ঢাকা শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৫

সংস্কার হয়নি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৮৪ বিদ্যালয়

ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৫, ২০২৫, ০৩:১৯ এএম

** ফেরত গেল সাড়ে ১২ কোটি টাকা

২০২৪ সালে ফেনীতে বন্যায় ৩১৪টি ক্ষতিগ্রস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ও সরঞ্জাম সংস্কারের জন্য ১২ কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার ৮১২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ৩০টি বিদ্যালয়ের ভবন মেরামতে ৩১ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৪ টাকা ব্যয় হলেও বাকি ২৮৪টি বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কারের জন্য ১২ কোটি ৬৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৭৮ টাকা কাজ না হওয়ায় ফেরত চলে যায়।

এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পাঠদান উপযোগী করতে বরাদ্দ আসার পূর্বেই শিক্ষকরা ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ব্যয় করেছেন। এখন ওই টাকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন শিক্ষকরা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল বরাদ্দ পাওয়ার পর সময়মত ২৮৪ বিদ্যালয়ের সংস্কার কার্যক্রম শুরু না করায় অর্থ ফেরত চলে যায়। ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচে বরাদ্দ পাওয়া ৩০টি বিদ্যালয় মেরামতের কাজ সম্পন্ন করেছে। ২৮৪টি বিদ্যালয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার অধিক বরাদ্দ পাওয়ায় মেরামতের কাজের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা উপজেলা প্রকৌশলীকে পত্র প্রেরণ করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় উপজেলা প্রকৌশলী মেরামত কাজে অনীহা প্রকাশ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২৮৪টি বিদ্যালয়ের বরাদ্দকৃত টাকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ফেরত চলে যায়। সময়মতো টেন্ডার আহ্বান না করার কারণে প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফেনীতে ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১১৫টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ৫ কোটি ২ লাখ ২৬ হাজার ৫১৪ টাকা বরাদ্দ আসে। ৫টি বিদ্যালয় ৫ লাখ ৬২ হাজার ১৫৯ টাকা মেরামতকাজে ব্যয় করেছে এবং ১১০টি বিদ্যালয়ের মেরামত ও সংস্কারে ৪ কোটি ৯৬ লাখ ৬৪ হাজার ৩৫৫ টাকা ফেরত চলে গেছে।

দাগনভূঞা উপজেলায় ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে গত বছরের বন্যায় ১৬টি বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রসহ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরামতের জন্য ৭৬ লাখ ১১ হাজার ৯৬০ টাকা বরাদ্দ আসে। মেরামতের কাজ বাস্তবায়নের জন্য দাগনভূঞা উপজেলা প্রকৌশলীর কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত চলে যায়।

সোনাগাজী উপজেলায় ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০২টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ২ কোটি ৮৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৪১ টাকা বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে ২৫টি বিদ্যালয় ২৬ লাখ ১১ হাজার ১৭৫ টাকা মেরামত কাজে ব্যয় করেছে। ৭৭টি বিদ্যালয়ের মেরামতের জন্য বরাদ্দকৃত ২ কোটি ৫৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৬৬ টাকা ফেরত চলে যায়।

ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৭৮টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৬৫টি বিদ্যালয় মেরামতের জন্য ৩ কোটি ৫১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৭৮ টাকা, পরশুরাম উপজেলায় ৭টি বিদ্যালয়ের জন্য ২৯ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং ফুলগাজী উপজেলায় ৯টি বিদ্যালয়ের জন্য ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার ৫৪৬ টাকা ফেরত চলে যায়।

ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকরা জানান, সময় কম থাকায় এই বরাদ্দ কাজে লাগানো যায়নি। এতে বিদ্যালয়গুলো পাঠদানের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে নিজ পকেটের টাকা খরচ করে জরুরি সংস্কারকাজ করেছেন, যা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা বলেন, বরাদ্দ বাস্তবায়নে দরপত্র করার মতো সময় ছিল না বলেই অর্থ ফেরত গেছে। তবে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তাই আগামী অর্থবছরে পুনরায় বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মেদ বলেন, গত অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে এই বরাদ্দ আসে। সময় কম থাকায় অর্থ ব্যয় সম্ভব হয়নি। যদি বছরের শুরুতে বরাদ্দ আসত, তবে তা সংস্কারে ব্যবহৃত হতো।

তিনি আরও জানান, দেড় লাখ টাকার কম বরাদ্দ হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরাসরি খরচ করতে পারে, এর বেশি হলে উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে ব্যয় করতে হবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদ আল ফারুক প্রাথমিক বিদ্যালয় মেরামত ও সংস্কারকাজের বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। তার সাথে কেউ যোগাযোগ করেননি। এ বিষয়ে বরাদ্দ ফেরত যাওয়ার বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তা জানেন।