রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

টাকা ছাড়া নড়ে না কেউ অতিষ্ঠ রোগী-স্বজন

রেজাউল করিম, রংপুর

প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৫, ১২:৫০ এএম

টাকা ছাড়া নড়ে না কেউ অতিষ্ঠ রোগী-স্বজন

উত্তরের দুই কোটি মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতাল। হাসপাতালে কাগজে-কলমে নিয়ম-নীতি থাকলেও তা মানাই হয় না। রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে মৃত্যুর পর মরদেহ বের করা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়। বছরের পর বছর এভাবে সিন্ডিটেকের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজন। এ অঞ্চলের মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এই হাসপাতালের লাগামছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের। রোগী আর তার স্বজনরা যেন এখানে অসহায়।

দিন কয়েক আগে রমেকে গিয়ে দেখা যায়, হৃদরোগে আক্রান্ত সংকটাপন্ন বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন গোলাম রাব্বানী। জরুরি বিভাগের সামনে এসে তাড়াহুড়া করে ভর্তির টিকিট কাটলেন। কাছেই দাঁড়িয়ে আছেন অন্তত পাঁচ যুবক। প্রত্যেকের হাতে স্ট্রেচার ট্রলি। কিন্তু কেউ রোগীকে তুলছেন না। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে প্রত্যেকে দাবি করেন ৫০০ টাকা। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থেকে আসা গোলাম রাব্বানী শেষ পর্যন্ত ৩০০ টাকা দিতে রাজি হয়ে বাবাকে ওয়ার্ডে নিয়ে যান।

রমেক হাসপাতালে এমন ঘটনা নতুন নয়। হাসপাতালের কাউন্টারে নাম ও রোগ লেখানোর পর্ব শেষ করে ভর্তি ফি ২৫ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা। ভর্তি শেষ হলে রোগীকে নির্দিষ্ট ওয়ার্ড বা কেবিনে নিতে হলে লাগবে স্ট্রেচার ট্রলি। কিন্তু সেখানেও ভোগান্তি। বাড়তি টাকা দিতে না চাইলে রোগীকে ফেলে রাখা হয় বাইরে। মিটমাট হলেই কেবল ট্রলিতে তোলা হয়। রংপুর বিভাগের দুই কোটি মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল এই হাসপাতালের এমন লাগামছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেই কর্তৃপক্ষের।

অভিযোগ রয়েছে, এত দিন হাসপাতালটি ছিল শুধু চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সিন্ডিকেটের দখলে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর তাদের সঙ্গে বাইরের কিছু মানুষ যোগ দিয়েছে। যুবদলের কয়েকজন নেতার প্রশ্রয়ে সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।

সম্প্রতি হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সে মায়ের মরদেহ নিয়ে উঠেছেন পীরগাছা উপজেলার আজিজার রহমান। পাশে পড়ে ছিল ওয়ার্ড থেকে মরদেহ বহন করে আনা স্ট্রেচার। এটি বহন করে আনা আয়া টাকা ছাড়া নড়বেন না। এদিকে মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়েও বাধে বড় বিপত্তি। ভাড়ার চেয়ে বেশি দাবি করে বসেন অ্যাম্বুলেন্সচালক। এত বাধা পেরিয়ে কী করে মায়ের মরদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরবেনÑ এ নিয়ে ভেবে শোকে স্তব্ধ আজিজার। পরে আয়াকে ২০০ টাকা দেন, আর অ্যাম্বুলেন্সচালককে সাড়ে তিন হাজার টাকায় রাজি করিয়ে মুক্তি পান। স্ট্রেচার নিয়ে ফেরার সময় প্রশ্ন করলে রাশেদা বেগম নামের ওই আয়া বলেন, ‘খুশি হয়ে ২০০ টাকা দিল লাশের লোক।’

আজিজার রহমান বলেন, ‘হাসপাতালে আসার পর থেকে পদে পদে খরচ করেছি। ঠিকমতো চিকিৎসা না পেয়ে মা মারা গেলেন। শেষে লাশ নিয়েও শুরু হলো ব্যবসা। বেড থেকে স্ট্রেচারে তুলতে দুই হাজার টাকা নেন হাসপাতালের লোক।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কর্মচারী সিন্ডিকেটের হোতা ছিলেন হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন ও সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান নয়ন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় দালালচক্রের অর্ধশতাধিক সদস্য কাজ করেন। নানা অপকর্মের কারণে সাময়িক বরখাস্ত হত্যা মামলার আসামি নয়ন এখন আত্মগোপনে। বর্তমানে সিন্ডিকেটে যুক্ত হয়েছেন হাসপাতালের ভেতর ও বাইরের অনেকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সাধারণ কর্মচারী জানান, আত্মগোপনে থাকলেও নয়ন সিন্ডিকেটের নেপথ্যে রয়েছেন। আউটসোর্সিংয়ে কাজ করে সিন্ডিকেটে রয়েছেন তার ভগ্নিপতি রতন ও ফুফাতো ভাই মুকুল। আরও রয়েছেন ওয়ার্ড মাস্টার হাসান ও মানিক। আছেন কর্মচারী ইউনিয়নের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক আব্রাহাম লিংকনের বড় ভাই নগরীর ধাপ এলাকার রায়হান এবং রাহাত। বর্তমানে এই সিন্ডিকেটের পাশে রয়েছেন যুবদলের কয়েকজন নেতা।

এ বিষয়ে রংপুর মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক নুরুন্নবী চৌধুরী মিলন বলেন, ‘আমার জানামতে, মেডিকেলের সিন্ডিকেটে যুবদলের কেউ নেই। তবে দলের কেউ ওইসব সিন্ডিকেটে যুক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি শাহিন এ কাজে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। ওয়ার্ড মাস্টার মানিক সিন্ডিকেটে যুক্ত নন দাবি করে বলেন, ‘সিন্ডিকেট আছে, তবে আগের তুলনায় তাদের দৌরাত্ম্য কমেছে।’
সিন্ডিকেটের হয়রানি থেকে বাদ যায়নি চিকিৎসক পরিবারও। রংপুর মেডিকেল কলেজের অর্থোসার্জারি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট এ বি এম রাশেদুল আমীর জানান, চিকিৎসার জন্য তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। রোগী ভর্তি ফি ২৫ টাকার জায়গায় দাবি করা হয় ৫০ টাকা। আইসিইউতে তার ব্যক্তিগত সহকারীর কাছে জোর করে ২০০ টাকা নেন কর্মরত দুই ব্যক্তি। ‘চিকিৎসকের মা’ পরিচয় দিলেও তারা ছাড় দেননি। এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ডা. রাশেদুল।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, হাসপাতালটির চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, ওষুধ, খাদ্য ও নির্মাণকাজের ঠিকাদারিসহ নানা বিষয়ে অনিয়মের খবর গণমাধ্যমে এলেও প্রতিকার মিলছে না।

জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘সমস্যা অনেক। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সব সমস্যার সমাধান তো চাইলেই সম্ভব নয়। সিন্ডিকেট নেই বলব না, তবে তাদের দৌরাত্ম্য আগের চেয়ে অনেক কমানো গেছে।’
 

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!