সরকারি বরাদ্দের জন্য বহুবার দৌড়ঝাঁপ করেও ফল মেলেনি। বরাদ্দ এসেছে কিন্তু কাজ হয়নি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর সাতপোয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে বাসিন্দারা নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করছেন রাস্তা।
এলাকার তরুণ আব্দুল্লাহ আল বাশার বিপুল এর নেতৃত্বে দাসের বাড়ি থেকে জিগাতলা মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় এক মাস ধরে এই কাজ চলছে। রাস্তা নির্মাণে প্রায় ৫০-৬০টি পরিবার জমি ও মাটি দান করেছে। স্থানীয়দের আশা, কয়েক দিনের মধ্যেই রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ হবে।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, এই রাস্তা দিয়ে অন্তত পাঁচ-ছয়টি গ্রামের হাজারো মানুষ চলাচল করতে পারবে। আগে ক্ষেতের আইল ধরে চলাচল করতে হতো, যা বর্ষায় হয়ে উঠত ভীষণ দুর্ভোগের। শিশু, নারী ও প্রবীণদের জন্য পা পিছলে পড়ার ঘটনা ছিল নিয়মিত।
প্রধান উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল বাশার বিপুল বলেন, “সরকারি বরাদ্দের জন্য বহুবার ঘুরেছি, কিন্তু কাজ হয়নি। তখনই সিদ্ধান্ত নিই নিজেরাই করব। এলাকার মানুষ আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। সবাই জমি দিয়েছে, টাকা দিয়েছে, শ্রম দিয়েছে। আমরা ভেকু ভাড়া করেছি। আশা করি, ভবিষ্যতে সরকার এটিকে পাকা করে দেবে।’
জমিদাতা ও সমাজসেবক মোজাম্মেল সোনারু বলেন, ‘এলাকার প্রয়োজনের জন্য মানুষ এক হয়েছে। সবাই স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছে। এই উদ্যোগ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সরকারের দায়িত্ব থাকলেও জনগণ দেখিয়েছেÍআমরাও পারি।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক আকুল মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর ইউনিয়নে বরাদ্দ আসে, কিন্তু আমাদের এলাকায় কোনো কার্যক্রম দেখা যায় না। এসব বরাদ্দ কোথায় যায়, তা এখন প্রশ্ন।’
৬৫ বছর বয়সি প্রবীণ মোজা মিয়া বলেন, ‘জন্ম থেকে কষ্ট করেই এই রাস্তায় চলাচল করছি। এবার নিজেরাই কাজ শুরু করেছি। সরকার বরাদ্দ দিলে যেন তা শুধু কাগজে না থাকে, বাস্তবে হয়।’
স্থানীয় শিক্ষার্থী আসাদ, সুমন ও জাকারিয়া জানান, “বৃষ্টির দিনে স্কুলে যেতে পারতাম না। কাপড় ভিজে যেত, পড়াশোনার ক্ষতি হতো। রাস্তা হলে শুধু আমাদের নয়, বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাওয়া সহজ হবে।”
এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহছেন উদ্দিন বলেন, ‘এলাকাবাসীর প্রয়োজনে নিজ উদ্যোগে রাস্তা নির্মাণ ইতিবাচক উদ্যোগ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের উদ্যোগ দেখা যায়। সরকারের সামর্থ্য অনুযায়ী পরবর্তীতে রাস্তাটি স্থায়ীভাবে নির্মাণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’