- সিএনজি অটোরিকশায় মাইক দিয়ে ওষুধ বিক্রি করছে ভ্রাম্যমাণ দল
- ‘শবুজ হেলথ ল্যাবরেটরিজ ইউনানী’ অনুমতি ছাড়া প্রচারণা চালাচ্ছে
- অনুমোদন ও চিকিৎসক পরামর্শ ছাড়া ওষুধ বিক্রি আইনত অপরাধ
- ভেজাল ওষুধে লিভার-কিডনি বিকলসহ গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে দেখা যাচ্ছে কিছু ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কর্মী সিএনজি (অটোরিকশা) চড়ে মাইক ব্যবহার করে বিক্রি করছেন বিভিন্ন রোগের ওষুধ। তারা নিজেদের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। এমনই একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ‘শবুজ হেলথ ল্যাবরেটরিজ ইউনানী’ যাদের বিক্রয়কর্মীরা অনুমতি ছাড়াই প্রচারণা চালাচ্ছেন। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া এ ধরনের কার্যক্রম পুরোপুরি বেআইনি।
সবুজ হেলথ ল্যাবরেটরিজ ইউনানীর বিক্রয় প্রতিনিধি আসাদউল্লাহ বলেন, আসলে এভাবে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ওষুধ বিক্রি করার কোনো নিয়ম নেই। এটি আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা কোম্পানির প্রচারের জন্য ফ্রি কিছু ওষুধ গ্রামের মানুষেরদের মাঝে দিচ্ছি। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ওষুধ বিক্রি করার আইনিভাবে অপরাধ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অনুমোদনবিহীন এসব পণ্য অনেক সময় ভেজাল বা ভুল মাত্রায় তৈরি হয়, যা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। এসব ওষুধ খাওয়ার ফলে কিডনি, লিভারসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ক্যানসারের মতো জটিল রোগের রোগীরা এ ধরনের ভুয়া চিকিৎসায় প্রাণঘাতী ঝুঁকির মুখে পড়েন। গ্রামের মানুষ সাধারণত সহজ-সরল হওয়ায় প্রতারকরা সহজেই তাদের বিশ্বাস অর্জন করছে। বিক্রেতারা চিকিৎসক নন, তবুও তারা দাবি করছেন, তাদের ওষুধে যেকোনো রোগ সারবে। ফলে মানুষ প্রলোভনে পড়ে এসব কিনছেন এবং অজান্তেই নিজের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছেন।
স্থানীয় ফার্মেসিতে কর্মরতদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাজারে অ্যালোপ্যাথিক থেকে শুরু করে আয়ুর্বেদিক ও হারবাল সব ধরনের ওষুধই নকল হচ্ছে। এসব ওষুধ খেয়ে লিভার, কিডনি বিকল, বিকলাঙ্গ, মস্তিষ্কের জটিলতাসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগে মৃত্যু বাড়ছে। তাই মানুষকে সচেতন হতে হবে, তারা যেন ভেজাল ওষুধ না কেনেন। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষেরও সেই ব্যবস্থা করা দরকার, যাতে করে কোথাও ভেজাল ওষুধ বিক্রি না হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিক্রেতা বলেন, সারা দেশে বিশেষ করে নামি-দামি কোম্পানিগুলোর ওষুধের অনেক চাহিদা। বিষয়টিকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা কেমিক্যাল কিনে নকল বা ভেজাল ওষুধ তৈরি করছে। পরে তা সারা দেশে বিভিন্ন উপজেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক খুচরা ওষুধ দোকানিরাও এসব বিক্রি করছেন। গ্রামে এসব ওষুধ বেশি বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এটি বুঝতেই পারবেন না।
স্থানীয় এলাকার ৫০ বছরের এক বৃদ্ধ বলেন, আমরা সাধারণ মানুষ, ওষুধের মধ্যে ভেজাল থাকলে আমরা কীভাবে বুঝব। আমাদের তো চেনার উপায় নাই। তাই এ বিষয়ে সরকারের এগিয়ে আসা দরকার। ভেজাল যারা করে ও বিক্রি করে তাদের ধরে শাস্তি দিতে হবে। আইন অনুযায়ী, যে কোনো ওষুধ বাজারজাত করার আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিতে হয়। গবেষণা ও পরীক্ষার মাধ্যমে নিরাপত্তা প্রমাণ ছাড়া এসব বিক্রি আইনত দ-নীয় অপরাধ।
জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে অনুমোদনবিহীন এই ভ্রাম্যমাণ ওষুধ বিক্রি এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য সংকট তৈরি করবে এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে সীতাকু- উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলতাফ হোসেন দৈনিক রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, অনুমোদিত ওষুধ হলেও এভাবে ফেরি করে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নাই। যেকোনো ওষুধ সংশ্লিষ্ট ক্যাটাগরির চিকিৎসকের পরামর্শে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান শুধু বিক্রি করতে পারেন। উক্ত বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন