ঢাকা শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫

ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু

এবারও অসাধু জেলেদের দিকে অভিযোগের তীর!

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫, ০১:৩৪ এএম

প্রতিবছরের মতো এবারও মা ইলিশ রক্ষা তথা ইলিশের প্রজনন রক্ষার সব ধরনের ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুত ও বিক্রিতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। আজ (শনিবার) থেকে শুরু হয়ে আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে ইলিশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। তবে বরাবরের মতো এবারও কিছুসংখ্যক অসাধু জেলেদের দিকে উঠছে অভিযোগের তীর।

মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, প্রতিবছর আশ্বিন মাসে অধিকাংশ ইলিশ নদী ও সাগরে ডিম ছাড়ে। এ সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখলে প্রজননের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং ভবিষ্যতে ইলিশের উৎপাদন বাড়ে। সরকারের মতে, টেকসই ও মজবুত ইলিশ উৎপাদন নিশ্চিত করতে এ ধরনের উদ্যোগ অপরিহার্য।

নিষেধাজ্ঞার সময় নদ-নদী ও সাগরে মৎস্য বিভাগ, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। কেউ আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদ- বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা আরোপ করা হবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতও নিয়মিত মাঠে থাকবে। বরগুনার পাথরঘাটা, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রেও এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

এদিকে গত সোমবার থেকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলেরা সাগরে যেতে পারেনি। এ সময় অনেক জেলে বাজার-সদাই করে ঘাটেই নোঙর করে রেখেছে ট্রলার। এর ওপর শুরু হওয়া ২২ দিনের বিরতি তাদের পরিবার-পরিজনের জীবিকাকে আরও জটিল করে তুলেছে।

সরকারি হিসাবে পাথরঘাটায় নিবন্ধিত জেলে ১১ হাজার ৮২০। এ ছাড়া অনিবন্ধিত জেলের সংখ্যা আরও ৫ থেকে ৬ হাজার। তাদের সহায়তায় ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল বিতরণের কথা রয়েছে। তবে অনেক জেলে অভিযোগ করছেন, প্রকৃত তালিকা অনুযায়ী অনুদান যথাযথভাবে পৌঁছায় না।

অন্যদিকে প্রতিবছরের মতো এবারও কিছুসংখ্যক জেলে অসাধুপায়ে সাগরে মাছ শিকার করবে এমন অভিযোগও রয়েছে। বরাবরের মতো এ বছরও অভিযোগের তীর কিছুসংখ্যক জেলেদের ওপর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক জেলের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে। তারা বলছেন, এ বছরও কিছুসংখ্যক জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সাগরে মাছ শিকারে যাবে। প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ তাদের। তারা এটাও বলছেন, অধিকাংশ জেলেরাই নিষেধাজ্ঞা সঠিকভাবে পালন করছে।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপকূলের জেলেরা মেনে চলছে। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা বেকার সময় পার করেন, এমনকি ট্রলার মালিকরাও ঋণের বোঝার মধ্যে রয়েছেন। তবে ইলিশের টেকসই ও মজবুত উৎপাদনের স্বার্থে এ উদ্যোগকে সমর্থন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ট্রলার মালিকদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন।

উপকূল অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও গবেষক শফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, উপকূলের জেলেরা দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন। এখানকার জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরে মাছ শিকার করে। নিষেধাজ্ঞাও ঠিকঠাক মানলেও জেলেদের নিয়ে সরকারি কর্তাদের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। নিষেধাজ্ঞাকালে শুধু চাল নয়, এর সঙ্গে টাকাও দেওয়া উচিত, যা আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছি। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানও দরকার।

পাথরঘাটা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা হাসিবুল হক বলেন, ‘২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় প্রতিবছর মতো এ বছরও জেলেরা পালন করবে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমরাও সঠিকভাবে কাজ করে যাবো। বরাবরের মতো অভিযোগটি আমরা সব সময়ই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরার কোনো সুযোগ নেই, এ ক্ষেত্রে আমাদের কঠোর নজরদারি থাকবে।’