ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫

স্কুলে তালা, শিক্ষার্থীরা বারান্দায় পাঠ নিচ্ছে

তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৬, ২০২৫, ০১:৫৬ এএম

রাজশাহীর তানোরে এক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তালা ঝুঁলিয়ে দেওয়ায় ক্লাস বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এখন বারান্দায় বসেই পাঠ নিতে হচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকায় চরম ক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, অচিরেই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রূপ নিতে পারে।

ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কলমা ইউনিয়নের পিঁপড়া কালনা বে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হযরত আলী মাস্টার ও মজিবুর রহমানের নির্দেশে গত ১১ অক্টোবর শনিবার রাতে বিদ্যালয়ের চারটি কক্ষে তালা ঝুঁলিয়ে দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ১৩ অক্টোবর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দরগাডাঙ্গা বাজার থেকে পূর্ব দিকে পিঁপড়া কালনা গ্রামে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। মাটির রাস্তার পাশে মাঠ ঘেঁষে টিনের চারটি ঘর, সবগুলোতেই তালা ঝুঁলছে। শিক্ষার্থীরা এখন বাধ্য হয়ে স্কুলের বারান্দায় বসে পাঠ নিচ্ছে। সামনে বাঁশে লাগানো পতাকা ঝুলছে নিরুপায় সুতোর মতো। দেশপ্রেম নয়, যেন এক হাহাকার বহন করছে।

শিক্ষকেরা জানান, ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিদ্যালয়টি। কয়েকবার ঝড়ে ঘর ভেঙে গেলেও গ্রামের মানুষের সহায়তায় আবার গড়ে তোলা হয়। কোনো সরকারি অনুদান বা বেতন-ভাতা ছাড়াই শিক্ষকেরা টিকে আছেন।

প্রধান শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা খেয়ে-না খেয়ে এই প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। কিন্তু মজিবুর রহমান সভাপতি থাকা অবস্থায় গায়ের জোরে আরও ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। এখন তারা মূল কাগজপত্র চাইছেন, ফটোকপি দিলেও সন্তুষ্ট নন। আসলে তারা পুরোনো শিক্ষক বাদ দিয়ে নতুনভাবে সব নিয়োগ দিতে চান।’

বিদ্যালয়ের জমিদাতা আলহাজ আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘আমি এক বিঘা জমি দান করেছি গ্রামের শিশুদের শিক্ষার জন্য। এখন সেই স্কুলেই তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে তারা। যদি এতই দয়ালু হয়, প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি করুক বা নতুন জমি দান করুক। আজ যে জমির দাম ৪০-৫০ লাখ টাকা, তা দিয়েছি গ্রামের উন্নতির জন্য, দখলের জন্য নয়।’

অভিযুক্ত মজিবুর রহমানের দাবি, ‘প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ জালিয়াতির কারণে গ্রামের মানুষ নিজেরাই তালা দিয়েছে। আমি কাউকে তালা দিতে বলিনি।’

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা হযরত আলী মাস্টার বলেন, ‘গ্রামে মিটিং করে তারাই তালা দিয়েছে। আমি নির্দেশ দিইনি। আসল কাগজ না দেখানোর কারণে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তালা দিয়েছে।’ তবে তার নির্দেশেই তালা মারা হয়েছে, এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি; তিনি ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসীর ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও সাড়া মেলেনি।