ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বিদ্যালয়ের মাঠে বাঁশের হাট

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০১:৫৫ এএম

*** ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, শিক্ষার পরিবেশ
*** সপ্তাহে সোমবার হাট বসার কথা থাকলেও রোববার থেকে শুরু হয়

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কামালিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ২০ বছর ধরে বসছে বাঁশের হাট। সপ্তাহে সোমবারে হাঁট বসানোর কথা থাকলেও, রোববার সকাল থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে বাঁশ নিয়ে আসে বিক্রেতারা। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের প্রায় ১১০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই বাঁশের হাট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নে কামালিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ১১০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই জমজমাট ছিল কামালিয়া চালা বাজার। পরে বাজার বড় হতে হতে একসময় স্কুল মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়ে বাঁশের হাট। প্রথম অবস্থায় অল্প পরিসরে বাঁশ কেনাবেচা হলেও, এখন বিশাল বড় হয়ে গেছে বাঁশের হাটটি। যে কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জায়গা পর্যন্ত নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের ভেতরেই জমে উঠেছে বাঁশের হাট। পুরো বিদ্যালয় মাঠে রাখা হয়েছে হাজার হাজার বাঁশ। আর ব্যবসায়ীরা বাঁশগুলো কাঁধে করে মাঠে আনা নেওয়া করছে বিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়েই। অথচ ওই একই ফটক দিয়ে শিক্ষার্থীরাও আসা যাওয়া করছে। এমন অবস্থায় যেকোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বড় দুর্ঘটনা। সপ্তাহে রবি-সোমবার দুদিন হাটের কার্যক্রম চলাতে দুদিন পুরো বন্ধ থাকে বিদ্যালয় মাঠ। বাঁশের পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় যে, রবি-সোম খেলাধুলা তো দূরের কথা, বিদ্যালয়ের বারান্দা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলাও দুষ্কর হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষার্থী সাকিব বলেন, মাঠে বাঁশ রাখার জন্য আমরা খেলতে পারি না। শিক্ষার্থী আরাফাত জানান, মাঠে বাঁশ রাখায় আমি একদিন ব্যথা পেয়েছিলাম।

অভিভাবক আবদুল করিম বলেন, বিদ্যালয় মাঠে যে বাঁশগুলো ওঠে, তা এই এলাকার মানুষই উঠায়। এজন্য বাচ্চাদের খেলাধুলায় সমস্যা হচ্ছে। এলাকাবাসী সাব্বির জানান, আমাদের উচিৎ মাঠটা রক্ষা করা। যাতে বিদ্যালয় এবং এলাকার শিশু কিশোররা সুন্দরভাবে খেলাধুলা করতে পারে।

জমির মালিকানা দাবি করা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ বলেন, বিদ্যালয়ের ১০০ শতাংশের জমিটা আমার নানা দান করে গেছে। সীমানা প্রাচীর যখন দেওয়া হয়, তখনই আমি বাধা দিয়েছিলাম। কারণ, বিদ্যালয়ের সামনের বেশির ভাগ জায়গা ব্যক্তিমালিকানা। কিন্তু তখন জোরপূর্বক ভাবে সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, আমি এই বিদ্যালয়ে ২০১৮ জয়েন করার আগে থেকেই, বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের হাট ছিল। আমি আসার পর সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে। তাদের অনেকবার নিষেধ করেছি, কিন্তু তারা কথা শুনে না। এ ব্যাপারে আমি শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। বিদ্যালয়ের ১০০ শতাংশ জমি থাকলেও, তা চিহ্নিত করা হয়নি বলে বেশি সমস্যা হচ্ছে। আমরা চাই মাঠটা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকুক, যাতে তারা সুন্দরভাবে খেলাধুলা করতে পারে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, আমি অবগত হয়েছি কামালিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের হাট বসে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবেদন করার পর, আমি ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে ওই বিদ্যালয় মাঠে হাট যাতে না বসে সেই ব্যাপারে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।