ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫

গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৭:০৪ এএম
  • খপ্পরে পড়ে দিশাহারা গ্রাহকরা
  • তালাবদ্ধ অফিস, লাপাত্তা কর্মকর্তারা
  • শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব গ্রাহক
  • ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরে গ্রাহকদের অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ‘নীলাচল শ্রমজীবী সমবায় সমিতি’ নামের একটি এনজিও শতাধিক গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে করে সমিতির খপ্পরে পড়ে দিশাহারা ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) বিভিন্ন দপ্তরে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা গতকাল বুধবার সকালে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সূত্র ও প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নীলাচল শ্রমজীবী সমবায় সমিত নামের একটি এনজিও রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকায় ২০২০ সালে গড়ে ওঠে। সমিতির ম্যানেজার মাইনুদ্দিন খান জয়, সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে মোহাম্মদ জিকু দায়িত্বে রয়েছে। এর মধ্যে মোহাম্মদ জিকু চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র ১ নম্বর ওয়ার্ডের সোলেমান মিয়ার ছেলে। এ কারণে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকাসহ আশপাশের এলাকার তিন শতাধিক গ্রাহক অন্তর্ভুক্ত হন। প্রথম অবস্থায় এলাকার কিছু গ্রাহককে ঋণ দিয়ে লোভ দেখানো হয়। পরে পর্যায়ক্রমে গ্রাহকরা এফডিআর, সঞ্চয় ও বিভিন্নভাবে সমিতিতে টাকা গচ্ছিত রাখতে শুরু করেন।

এলাকায় পরিচিত হিসেবে মো. জিকু এসব টাকার দায়িত্ব নেন গ্রাহকদের কাছ থেকে। বেশ কিছুদিন আগে সমবায় সমিতি অফিস তালাবদ্ধ করে প্রতারক মো. জিকু, মাইনুদ্দিন খান জয় ও মো. সবুজসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালিয়ে যান। পরে সমিতির অফিস তালাবদ্ধ দেখে দিশাহারা হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও পালিয়ে যাওয়া প্রতারকদের সন্ধান পাননি তারা।

চানপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভুক্তভোগী মোহাম্মদ শাহিন জানান, দৈনিক সঞ্চয় হিসেবে ১ লাখ ২৪ হাজার, এফডিআর বইয়ে এককালীন ৫ লাখ টাকা, স্ত্রীর সঞ্চয় বই হিসেবে ৭৩ হাজার টাকা, মায়ের কাছ থেকে এফডিআর বই এককালীন ৫০ হাজার টাকা মিলে সর্বমোট ৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা সমিতিতে জমা করেন। প্রতারক শিকুর বাবা-ভাইসহ পরিবারের লোকজন এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের কাছ থেকে পাওনা টাকা চাইতে গেলে অপহরণ মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। শেষ সম্বল সমিতিতে জমা করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তারা। জমা করার টাকা ফেরত চান তিনি।

আলামিন মিয়ার স্ত্রী সৌদিপ্রবাসী তাসলিমা বেগম জানান, মাসিক মুনাফার ভিত্তিতে এই সমিতিতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা রাখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে টাকা নিয়ে সমিতির অফিস তালাবদ্ধ করে প্রতারকরা পালিয়ে যায়। বর্তমানে টাকা হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন তিনি। সন্তানদের পড়ালেখা ও পরিবারের দৈনন্দিন জীবন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ঈুনর্বাসন কেন্দ্র এলাকার চৈতি আহম্মেদ মুন্নি জানান, ওই সমিতিতে ‎এফডিআর বাবদ এককালীন ৫ লাখ রাখা হয়েছে এবং দৈনিক দুটি বইয়ের ৪০০ টাকা করে ২ বছর সঞ্চয় জমা করে আড়াই লাখসহ মোট সাড়ে সাত লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন সমিতির অফিস তালাবদ্ধ। আমরা দ্রুত টাকা ফেরত চাই। যারা এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িত তাদের কঠোর শাস্তি চাই।

ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, খেয়ে না খেয়ে টাকা গচ্ছিত রেখেছিলাম সমিতিতে। আর সেই টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে প্রতারকরা। তারা কি মরণকে ভয় পায় না। আল্লাহ তাদের বিচার করবে!

এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য বারবার অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

উপজেলা সমবায় বিষয়ক কর্মকর্তা আলমগীর আজাদ ভূঁইয়া বলেন, ৭০ জন গ্রাহকের প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন। হয়তো প্রতারণার শিকার হয়েছেন এমন গ্রাহক আরো থাকতে পারে। আমরা এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ইউএনও সাইফুল ইসলাম বলেন, নীলাচল শ্রমজীবী সমবায় সমিতি নামের একটি সমিতি তালাবদ্ধ করে গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি সমবায় কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।