চুয়াডাঙ্গা জেলার একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড। কেরু চিনিকলের বাণিজ্যিক কৃষি খামারগুলোয় আঁখ উৎপাদনের পাশাপাশি অলস পড়ে থাকা জমি লিজ (বর্গা) ও নিজে চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে কোম্পানিটি। সেই সঙ্গে এলাকার দরিদ্র ও দিনমজুরদের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন কেরু বাণিজ্যিক কৃষি খামারে দেখা যায়, দর্শনা কেরুজ চিনিকলের ডিহি কৃষি খামারের উৎপাদিত আঁখ দিয়ে কেরু চিনি উৎপাদনের পাশপাশি অলস পড়ে থাকা জমি লিজ দিয়েছে। এ ছাড়া বিনা ও বিএডিসির সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফসল চাষ করেছেন। এসব ফসল থেকে আর্থিভাবে লাভবানও হচ্ছে কোম্পানিটি।
ডিহি খামার ইনচার্জ মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ খাদ্য ও চিনি করপোশনের একমাত্র লাভজনক প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ডিহি কৃষি খামার। খামারে ৪১৮ একর জমি রয়েছে। তার মধ্যে ২০২৫-২৬ মাড়াই মৌসুমে যে আঁখ আছে, সেটার পরিমাণ ৩০৬ একর। বাকি যে আসল জমি আছে তার মধ্যে ৪৮ একর জমি এলাকার স্বল্প মেয়াদি কৃষকদের কাছে লিজ দিয়েছে। আর ১২ একর বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) সঙ্গে যৌথভাবে আমরা আউশের বীজ ধান উৎপাদন করছি।
বিনার সঙ্গে আমরা ২ একর জমিতে পরীক্ষামূলক হলুদের চাষ করেছি। ৮ একর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার চাষ আছে এবং ৪ একর জমিতে আমন ধান আছে। সবকিছু মিলিয়ে যথাসময়ে জমির সুষ্ঠু ব্যবহার করে খামারকে লাভবান করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। এ বছর আমরা ১০০ একর পাট বীজ উৎপাদন করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। বিনা ও বিএডিসির সহযোগিতায় আমরা পাট বীজ উৎপাদন করব। আমরা যদি ১০০ একর জমিতে পাট বীজ উৎপাদন করতে পারি, তাহলে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হবো।’
তিনি আরও বলেন, খামারে বছরে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের সঙ্গে ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করে। এসব শ্রমিক খামারের আশপাশের সাধারণ নিম্নবৃত্তের মানুষ। শ্রমিকরা কেরুর চিনিকলে উৎপাদনে সহযোগিতার পাশপাশি সারা বছর কাজ হওয়ায় এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
এ বিষয়ে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির খামার ইনচার্জ সুমন কুমার সাহা বলেন, ‘আমাদের কৃষি খামারে ৩ হাজার ৫৫ একর জমি রয়েছে। তার মধ্যে আমরা ২ হাজার ৩৫০ একর জমিতে চাষাবাদে ব্যবহার করে থাকি। এ জমির ৩ ভাগের দুই অংশ আঁখ চাষের জন্য ও বাকি এক অংশ আগাম আঁখ চাষের জন্য রাখতে হয়। বাকি যে জমি রয়েছে, তার প্রায় ৬০০ একর পতিত বা অলস থাকে। তবে দেশের ও উৎপাদনের স্বার্থে এসব জমি স্বল্প মেয়াদে লিজ দিয়েছি। বিশেষ করে বিএডিসি ও বিনার আওতায় বিভিন্ন ফসলের বীজ উৎপাদন করার কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। আবার এসব জমির মধ্যে কিছু জমি এলাকার কৃষকদের কাছে লিজ দিয়ে প্রায় ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা আয় করেছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে অলস জমি থেকে ১ কোটি টাকার বেশি আর্থিকভাবে কেরু লাভ করেছে।
কেরু চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, ‘বীজ উৎপাদনের জন্য আমরা এরই মধ্যে ১০০ মণ পাট বীজ কিনেছি। বীজ উৎপাদন ঘিরে যে কর্মযোগ্য পরিচালিত হবে, তা থেকে এলাকার মানুষ আর্থিকভাবে লাভবান হবে এবং আগামীতে বাইরে থেকে তাদের পাট বীজ আমদানি করতে হবে না।’