ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫

ভাঙনে বিপর্যস্ত জনজীবন

সাইফুল ইসলাম সানী, নালিতাবাড়ী (শেরপুর)
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২৫, ১১:৫৬ পিএম

ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা ভোগাই নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা। প্রতিনিয়ত নদীর পাড় ভেঙে তলিয়ে যাচ্ছে বসতবাড়ি, স্থাপনা ও ফসলি জমি। এতে আতঙ্কে দিন কাটছে এলাকার সাধারণ মানুষের। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নালিতাবাড়ী পৌর শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে নালিতাবাড়ী ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম খালভাঙা। পুরো গ্রামের পাশ দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে ভোগাই নদী। প্রতি বছরই নদীভাঙনের কবলে পড়তে হয় এই গ্রামের বাসিন্দাদের। খালভাঙা মসজিদ থেকে হাজি আবদুল মান্নানের বাড়ি পর্যন্ত আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রতি বছরই ভাঙন দেখা দেয়।


অন্যদিকে উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারপাড়া, সন্নাসীভিটা ও তারাবাড়ী এলাকায় গত কয়েক বছর ধরেই তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। আঙ্গারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কবরস্থান, একটি মসজিদ ও দুটি মন্দির নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।


গত কয়েক বছরের ভোগাই নদীর ভাঙনে ওই এলাকায় অন্তত ৬০টি বসতবাড়ি, দুটি মসজিদ ও প্রায় ৫০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।


নদীভাঙনের কারণে বসতভিটা হারানো অনেকে এখন আশ্রয় নিয়েছেন অন্যের জমিতে। কেউ কেউ পার্শ্ববর্তী এলাকা কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে উঠেছেন।


স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ভাঙন চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। কয়েকবার নদীর পাড়ে বালুর বস্তা ফেলা হলেও তা টেকসই হয়নি। ফলে ভাঙন থামেনি, বরং আরও তীব্র হয়েছে। তাই ভাঙন রোধে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তা না হলে আরও স্থাপনা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।


খালভাঙা গ্রামের হাজি আব্দুর মান্নান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে বহু পরিবার ভোগাই নদীর ভাঙনে সহায়-সম্বল হারিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। আমাদের জোর দাবি, মাটি বা বালু দিয়ে নয়, এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।’

আঙ্গারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমার চাচার বসতভিটা ছিল নদীর পাশে। এখন সেখানে পানি বইছে। নদী ধীরে ধীরে আমাদের ঘর পর্যন্ত চলে এসেছে।’


এ বিষয়ে শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ভোগাই নদীর ভাঙন পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা অবগত। এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত একটি প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। বাজেট পেলে শিগগিরই কাজ শুরু করা হবে।’