ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

আড়াই লাখ চারাগাছের আড়াই হাজারও নেই!

রেজাউল করিম, রংপুর
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫, ০৬:৫২ এএম
রংপুর

 

  • ২০১৬ সালে ১ ঘণ্টায় আড়াই লাখ গাছ লাগানোর দাবি
  • ৯ বছর পর সেই গাছের অস্তিত্ব নেই, হাতে গোনা কয়েকটি টিকে আছে
  • অভিযোগ, গাছ লাগানোর নামে সরকারি টাকা লুটপাট

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর হাতে নেওয়া হয় ব্যতিক্রমী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ‘সবুজ তারাগঞ্জ গড়ি’। মাত্র ১ ঘণ্টায় পাঁচ ইউনিয়নের ১৫৩টি সড়কের দুই পাশে আড়াই লাখ গাছের চারা রোপণের উদ্যোগকে ঘিরে সেদিন পুরো উপজেলা উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ৯ বছর পর সেই সবুজ স্বপ্ন এখন প্রায় বিলীন। রোপণ করা গাছের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

সম্প্রতি রাস্তার পাশে বেঁচে থাকা কিছু গাছ সংঘবদ্ধভাবে কেটে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দাবি, পরিবেশ রক্ষার কথা বলে ব্যাপক প্রচারণায় যে গাছ লাগানো হয়েছিল, তা রক্ষায় প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ ছিল না। এখন লুটেপুটে খাওয়া হচ্ছে অবশিষ্ট গাছও।

বাংলার চোখ সামাজিক সংগঠনের চেয়ারম্যান তানভীর আশরাফি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পরিবেশ রক্ষায় যেখানে গাছের বিকল্প নেই, সেখানে প্রশাসনের নীরব সহযোগিতায় গাছ লুট হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।’

রংপুরের জেলা প্রশাসক রবিউল ফয়সাল বলেন, ‘আমি জেলায় যোগ দেওয়ার পর বিষয়টি জেনেছি। উপজেলা প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

তৎকালীন ইউএনও জিলুফা সুলতানার নেতৃত্বে ৪০ প্রজাতির ফুল, ফল ও ভেষজগাছ রোপণের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, কথিত আড়াই লাখ চারা লাগানো হলেও প্রকৃত সংখ্যা ছিল অনেক কম। লাগানো গাছেরও পরিচর্যা হয়নি, ফলে শুকিয়ে গেছে বা পশুর আক্রমণে নষ্ট হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের শলেয়া শাহ বাজার থেকে আলমপুর বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এলাকায় ৪৩ হাজার গাছ লাগানোর কথা থাকলেও বর্তমানে হাতে গোনা কয়েকটি গাছই টিকে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, বৃক্ষরোপণের নামে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কোনো টেন্ডার ছাড়াই স্থানীয় নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করা হয়। রোপণের পর সেচ, আগাছা পরিষ্কার বা বাঁশের খুঁটি রক্ষণাবেক্ষণের কার্যকর ব্যবস্থা ছিল না। স্থানীয় শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শুরুর উদ্যোগ প্রশংসনীয় ছিল। কিন্তু পরিচর্যার অভাবে সব ধ্বংস হয়ে গেছে।’

বর্তমান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী রায় বলেন, ‘এটি ২০১৬ সালের ঘটনা। আমি তখন এখানে কর্মরত ছিলাম না, কোথায় কোথায় গাছ লাগানো হয়েছিল তাও আমার জানা নেই।’

উপজেলা বন কর্মকর্তা আখতারুজ্জামান খান বলেন, ‘শুধু গাছ লাগালেই হবে না, লাগানোর পর পরিচর্যা করতে হবে। আড়াই লাখ গাছ লাগানোর পর কোনো রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি।’

বর্তমান ইউএনও রুবেল রানা জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তৎকালীন ইউএনও জিলুফা সুলতানা মোবাইল ফোনে বলেন, ‘গাছ লাগিয়েছিলাম, কিন্তু দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল স্থানীয়দের। কত টাকা খরচ হয়েছিল তা আমার মনে নেই।’