অবৈধভাবে গাছ কর্তন, অগ্নিসংযোগ, দখল, বালু উত্তোলন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে দিন দিন উজাড় হয়ে যাচ্ছে বরগুনার তালতলী উপজেলার টেংরাগিরি বন। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি।
বন বিভাগ ও পরিবেশ কর্মীদের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে জোয়ারের সঙ্গে সৈকতে বালির স্তূপ জমে গাছের শিকড় আটকে মারা যাচ্ছে। তবুও সরকারের আশানুরূপ কোনো প্রকল্প বা কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
সোনাকাটা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানান, সংরক্ষিত এ বনের দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য দেখতে তারা ছুটে আসেন। গেওয়া, কেওড়া, ছইলা, ঝাউবনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এ বনকে সমৃদ্ধ করেছে। তবে প্রভাবশালী ও দুষ্কৃতকারীদের দখল-লোভে বনটির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের পানির স্তর ক্রমেই বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেশি করে গাছ লাগানো জরুরি। বনায়নের নতুন প্রকল্প ছাড়া বিকল্প নেই।’
কুয়াকাটার পরিবেশকর্মী ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকতের দুই প্রান্তজুড়ে যে বন, তা শুধু সৌন্দর্য নয়, পরিবেশ রক্ষায়ও বিশাল ভূমিকা রাখে। অথচ এই বনকে ইচ্ছাকৃত অগ্নিসংযোগ ও গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে। বনপ্রহরী, পর্যটন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের একসঙ্গে সক্রিয় হতে হবে।’
বরগুনার তালতলী থেকে কুয়াকাটা সৈকত পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্বাসমূলীয় বন টেংরাগিরি বা ফাতরার বন। ১৩ হাজার ৬৪৪ একর আয়তনের এ বন বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে দ্রুত বিলীন হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ৬২ বছরে প্রায় ২ হাজার একর জমি ও কয়েক লক্ষাধিক গাছ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে।
এ ছাড়া সৈকতসংলগ্ন ঝাউবনও এখন বিলুপ্তির পথে। অবৈধ বালি উত্তোলন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণকাজের কারণে অনেক ঝাউগাছ ভেঙে সাগরে বিলীন হয়েছে। যদিও বন বিভাগ বিভিন্ন সময়ে চারা রোপণ করেছে, কিন্তু সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় তা টিকছে না। তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রোকনুজ্জামান খান বলেন, ‘ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। আশা করি দ্রুত তা বাস্তবায়ন হবে।’