রপ্তানিকারকদের আমদানিকৃত কাঁচামালের এইচএস কোড বা পণ্যের বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও কনসাইনমেন্ট আটকে না রেখে বা জরিমানা আদায় না করে তা ছেড়ে দিতে কাস্টম হাউসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগে এতে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানির শিকার হতে হতো। এনবিআরের এ সিদ্ধান্তে খুশি ব্যবসায়ীরা।
বন্দর থেকে কাঁচামাল খালাসের ক্ষেত্রে কাস্টম জটিলতা ও হয়রানি দূর করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে এনবিআর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের বন্ড লাইসেন্স, প্রাপ্যতা শিট বা সংশ্লিষ্ট ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশনের (ইউডি) সঙ্গে বা ঘোষণায় প্রদত্ত পণ্যের বর্ণনা ও ‘এইচএস কোড’-এর সঙ্গে কায়িক পরীক্ষার মাধ্যমে কাস্টম কর্তৃপক্ষ নিরূপিত এইচএস কোড বা বর্ণনায় মাঝে মাঝে ভিন্নতা দেখা যায়। ফলে শুল্কায়ন প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয় এবং যথাসময়ে পণ্য খালাস না হওয়ায় রপ্তানি আদেশ অনুযায়ী জাহাজীকরণ ব্যাহত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রপ্তানি বাণিজ্যের বৃহত্তর স্বার্থে এ জটিলতা নিরসনে এনবিআর জরুরি ভিত্তিতে নির্দেশনা জারি করেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত এইচএস কোডের প্রথম চার সংখ্যার সঙ্গে নিরূপিত এইচএস কোডের প্রথম চার সংখ্যার মিল থাকলে এবং বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত অঙ্গীকারনামা দাখিল করলে সংশ্লিষ্ট কাস্টম হাউস থেকে দ্রুত পণ্যচালান খালাস নেওয়া যাবে।
এনবিআর জানিয়েছে, বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত পণ্যের বর্ণনা ও এইচএস কোড অনুযায়ী আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা দেওয়ার পর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ভিন্ন এইচএস কোড নির্ধারণ করলে প্রতিষ্ঠানটি কাস্টম বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিবিএমএস) মাধ্যমে সেই এইচএস কোড প্রাপ্যতায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে এবং সর্বোচ্চ দুই দিনের মধ্যে পণ্য খালাস দেওয়া যাবে।
ইউডি হলো রপ্তানির বিপরীতে আমদানিকৃত কাঁচামালের ঘোষণা, যা বন্ড লাইসেন্সধারী কারখানাগুলো তাদের অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিসে জমা দেয়। আর এইচএস কোড হলো আমদানিকৃত পণ্য বা কাঁচামালের বর্ণনা, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ৮ ডিজিটের হয়ে থাকে।
এনবিআরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এতদিন এইচএস কোড ঘোষণার সঙ্গে প্রকৃত কাঁচামালে সামান্য পার্থক্য থাকলে কাস্টমস কর্মকর্তারা কনসাইনমেন্ট ছাড় দিতেন না বা জরিমানা আদায় করতেন। এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ ছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে এনবিআর আরও জানায়, এ নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করলে বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি কার্যক্রম আরও সহজ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী হবে। এতে দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ইউডি’র সঙ্গে আমদানিকৃত কাঁচামালের এইচএস কোডে সামান্য পার্থক্য থাকলেই আগে কনসাইনমেন্ট আটকে দেওয়া বা জরিমানা আদায় করা হতো। এতে ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানির শিকার হতে হতো। এনবিআরের এ সিদ্ধান্তে সেই হয়রানি কমবে বলে আশা করছি।’