ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ভারতের বাধায় আটকে আছে হাজার কোটি টাকার প্রকল্প

মুজিবুর রহমান রঞ্জু, মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৪৬ এএম

*** মনু নদের ঝুঁকিপূর্ণ তীররক্ষা বাঁধ
*** কাজের অগ্রগতির উদ্যোগ না নেওয়ায় স্থানীয়দের ক্ষোভ
*** বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে কুলাউড়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ
*** এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ
*** ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে: জেলা প্রশাসক

মৌলভীবাজারকে বন্যা থেকে রক্ষা করার জন্য তিনটি প্যাকেজে ১ হাজার ৪৫০ মিটার মনু নদের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ও তীর রক্ষায় প্রায় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও সীমান্তবর্তী নো ম্যানস ল্যান্ডে ভারতের আপত্তির কারণে ৫ বছর ধরে কাজ আটকে আছে।

এতে করে জেলার কুলাউড়া উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সরকারিভাবে এই কাজের অগ্রগতির কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা দ্রুত কাজটি শেষ করার দাবি জানান।

জানা যায়, ২০২০ সালে ৯৯৬ কোটি ২৮ লাখ টাকার এই বৃহৎ প্রকল্পটি একনেকের সভায় অনুমোদন হয়। ২০২১ সালে কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। যথাসময়ে শেষ না হওয়ায় ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এ পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৫৮ শতাংশ। তবে ভারতের বাধায় জেলার কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের তেলিবিল, বাগজুর ও নিশ্চিন্তপুর এলাকার নো ম্যানস ল্যান্ড এলাকার কাজ বন্ধ রয়েছে।

সরজমিনে তেলিবিল এলাকার নো ম্যানস ল্যান্ড এলাকায় গিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের অংশে বাঁধ ভেঙে স্থানীয়দের ঘরবাড়ির কাছে চলে এসেছে। নদের পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধ উপচে পানি বাইরে আসে। এই এলাকায় ৬৫০ মিটার বাঁধ ব্লক দিয়ে কাজ করার কথা রয়েছে। কাজ করার জন্য পাশেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্লক তৈরি করে রেখেছে দুই বছর আগে। তবে উভয় দেশের যৌথ নদী কমিশন এ সমস্যার কোনো সমাধান না করায় কাজ বন্ধ আছে। ভারতের দাবি, মনু নদের মধ্যখানে সীমানা পিলার রয়েছে। বাংলাদেশ অংশে অবৈধভাবে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বর্ষায় মনু নদে পানি বাড়লে উত্তর ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার কৈলাশহরে বানের পানি প্রবেশ করবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারতীয়রা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কংগ্রেসের নেতৃত্বে  কৈলাশহরে বেশ কয়েক দফা সড়ক অবরোধ, প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।

তেলিবিলের পাশেই রয়েছে বাগজুরে ৩০০ মিটার নো ম্যানস ল্যান্ড; সেখানেও বাংলাদেশ অংশ ভেঙে গেছে। এ ছাড়া নিশ্চিন্তপুরে ৫০০ মিটার কাজ হওয়ার কথা। এই কাজ একবার টেন্ডার দিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে আবার টেন্ডারের প্রক্রিয়া চলছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েছেন। তবে কোনো সমাধান পাননি।

তেলিবিল এলাকার আরিফ আলী বলেন, ‘নদের পানি বৃদ্ধি পেলে আমরা অনেক আতঙ্কে থাকি। বাঁধের পাশে ঠিকাদার বছরখানেক আগে দুই গাড়ি ব্লক এনে রেখেছেন। শুনেছি ভারতীয়রা দাবি করেছে নদের মাঝখানে উভয় দেশের সীমানা, এ জন্য কাজ করতে দিচ্ছে না। বাস্তবে তাদের সীমানা অনেক দূরে। নদ থেকে কাঁটাতারের বেড়া দূরে আছে। এই বাঁধ মেরামত করা না হলে নদের পানি বৃদ্ধি পেলে বাঁধ ভেঙে যাবে।

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, তারা দুই বছর ধরে ব্লক তৈরি করে রেখেছে। কাজ না করায় তাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জেলার সবচেয়ে বড় মনু নদের বন্যা আর ভাঙন থেকে জেলার সদর, রাজনগর ও কুলাউড়া উপজেলার প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতের জন্য প্রায় ৯৯৬ কোটি টাকার এই বৃহৎ প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এই প্রকল্প ৭০টি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। কাজের প্রায় ২০ জন ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। নো ম্যানস ল্যান্ডে চারটি কাজ ছিল। এর মধ্যে দত্তগ্রামের কাজ শেষ করা হয়েছে। বাকি তেলিবিল, বাগজুর ও নিশ্চিন্তপুরে কাজ করা যাচ্ছে না।

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ পাভেল বলেন, মনু নদের এই অংশটুকু আমার দায়িত্বে। এটা জয়েন্ট রিভার কমিশনারের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে। দত্তগ্রাম নামে একটি পয়েন্টে কাজ শেষ করেছি। আরও তিনটি পয়েন্ট কাজের বাকি রয়েছে।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. খালেদ বিন অলীদ বলেন, ‘মনু নদের বাঁধ মেরামতের কাজ প্রায় ৫৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। কাজের মেয়াদ শেষ হলে আবার বাড়ানো হবে। নো ম্যানস ল্যান্ডের কাজ করার জন্য উভয় দেশের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সমাধান হয়নি। কাজের অনুমোদন এলে আমরা দ্রুত কাজ শেষ করব।

জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘নো ম্যানস ল্যান্ডের কাজের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। চারটি নো ম্যানস ল্যান্ডের মধ্যে একটির কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি, অন্য জায়গার জটিলতার সমাধান হবে।