*** দুপুরের পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত থাকেনা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক
*** ইন্টার্ন ও মেডিকেল অফিসারদের দিয়ে চলে চিকিৎসা
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দায়িত্বহীনতার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিদিন দুপুরের পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত বিভাগে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দেখা মেলে না। ইন্টার্ন ও মেডিকেল অফিসারদের হাতেই চলছে জরুরি এই ইউনিটের চিকিৎসাসেবা। ফলে সময়মতো চিকিৎসা না পেয়ে ঝরে যাচ্ছে মূল্যবান প্রাণ। রোগীরা বলছেন, নামে তালপুকুর, কাজে ঘটি ডোবে না।
জানা যায়, প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০০৫ সালে নির্মিত হয় এই সিসিইউ ভবন। ২০০৬ সালের ১২ অক্টোবর ইউনিটটি উদ্বোধন হলেও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা শুরু করা যায়নি। ২০০৭ সালে ২৪ জন চিকিৎসক, ৫৬ জন নার্স ও ১৪৩ জন কর্মচারী নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হলেও পদায়ন হয়নি। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালের বিদ্যমান জনবল দিয়েই ২০০৯ সালের ১২ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে চিকিৎসা শুরু হয়। সেই থেকেই হোঁচট খেতে খেতেই চলছে পুরো বিভাগ।
বর্তমানে হাসপাতালের কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট ও মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপকরা রোগী দেখার কথা থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, তারা দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন না। নিজেদের সুবিধা মতো ওয়ার্ড রাউন্ড করা এবং বহির্বিভাগে রোগী দেখা, এই মনোভাবের কারণে সিসিইউ কার্যত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
সরেজমিন দেখা যায়, সিসিইউতে রয়েছে ২৮ শয্যা। প্রতিদিন শতাধিক রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবার জন্য আসেন, যাদের বেশির ভাগই নি¤œ আয়ের মানুষ। রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হাসপাতালের বাইরের ক্লিনিক থেকে করতে হয় এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে এবং দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। একাধিক রোগী ও স্বজন জানিয়েছেন, ‘সকালে চিকিৎসকরা রাউন্ডে আসেন কিন্তু বিকেল থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখা মেলেনা। জরুরি বিভাগে ইন্টার্ন বা মেডিকেল অফিসার দায়িত্ব পালন করেন। ওষুধ বিতরণ ও প্রেসার পরিমাপ ছাড়া কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না।’ রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ- বিকেল থেকে সকাল পর্যন্ত জরুরি পরিস্থিতিতেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। সহকারী রেজিস্ট্রারের পরিবর্তে দায়িত্ব পালন করেন ইন্টার্ন কিংবা মেডিকেল অফিসার। ফলে সংকটাপন্ন রোগীদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে। চুড়ামনকাটি এলাকার জাহানারা বেগম নামের এক রোগীর ছেলে ওয়াহিদুজ্জামান মিলন জানান, ‘মাকে সিসিইউতে ভর্তি করার পর প্রচ- শ্বাসকষ্ট দেখা দিলেও অক্সিজেন দেওয়ার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। চিকিৎসা না পেয়ে মা মারা যান।’ এমন অভিযোগ আরও অনেকের। রোগী ও স্বজনদের দাবি, ‘সিসিইউতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, অক্সিজেন, ভেন্টিলেশন ও কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অধিকাংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ বাইরে থেকে করতে হয়, যা সাধারণ মানুষের জন্য অসহনীয়।’ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, ‘করোনারি কেয়ার ইউনিট নানা সংকটের মধ্যেও চলমান। রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। বিশেষজ্ঞদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে। চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যু ঘটলে তা অত্যন্ত কষ্টকর।’

