ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

বেপরোয়া গতির বাইক কাড়ছে তরুণদের প্রাণ

তিন মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০ তরুণের মৃত্যু

বিল্লাল হোসেন, যশোর
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ১০:৫১ পিএম

স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল তারা। কেউ পড়ছিল পলিটেকনিকে, কেউ ছিল ব্যবসায়ী, কেউ ঈদ আনন্দে বেরিয়েছিল বন্ধুর সঙ্গে। কিন্তু বেপরোয়া মোটরসাইকেলের গতি মুহূর্তেই কেড়ে নেয় প্রাণ। যশোর জেলায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার সংখ্যা।


মাত্র তিন মাসে অতিরিক্ত গতির মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যশোরে অন্তত ১০ তরুণ প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেকেই। এই দুর্ঘটনাগুলো শুধু ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়, সমাজজুড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে শোক, আতঙ্ক ও অসচেতনতার ভয়াবহ বার্তা।


সচেতন মানুষের অভিমত, তরুণদের কারণে সড়কে ভয়ংকর হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল। তাদের বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নিয়ম না মেনে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। যে কোনো উৎসবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। 


আসিফ হোসেন (১৭)। তাকে নিয়ে বাবা-মার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ছিল। কিন্তু মোটরসাইকেলের (বাইক) বেপরোয়া গতি কেড়ে নেয় তার প্রাণ। মুহূর্তেই পরিবারের স্বপ্ন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। গত ২৫ মে যশোর শহরের পালবাড়ির তেঁতুলতলায় সেই সড়ক দুর্ঘটনার স্মৃতি এখনো তার বাবা-মাকে কাঁদায়। আসিফ সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ঝাউদিয়া গ্রামের মেহের আলীর একমাত্র ছেলে ও যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের টেকনিক্যাল এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। 
গত ২৭ জুন দুপুরে উপজেলার নবীবনগর চারাতলা এলাকায় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে মোটরসাইকেলে আরোহী শিহাব শিকদার (২২) ঘটনাস্থলে মারা যায়। তিনি সদর উপজেলার দক্ষিণ নড়াইল গ্রামের জিল্লুর শিকদারের ছেলে। বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শিহাব শিকদার সড়কের ওপর আছড়ে পড়ে। এ সময় পেছন থেকে একটি ট্রাক তাকে পিষ্ট করে চলে যায়। তার মর্মান্তিক মৃত্যুত অনেকে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। 


গত ৬ জুন ঈদুল আজহার দিনে ফুলের রাজ্যখ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীতে ঘুরতে এসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় হৃদয় হোসেন (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়। সে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কুলুপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে এখনো ক্ষত বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে নিহত হৃদয়ের দুই বন্ধু। একই গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে আবু সাঈদ ও নলতার মাগুরী গ্রামের মনিরুল ইসলামের ছেলে নীরব হোসেন। ঈদুল আজহার নামাজ শেষ করে  তারা তিন বন্ধু মোটরসাইকেল করে ঘুরতে আসেন ফুলের রাজ্য পানিসারা-গদখালী এলাকায়। ঘোরাঘুরি শেষে বিকেলে তারা নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিল। পথিমধ্যে গদখালী রেললাইন এলাকার কাছে পৌঁছালে  মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বৈদ্যুতিক পিলারে আঘাত করেছিল। এর আগে গত  ৩০ এপ্রিল চুড়ামনকাটির দোগাছিয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চুড়ামনকাটি বাজারের তরুণ জুতা ব্যবসায়ী উজ্জ্বল নিহত হয়। তার মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা অসহায় হয়ে পড়েছে। 


যশোরের বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে, ১৫-২৫ বছর বয়সের মধ্যের যুবকেরা দ্রুত গতিতে মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যাচ্ছেন। কোনো কোনো তরুণ চালক আঁকাবাঁকা করেও চালাচ্ছে। আবার চলন্ত যানবাহনের সামনে দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত ঝুঁকি নিয়ে পার হয়ে যাচ্ছেন। এভাবে চলাচলের কারণে অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গেও ঘটছে মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চলতি মাসে ২৮ জন যুবক যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তি রেজিস্ট্রার খাতায় এই তথ্য জানা গেছে। 


যশোর ট্রাফিক পুলিশের ইনসপেক্টর মাহফুজর রহমান জানান, নিয়ম না মেনে মোটরসাইকেল চালানোদের দমন করতে যশোর শহর ও শহরতলীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দিন-রাত চেকপোস্ট বসানো হচ্ছে। নিবন্ধনবিহীন মোটরসাইকেল আটক করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এরপরও তরুণ মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে বিভিন্ন সড়কে দুর্ঘটনা বাড়ছে। তরুণদের দিকে আরও বাড়তি নজর রাখা হবে।