ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় অসময়ে তরমুজ ও সাম্মাম চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন মো. মুস্তাকিম সরকার নামের এক কৃষক। উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বাণিজ্যিকভাবে এই চাষ করে তিনি এ সাফল্য পান। এ মৌসুমে আবাদ করা জমিতে তরমুজ ও সাম্মাম চাষে ফলন ভালো হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই দুই ধরনের ফল বাজারজাত শুরু হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বাজারদর ভালো পেলে প্রায় ৬ লাখ টাকার ফল বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
অসময়ে তরমুজ ও সাম্মাম চাষ করে মুস্তাকিম সরকার এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। এরই মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোকজন তার বাগান দেখতে ও পরামর্শ নিতে আসছেন। কৃষক মুস্তাকিম সরকার উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ধাতুরপহেলা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম সরকারের ছেলে।
তিনি বলেন, ‘উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের আদমপুর গ্রামে প্রায় ৯ বিঘা জমিতে দেশীয় পদ্ধতিতে তরমুজ ও সাম্মাম চাষ করেছি। এর মধ্যে প্রায় ১ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে সাম্মাম এবং বাকি ৮ বিঘা জমিতে দেশীয় পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছি। জমিতে সেচ, বীজ, চারা রোপণ, জমি ইজারা, সার ও পরিচর্যাসহ অন্যান্য খরচ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ টাকা। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ফল বিক্রি শুরু হবে। বাজারদর ভালো থাকলে এ দুটি বাগান থেকে প্রায় ৬ লাখ টাকার ফল বিক্রি হবে বলে আমি আশা করছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাম্মাম ফলের তেমন কোনো রোগবালাই নেই। গাছে খুব সামান্য সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করলেই হয়। সঠিকভাবে চাষাবাদ ও নিয়মিত ফুলের পরাগায়ন হলে প্রতিটি গাছ থেকে একাধিক ফল পাওয়া যায়। একেকটি সাম্মাম ফল এক থেকে দেড় কেজি ওজনের হয়ে থাকে।’
শুরুর দিকে সাম্মাম ও তরমুজ চাষ নিয়ে আমি বেশ চিন্তিত ছিলাম। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ ও নিজের নিয়মিত পরিচর্যায় ফলন ভালো হয়েছে। স্থানীয় বাজারে সাম্মাম প্রতি কেজি ১৬০-১৭০ টাকায় এবং তরমুজ ১০০-১১০ টাকায় খুচরায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারদর ভালো থাকলে দ্বিগুণ লাভের আশা করছি।
সরেজমিনে আদমপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে ‘মায়ের দোয়া বহুমুখী কৃষি প্রকল্প’। এই প্রকল্পে বছরজুড়ে বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি চাষ করা হচ্ছে সাম্মাম ও তরমুজ। মাচায় ঝুলছে সাম্মাম ফল আর মাটিতে শোভা পাচ্ছে পরিপক্ব তরমুজ। নিয়মিত পরিচর্যা চলছে বাগানে। গরু-ছাগল ও কিটপতঙ্গ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে দেওয়া হয়েছে নেট জালের ঘেরা।
পৌর শহরের তারাগন এলাকা থেকে আসা মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমি কয়েকজনের কাছ থেকে শুনেছি এখানে সাম্মাম চাষ হচ্ছে। ফলটি খুব মিষ্টি, রসালো এবং খেতে সুস্বাদু। তাই নিজেই দেখতে এলাম।’
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, ‘বর্তমানে উপজেলার কৃষকরা উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভজনক ফসল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন। সাম্মাম ও তরমুজ চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি অফিস সার্বিকভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা দিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই এলাকার মাটি সবজিসহ ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।’
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন