ভোলায় চলতি মৌসুমে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ায় আখ বিক্রি করে বেশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার সাত উপজেলায় সর্বমোট ৫১৮ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ২৫ হাজার টন। কিন্তু এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এরমধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, দৌলতখান উপজেলায় ২৫ হেক্টর, বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ১৪০ হেক্টর, তজুমদ্দিন উপজেলায় ৩৫ হেক্টর, লালমোহন উপজেলায় ৫০ হেক্টর, চরফ্যাশন উপজেলায় ২১৮ হেক্টর এবং মনপুরা উপজেলায় ১৪ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়। এসব জমিতে সর্বমোট ২৪ হাজার ৩৪৬ টন আখ আবাদ হয়েছে। এ বছর হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪৭ টন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকের বিস্তীর্ণ ফসলের খেতে আখের সমারোহ। আখ কাটা, সংগ্রহ আর বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে আখ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। জেলায় প্রায় প্রায় ৩৫ ভাগ জমির আখ কাটা হয়েছে। তবে পাইকারি বাজারে আখের দাম কম হলেও খুচরা বাজারে আখের দাম অনেক বেশি। আর গত বছরের তুলনায় এবার বাজার দর বেশি থাকায় লাভবান হচ্ছে কৃষকরা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার আখ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়।
কৃষকেরা জানান, ভোলার মাটি ও আবহাওয়া আখ চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানে আখ চাষের বাড়ছে। গত বছর একশ আখ মানভেদে বিক্রি হয়েছে দেড় হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। এ বছর সেই আখ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫শ টাকা পর্যন্ত।
ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, তিনি চলতি মৌসুমে ২৪ শতাংশ জমিতে আখের চাষ করেছেন। এতে করে তার খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। আশা করছেন ৭০-৭৫ হাজার টাকার আখ বিক্রি করতে পারবেন। ইতোমধ্যে তার আখ বিক্রি শুরু হয়েছে।
একই গ্রামের অপর চাষি ইয়াছিন মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত অখের বাজার দর ভালো রয়েছে। ব্যাপরীরা তাদের খেত থেকে আখ কিনে নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত যদি বাজার এমন থাকে তবে তাদের বেশ ভালো হবে।
ব্যাংকের হাট বাজারের খুচরা আখ বিক্রেতা মো. হোসেন মিয়া বলেন, এ বছর আখের ফলন ভালো থাকায় বাজারে সরবরাহ বেশি। কেনা-বেচাও ভালো হচ্ছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খায়রুল ইসলাম মল্লিক বলেন, জেলায় সর্বমোট ৫১৮ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় প্রায় ২৫ হাজার টন। এ বছর হেক্টর প্রতি উৎপাদন হয়েছে ৪৮ টন।
তিনি আরও বলেন, ফলন ভালো হওয়ায় আখ আবাদে কৃষকদের আগ্রহ অনেক বেড়ে গেছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ অনেক বেশি হয়েছে। আখের ফলন অনেক ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে মিষ্টি হাসি ফুটেছে। কৃষকদের জন্য ৫০ শতাংশ জমির অনকূলে প্রায় ৫০টি আখের প্রদর্শনীর ব্যাবস্থা রাখা হয়েছে এ বছর।
বর্তমানে মাঠে আখের অবস্থা বেশ ভালো রয়েছে। কৃষকরা আখ চাষে লাভবান হচ্ছে। অনেক কৃষকই আখ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আগামী এক মাসের মধ্যে শতভাগ জমির আখ কর্তন হবে। সবকিছু ঠিক থাকায় জেলায় আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।