ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রাবিতে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ চান সাবেক সমন্বয়ক ও ছাত্রদল নেতারা

মাইনুল ইসলাম রাজু, রাবি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫, ১১:৪১ পিএম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ চান সাবেক সমন্বয়ক ও শাখা ছাত্রদলের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা। ইতোমধ্যে আজ বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) তারা উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন।

আবেদনপত্রে নেতারা বলেছেন, বিগত ‘ফ্যাসিস্ট শাসনামলে’ রাজনৈতিক হয়রানি ও কারাবরণের কারণে তারা সুষ্ঠুভাবে মাস্টার্স শেষ করতে পারেননি। এ জন্য তারা দ্বিতীয়বার মাস্টার্সের সুযোগ চান।

দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ চেয়ে আবেদন করা নেতারা হলেন: শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী, সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক, সিনিয়র সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার শেখ ও সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বিতীয়বার মাস্টার্সের জন্য ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ভর্তির আবেদন করেছেন ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার শেখ।

তবে ফোকলোর অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তির আবেদন করেছেন সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী, সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিক ও সিনিয়র সহসভাপতি শাকিলুর রহমান সোহাগ।

অন্যদিকে, সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না আবেদন করেছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। তারা সকলেই উপাচার্য বরাবর করা এই আবেদনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতিকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন।

জানা গেছে, ফোকলোর অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বিএনপি-সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (ইউট্যাব) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক।

দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির জন্য দেওয়া আবেদনপত্রে নেতারা উল্লেখ করেছেন, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তারা নিয়মিত মাস্টার্সে ভর্তি হতে পারেননি। এ প্রেক্ষাপটে তারা সংশ্লিষ্ট বিভাগে ভর্তি হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।

আবেদনপত্রে আবেদনকারী এক নেতা লিখেছেন, ‘ছাত্রজীবনে আমি বারবার ফ্যাসিবাদী শাসনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছি। সেই কারণে আমি কয়েকবার জেল খেটেছি, বারবার আহত হয়েছি, একাধিক মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলার আসামি হয়েছি এবং সর্বশেষ জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেছি।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী হিসেবে আমি অ্যাকাডেমিক চর্চার পাশাপাশি মুক্তচিন্তা, গণতান্ত্রিক চর্চা ও সমাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়ে গবেষণাকে সমৃদ্ধ করতে পারবো। আমাকে বিশেষ বিবেচনায় ওই বিভাগে এমবিএ (মাস্টার্স)-এ ভর্তির সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

এ বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুষার শেখ বলেন, ‘আমি এখনও আবেদন করিনি। তবে আবেদন করার ইচ্ছা আছে।’

আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সর্দার জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কয়েকজন নেতাকর্মী আজ উপাচার্যের কাছে আবেদন করেছি। তবে আমাদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। বিষয়টি আগামীকাল জানানোর আশ্বাস দিয়েছেন উপাচার্য।’

আরেক আবেদনকারী ও সাবেক সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুন্না বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনামলে সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। উপাচার্য দায়িত্ব নেওয়ার ৫ মাসের ভেতরে রাকসু দেওয়ার কথা ছিল, তবে সেটা ১১ মাস পরে হচ্ছে। আমার গত ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে।’

‘এতে নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আমরা ২০১৭/১৮ বর্ষের শিক্ষার্থীরা রাকসুতে অংশ নিতে চাই। এ বিষয়ে দ্বিতীয়বার মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দিতে পারে এ জন্য আমি একটি আবেদন করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফোকলোর বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আসন্ন রাকসু নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে আমরা কয়েকজন শিক্ষক উপাচার্যকে দ্বিতীয়বার মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ প্রদান করতে অনুরোধ করেছি। এই প্রেক্ষাপটে কয়েকজন শিক্ষার্থী নৃবিজ্ঞান, ইতিহাস, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটিসহ আমার বিভাগেও আবেদন করেছেন।’

‘যারা আবেদন করেছেন আমরা তাদের সুপারিশ করেছি। কারণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ডাবল মাস্টার্সের সুযোগ আছে। এখন উপাচার্য বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী বিবেচনা করবেন এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

তবে বিষয়টি জানতে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাজেদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, ‘আমি চার জন ছাত্রদল নেতার দ্বিতীয়বার মাস্টার্স করতে চেয়ে করা আবেদন পেয়েছি। আবেদনগুলো গ্রহণ করা হয়েছে।’

তবে তাদের আবেদনগুলোর প্রেক্ষিতে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে কিনা সে বিষয়ে কিছু বলেননি।