ঢাকা বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

১০ বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ

মফিকুল ইসলাম, আখাউড়া
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৫, ০২:০৩ এএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো খেলার মাঠ। ফলে ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত রয়েছে। বিশেষ করে টিফিনের বেশির ভাগ সময় বসে থেকেই কাটাতে হয়। মাঠ না থাকায় আবার বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয় না। এ অবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, মাঠের অভাবে বিদ্যালয়ে খেলাধুলা করতে পারেন না। বিদ্যালয়ে বেশির ভাগ আমাদের অলস সময় পার করতে হয়।

সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুদের মেধা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো খেলাধুলা। বিদ্যালয়ে পড়ালেখার বাইরে শিশুরা মাঠে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করবে, এর মাধ্যমে তারা সুস্থ-স্বাভাবিক এবং আনন্দে থাকবে। মেধা বিকাশে আনন্দের মাধ্যমে শেখাটাই হলো শিক্ষার্থীদের প্রকৃত শেখা। কিন্তু বিদ্যালয়ে মাঠ না থাকায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরসহ উপজেলায় ৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠ নেই বা জায়গা একেবারেই অপ্রতুল।

মাঠ না থাকা বিদ্যালয়গুলো হলোÑ রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শহিদ বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিলাখাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টনকি উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনিয়ন্দ উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তোলাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদিলপুর বজলু মিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ঘোলখার পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এসব বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, মাঠ হলো বিদ্যালয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ না থাকায় কোমলমতি শিশুরা খেলাধুলা করতে পারছে না। তা ছাড়া বাইরে যখন কোথাও কোনো প্রতিযোগিতায় যাওয়া হয় তখন শিক্ষার্থীরা আশানুরূপ ফলাফল করতে পারছে না। মাঠের অভাবে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। মাঠ না থাকায় আবার বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও ঠিকমতো হয় না। বিদ্যালয়ের নিজস্ব মাঠ থাকলে শিক্ষার্থীরা অবসর সময়ে খেলাধুলার সুযোগ পেত, প্রতিযোগিতায় ভালো করতে পারত।

আব্দুল্লাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. রাবিক মাইসা ও মুত্তাকি বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে খেলাধুলার জন্য কোনো মাঠ নেই। বিদ্যালয়ে এসে সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারছি না। মাঠ না থাকায় বিদ্যালয়ে পাঠদানের বাইরে অলস সময় পার করতে হয়। উপজেলা পর্যায়ে কোনো প্রতিযোগিতা হলে আমাদের প্রস্তুতি নিতেও সমস্যা হয়। তা ছাড়া শরীরচর্চা, জাতীয় সংগীত গাওয়া ও নিয়মিত শপথ পড়তে পারছি না।

উপজেলার টনকি উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. রবিন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে মাঠ না থাকায় আমরা খেলাধুলা থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন তাদের মাঠে খেলাধুলা করে, তখন তা দেখলে খুবই ভালো লাগে। কিন্তু আমাদের বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ না থাকার কারণে সহপাঠীদের সাথে খেলাধুলা করতে না পাড়ায় খুবই খারাপ লাগে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ ইলিয়াস উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ে পাঠদানের পাশাপাশি খেলাধুলারও গুরুত্ব রয়েছে অনেক বেশি। শিশুদের সুস্থ বিকাশে খেলার মাঠ অপরিহার্য। খেলাধুলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশ ঘটে। পৌর শহরসহ এ উপজেলার ১০টি প্রথমিক বিদ্যালয়ে খেলাধুলার জন্য নির্ধারিত জায়গা বা মাঠ নেই। জায়গা স্বল্পতাসহ নানা কারণে মাঠ করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি মনে করি, মাঠ না থাকা বিদ্যালয়গুলো যদি পার্শ্ববর্তী কোনো বিদ্যালয় মাঠ বা খাস জায়গা ব্যবহার করে, তাহলে ও মেধা বিকাশ সম্ভব হবে।