমানে সম্পাদনার টেবিলে রয়েছে। রাশেদ রেহমানের গল্প অবলম্বনে সিনেমাটির চিত্রনাট্য, সহ-প্রযোজনা ও পরিচালনা করেছেন গীতালি হাসান। এতে চিত্রনায়ক কায়েস আরজুর বিপরীতে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দার সুমাইয়া অর্পা।

সিনেমাটিতে নামভূমিকায় অভিনয় করেছেন জানিয়ে দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে ছন্দা বলেন, ‘আজিরন প্রত্যন্ত গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের গল্প। তাদের জীবন সংগ্রামই পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে। রাজবাড়ীর পদ্মাপাড়ের চর এলাকায় সিনেমাটির দৃশ্য ধারণ হয়েছে। আমি আজিরন চরিত্রে অভিনয় করেছি।’

নিজের চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘গল্পে দেখা যাবে আমার অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। আমার স্বামীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু ভাই। বিয়ের পর আমাদের সংগ্রামী জীবন শুরু হয়। এভাবেই চলতে থাকে। একপর্যায়ে আমার ছেলের সঙ্গে ঘটে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। এমনই গল্পে সিনেমাটি এগিয়ে যাবে।’

অনুদানের সিনেমা নিয়ে রয়েছে নানা অস্বচ্ছতার গল্প। অনুদানের সিনেমা অনেকটা নীরবেই নামেমাত্র দু-চারটি হলে মুক্তি পাওয়ার অভিযোগ অনেক দিন ধরেই। অনুদানের সিনেমা দর্শকদের আগ্রহ জাগাতে পারে না। সেই জায়গা থেকে প্রত্যাশা কেমন? উত্তরে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমাদের দেশে অনুদানের সিনেমায় প্রচারণা হয় না। বাজেট কম থাকার কারণে শুটিংয়ে সব টাকা শেষ হয়ে যায়। যে কারণে প্রচার সম্ভব হয় না। জানি না আজিরন শেষ পর্যন্ত কেমন হবে। তবে সিনেমাটি নিয়ে আমি আশাবাদী। কাজটি ভালোবেসে নিজের সেরাটা দিয়ে চরিত্রটি ধারণ করেছি। আশা করছি, গল্পটিও দর্শকদের হৃদয়ে ছুঁয়ে যাবে।’

বর্তমানে ছন্দা ব্যস্ত আছেন অনিমেষ আইচ পরিচালিত দীপ্ত টিভির ধারাবাহিক ‘বিজলী’ নিয়ে। এরই মধ্যে শেষ করেছেন ‘আহেদ আলী’ নাটকের কাজ। শামীম আহমেদের রচনায় আবদুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় নাটকটি আগামী ২ আগস্ট বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার হবে। পাশাপাশি দুই মেয়ে টাপুর ও টুপুরকে সময় দিচ্ছেন। পড়াশোনার জন্য তারা বাবা-মায়ের কাছ থেকে থাকছেন দূর দেশে। খানিক সময়ের জন্য তারা ঢাকায় এসেছেন সম্প্রতি।

এখন নায়ক-নায়িকাকে কেন্দ্র করে নাটক নির্মিত হয়, যা নিয়ে রয়েছে এই অভিনেত্রীর ক্ষোভ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখনকার নাটকে বাবা-মা, ভাই-ভাবিদের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ চরিত্র উপক্ষিত। সব বাজেট দুই চরিত্র ঘিরেই। এ জায়গা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

ঘুরেফিরে একই গল্পে নাটক নির্মিত হয় এমন উদাহরণ টেনে ছন্দা বলেন, ‘গত ঈদে আমার সন্তানদের নিয়ে একটা নাটক দেখি। দেখলাম নাটকটির ভিউ আট মিলিয়ন। এ নাটকে ছিল না মজবুত কোনো গল্প। আমার প্রশ্ন কেন সেখানে আট মিলিয়ন ভিউ। ভিউ দিয়ে তো শিল্পের মান নির্ণয় করা যাবে না। ভিউ আজ আছে, কাল নেই।

পুরোনো ফালতু একটি গল্পের নাটক ছিল। নাটকটির নাম বলতে চাই না। অথচ এটি দর্শক হুমড়ি খেয়ে দেখেছে। এমন গল্পে আগে অসংখ্য নাটক হয়েছে। নাটকের শুরুতেই শেষ বলে দেওয়া যায়। এমন মানহীন গল্পে কোটি কোটি ভিউ। অথচ এর চেয়ে ভালো পারিবারিক গল্পের নাটক হতে পারে। ভালো নাটক নির্মিত হয় না, তা কিন্তু নয়। কিন্তু সেসব নাটকে ভিউ কম। পারিবারিক গল্পের নাটক নির্মিত হলে, তা কিন্তু দর্শকনন্দিত হয়। এখন একটি শ্রেণির দর্শকদের মাথায় রেখে নাটক নির্মিত হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এ থেকে বেরিয়ে আসা দরকার।’

ভালো নাটক নির্মাণে টিভি চ্যানেলকে এগিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দর্শকদের রুচির পরিবর্তন আনতে হবে। এখন গল্প কি শুধু তরুণ প্রজন্মের জন্য তৈরি হয়? গল্প তো সবাই দেখে। সবার কথা মাথায় রেখেই নাটক নির্মাণ করতে হবে। সিনিয়রদের মাথায় রেখে এখন কেন গল্পই তৈরি হচ্ছে না। চ্যানেল এখন কেন ১ ঘণ্টার নাটক প্রচার করতে চাচ্ছে না, তা জানি না। ঘুরেফিরে আট থেকে ১০টি মুখই বারবার চোখের সামনে আসে।’

চ্যানেলকে দায়িত্ব নিতে হবে উল্লেখ করে ছন্দা বলেন, ‘অনেক সমস্যা একসঙ্গে হয়ে আজকের এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ থেকে উত্তরণ জরুরি। একটা দেশের নাটক কেন ইউটিউব নির্ভর হবে? এত চ্যানেল আছে, সেখানে কেন তারা ভালো নাটক বানাবে না? তাহলে এত বড় ইন্ডাস্ট্রি কি করবে? পৃথিবীর কোথায় আছে ইউটিউবনির্ভর ইন্ডাস্ট্রি। এত বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি কি ধ্বংস হয়ে যাবে?’

উত্তরণ দরকার জানিয়ে সর্বশেষ তিনি বলেন, ‘অবশ্য চ্যানেল মালিকদের বসে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে। এভাবে আসলে চলতে পারে না। ইউটিউবে যাচ্ছেতাই সস্তা মানের যা খুশি তাই করা হচ্ছে। উদ্ভট সব নামে নাটক নির্মিত হয়। এভাবে একটা দেশের সংস্কৃতি চলতে পারে না। এটা কোনো সুস্থ সংস্কৃতি হতে পারে না।’

‘আজিরন’ সিনেমায় আরও অভিনয় করেছেন গোলাম কিবরিয়া তানভীর, ফজলুর রহমান বাবু, মাহমুদুল ইসলাম (বড়দা মিঠু) আদিত্য, আনন্দ প্রমুখ। গান লিখেছেন কবির বকুল, স্নেহাশীষ ঘোষ, অনন বিশ্বাস। সংগীত পরিচালনায় ইমরান। বিভিন্ন গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান, কনা, আনিসা, ফজলুর রহমান বাবু, শুভ খান।