আসন্ন দিপাবলীতে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দক্ষিণী সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় অভিনেত্রী রাশমিকা মান্দানার নতুন সিনেমা ‘থামা’। সিনেমাটি কমেডি, রোম্যান্স আর হররের মিশেলে নির্মিত হয়েছে। ম্যাডক ফিল্মসের প্রযোজনায় সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন আদিত্য সরপোতদার। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন রাশমিকা। এ ছাড়াও আছেন অভিনেতা আয়ুষ্মান খুরানা, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, পরেশ রাওয়াল প্রমুখ। সম্প্রতি সিনেমাটির টিজার প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকেই আলোচনায় আসে রাশমিকার নতুন লুক।
খোলা চুল আর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার যেন অন্যরকম রহস্যের ছোঁয়া ফুটে উঠেছে। এই সিনেমায় রাশমিকার চরিত্রের নাম ‘তাদাকা’, যে আলো-অন্ধকারের ভেতর দিয়ে ভালোবাসা আর ভয়ের গল্প বলবে। অন্যদিকে, আয়ুষ্মান খুরানা থাকছেন ‘অলোক’-এর ভূমিকায়। অলোক সবসময় মানুষের শেষ আশা-ভরসার প্রতীক। অলোকের প্রেমে পড়ে তাদাকা। তবে তাদের গল্পের মাঝেই হাজির হয় অন্ধকারের বাদশা ‘ইয়াকশন’, যার চরিত্রে আছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী। আর কৌতুক রসে ভরপুর পরেশ রাওয়াল সিনেমায় আনবেন বাড়তি মজা। ম্যাডক ফিল্মস ‘স্ত্রী’, ‘ভেড়িয়া’ কিংবা ‘মুঞ্জ্যা’র মতো জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দেওয়ার পর এবার নিয়ে আসছেন ‘থামা’। সিনেমাটি ভূতুড়ে দুনিয়ায় এক অন্ধকার অতীতের ছায়ায় ভিন্নস্বাদের প্রেমের গল্প ফুটিয়ে তুলবে।
এদিকে, রাশমিকা কাজ শুরু করেছেন ‘ককটেল টু’ সিনেমার। ২০১২ সালে বক্স অফিসে সাড়া জাগানো রোমান্টিক সিনেমা ‘ককটেল’র সিক্যুয়াল নির্মিত হচ্ছে। যেখানে শহীদ কাপুরের সঙ্গে দুজন নায়িকা রয়েছেন। তারা হলেন কৃতি শ্যানন ও রাশমিকা মান্দানা। ইতোমধ্যেই ইতালির বিভিন্ন লোকেশনে এ সিনেমার শুটিং শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে শুটিংয়ে যোগ দিয়েছেন রাশমিকা। এতে নতুন লুকে দেখা যাবে এই অভিনেত্রীকে।
চলতি বছরে রাশমিকার তিনটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। ‘ছাবা’, ‘সিকান্দার’ ও ‘কুবেরা’। তিনটি সিনেমাই ছিল বড় বাজেটের। এর মধ্যে ‘ছাবা’ সিনেমাটি ঐতিহাসিক পটভূমির। সিনেমাটি বক্স অফিসে বেশ সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। এ সিনেমাতে অভিনয়ের জন্য এক মাস শিক্ষকের কাছে রাশমিকা এবং নায়ক ভিকি কৌশল মারাঠি ভাষা শিখেছেন। তা ছাড়া বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে রাশমিকাকে। সিনেমাটি ব্যবসাসফল হলেও রাশমিকার অভিনয় দর্শক সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করতে পারেনি।
বলা যায়, তার এত পরিশ্রম তেমন সুফল বয়ে আনতে পারেনি। এরপর বয়সে ৩০ বছরের বড় সালমান খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করা ‘সিকান্দার’ সিনেমাটি নিয়ে অনেক উচ্ছ্বাস ছিল তার। সিনেমাটি তার নির্মাণ বাজেটের চেয়ে কম আয় করে বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখানেই ধরা খেয়েছেন দক্ষিণী এই সুন্দরী।
এক সময়ের জাতীয় ক্রাশ রাশমিকা দক্ষিণী সিনমো ‘কুবেরা’য় বিপরীতে নায়ক হিসেবে পেয়েছিলেন সুপারস্টার ধানুশকে। এখানে মনপ্রাণ ঢেলে কাজ করলেও বক্স অফিসে সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হয়েছে তারকাবহুল বড় বাজেটের সিনেমাটি। এর কারণ জানতে চাইলে রাশমিকা বলেন, ‘ধানুশের সঙ্গে কাজ করতে চেয়েছিলাম। আর তাই এ সিনেমাটি করতে রাজি হয়েছিলাম।’ নিজের চরিত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘কখনো হতে হয় গীতাঞ্জলি (অ্যানিম্যাল), কখনো আবার শ্রীবল্লি (পুষ্পা); আবার কখনো এই চরিত্র। সত্যি বলতে এ ধরনের চরিত্রে আমি আগে কখনো অভিনয় করিনি। নিজেকে পুরোপুরি পরিচালকের কাছে সমর্পণ করেছিলাম, আর এখানেই সিনেমার আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে। প্রত্যেক পরিচালকের নিজস্ব দর্শন থাকে। আর তাই আমি এত ভিন্ন ভিন্ন আর মজার চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাই। আমি এ জন্য সবসময় কৃতজ্ঞ।’
সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কি ছিল? জবাবে রাশমিকা বললেন, ‘আবর্জনার স্তূপের মধ্যে আমি আর ধানুশ স্যার ৬-৭ ঘণ্টা শুট করেছিলাম। এই অভিজ্ঞতা আমাদের এক অন্য দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিল। আমাদের সবার চোখ খুলে দিয়েছিল। ভাগাড় মানে ডাস্টবিনের আসল লোকেশনে সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল ছয় ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। খুবই কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল। এই সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা দুর্দান্ত। আর প্রতিটি অভিজ্ঞতা তাকে নতুন কিছু শেখায়।’
২০১৬ সালে ‘ক্রিক পার্টি’ সিনেমা দিয়ে দক্ষিণী সিনেমায় যাত্রা শুরু করে ইতোমধ্যেই ৯ বছর পার করে দিয়েছেন শোবিজে। তামিল, তেলেগু; কান্নড় সিনেমার গ-ি পেরিয়ে এখন বলিউডের সিনেমা করছেন সমানতালে। তাকে নির্ভরযোগ্য অভিনেত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছে দক্ষিণী এবং বলিউডের নির্মাতারা।
রাশমিকাকে এখন ভারতীয় সিনেমার এক নম্বর অভিনেত্রী বলা হচ্ছে। এক নম্বর অভিনেত্রী হওয়ার চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সবে শুরু করেছি। তাই আমি এই এক নম্বর হওয়ার চাপ বুঝতেও পারছি না। আমি শুধু এটুকু জানি যে আমি এখনো শিখছি। আমি দক্ষিণ, বলিউড সর্বত্র কাজ করছি। এখনো অনেক কিছু শেখার বাকি আছে।’
সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে রাশমিকার তেলেগু সিনেমা ‘দ্য গার্লফ্রেন্ড’। রোমান্টিক আমেজের সিনেমাতে তার বিপরীতে রয়েছেন অপেক্ষাকৃত নবীন তরুণ এক অভিনেতা। ইতোমধ্যেই এ সিনেমার গান বেশ আলোড়ন তুলেছে। এখন পুরো সিনেমাটি দর্শক কতটা গ্রহণ করছে সেটাই হলো দেখার বিষয়।
প্রেম নাকি ছাইচাপা আগুনের মতো, চোখে দেখা না গেলে কী হবে; উত্তাপ ঠিকই টের পাওয়া যায়। ভারতের বড় পর্দার দুই তারকা রাশমিকা মান্দানা ও বিজয় দেবরাকোন্ডার ক্ষেত্রে এই কথা ঠিক মিলে যায়। দুজনে প্রেমের কথা এখনো স্বীকার করেননি। তবে কাছের মানুষ আর ইন্ডাট্রিতে এই জুটির প্রেম ‘ওপেন সিক্রেট’।
বিজয় দেবরাকোন্ডা জানিয়েছেন, তিনি প্রেম করছেন ‘এক সুন্দর হৃদয়ের নারী’র সঙ্গে। এদিকে, রাশমিকাকে যতবার বিজয়ের সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছে, মুখের অভিব্যক্তিই বলে দিয়েছে বাকিটা। ভক্তরাও পড়ে নিয়েছেন ঠিকই। সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাশমিকার কয়েকটি ছবি পাপারাজ্জিদের কল্যাণে ভাইরাল। সেখানে রাশমিকার বাঁ হাতের অনামিকায় শোভা পাচ্ছে হীরার আংটি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি গোপনে বাগদান সেরে ফেলেছেন এই জুটি? এবারও নীরব ভূমিকায় এই অভিনেত্রী।
এর আগেও ২০১৭ সালে একবার বাগদান হয়েছিল রাশমিকার। তার প্রথম সিনেমা ‘কিরিক-পার্টি’র সহ-অভিনেতা রক্ষিত শেঠির সঙ্গে। তবে বিয়েতে গড়ানোর আগেই ভেঙে যায় সম্পর্ক। এই নিয়ে দুজনের কেউ কখনোই টুঁ-শব্দটি করেননি। ২০১৮ সালে ‘গীতা গোবিন্দ’ সিনেমার সেট থেকেই প্রেম শুরু বিজয় ও রাশমিকার। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ডিয়ার কমরেড’ মুক্তির পর থেকে এই জুটি নিয়ে তুমুল ‘ক্রেজ’ তৈরি হয় ভক্তদের মধ্যে। গত সাত বছরে দুজনকে বিভিন্ন সময় দেখা গেছে একসঙ্গে, রেস্তোরাঁ, বিমানবন্দর অথবা অবকাশ যাপনে। এরপর থেকেই চর্চায় তারা।