ঢাকা শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫

এক জেলায় দুই সিভিল সার্জন!

বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫, ০১:৩৫ এএম
  • বদলির পরও যাননি আগের কর্মকর্তা
  • দায়িত্ব হস্তান্তর না হওয়ায় অফিসে সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনিক অচলাবস্থা
  • টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা
  • মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে: জেলা প্রশাসন

প্রতিটি জেলায় সিভিল সার্জনের পদ একটি থাকলেও বগুড়ায় এক পদে দুজন সিভিল সার্জন রয়েছেন। শুনে কিছুটা অবিশ্বাস্য হলেও শতভাগ সত্য। এই এক পদে দুই কর্মকর্তাকে নিয়ে এবার ভিন্ন এক জটিলতার মুখোমুখি হয়েছে বগুড়ার স্বাস্থ্য বিভাগ। নতুন পদায়ন পেয়ে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. খুরশীদ আলম অথচ কক্ষের বাইরে এখনো ঝুলছে ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলামের নামফলক। একসঙ্গে দুজন কর্মকর্তার পদায়ন নিয়ে শুরু হয়েছে একপ্রকার ‘কাগুজে যুদ্ধ’, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্বাস্থ্যসেবায়। এমন পরিস্থিতিতে জেলার ১২ উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভ্রান্তের মধ্যে পড়েছে।

জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের গত ১৪ সেপ্টেম্বরের এক প্রজ্ঞাপনে বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মোফাখখারুল ইসলামকে মানিকগঞ্জে এবং মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. খুরশীদ আলমকে বগুড়ায় বদলি করা হয়। উভয়কে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ে বগুড়ায় যোগ দেন ডা. খুরশীদ আলম। কিন্তু তিনি এসে দেখতে পান ডা. মোফাখখারুল ইসলাম ছুটিতে রয়েছেন। ফলে পূর্ববর্তী সিভিল সার্জনের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার প্রক্রিয়া আটকে যায়। এ অবস্থায় অফিসে চলছে এক ধরনের প্রশাসনিক অচলাবস্থা। সরকারি কাগজে নতুন সিভিল সার্জনের নাম থাকলেও বাস্তবে পুরোনো কর্মকর্তার নামেই চলছে বিভিন্ন কার্যক্রম।

এরই মধ্যে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে দেশব্যাপী ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি সব শিশুকে ১ ডোজ টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ-সংক্রান্ত বগুড়ায় জনসচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে মিটিং করার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কর্মসূচির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টরা।

বগুড়ায় সদ্য বদলি হয়ে আসা সিভিল সার্জন খুরশীদ আলম জানান, তিনি ১৬ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে রিলিজ নিয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় যোগ দিতে এলেও অনাকাক্সিক্ষত কারণে যোগ দেওযা সম্ভব হয়নি। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আগের সিভিল সার্জন ১৮ সেপ্টেম্বর রিলিজ নেওয়ার কথা থাকলেও জানতে পারেন বগুড়ার সিভিল সার্জন ছুটিতে আছেন। পরে তিনি বিভাগীয় পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তার (বিভাগীয় পরিচালক) বরাবর আবারও একটি যোগদানপত্র দাখিল করতে বলেন। সেই যোগদানপত্রের পরিপ্রেক্ষিতেই তিনি তাকে (খুরশীদ) যোগদান করে নেন। ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি নিয়মিত বগুড়ার সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান ডা. খুরশিদ।

জেলায় টাইফয়েড টিকার কর্মসূচির ব্যাহত হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি জানান, টাইফয়েড টিকা নিয়ে তাদের প্রচারণা, মিটিং, প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। সামনে বাকি কয়েক দিনের মধ্যে খুব দ্রুত মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি সম্পন্ন করার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে বগুড়ার সদ্য সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলাম জানান, বগুড়ায় নতুন সিভিল সার্জন যোগ দিয়েছেন। বগুড়ায় তার যোগ দেওয়ার সময় মাত্র ৬ মাস। তিনি বগুড়াতে থাকতে চেয়েছিলেন। যার কারণে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। এখন যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ না করেন তাহলে তিনি মানিকগঞ্জে যোগ দেবেন। দাপ্তরিক কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু তিনি বগুড়ায় থাকার জন্য মন্ত্রণালয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, সে জন্য তিনি এখনো নতুন পদায়ন পাওয়া ডা. খুরশিদকে দাপ্তরিক কাজ বুঝিয়ে দেননি।

বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা জানান, প্রজ্ঞাপন দেখে ডা. এ কে এম মোফাখখারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে দ্রুত চলে যাওয়ার কথার বলেছি। একই সঙ্গে নতুন সিভিল সার্জন হিসেবে মানিকগঞ্জ থেকে খুরশীদ আলম যোগ দেওয়ার পরই তার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। এখনো তাকে দাপ্তরিক দায়িত্ব কেন বুঝিয়ে দেওয়া হলো না এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা বলে দ্রুত সমাধান করা হবে।