*** দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়েও সার পাচ্ছে না
অর্থনৈতিক চাপ ও আবহাওয়ার অনিশ্চয়তার পাশাপাশি এবার নতুন করে যোগ হয়েছে সার সংকট। সব জমি এখনো চাষের উপযোগী না হলেও, যে জমিগুলো প্রস্তুত সেগুলোতে প্রয়োগের মতো প্রয়োজনীয় ডিএপি (ড্যাপ) সার পাচ্ছেন না কৃষকরা। স্থানীয় বাজারে ইউরিয়া ও টিএসপি মজুদ থাকলেও ডিএপি সারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের সদর রাস্তায় নান্নুর সারের দোকানে দেখা যায়, সার কিনতে কৃষকদের দীর্ঘ লাইন। বস্তা, ব্যাগসহ জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে নিয়ে সার পাওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে। জানা গেছে, ওই দোকানে শুধু সোনামুখী ইউনিয়নের কৃষকদের সার দেওয়া হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকেও কৃষকরা লাইনে এসে সার পাওয়ার চেষ্টা করছেন। ডিলার ও কৃষি অফিস জানিয়েছে- ডিলারের দোকানে সার পৌঁছানোর পর কৃষি অফিস যাচাই-বাছাই করে অনুমতি দিলে তবেই বিতরণ করা হচ্ছে।
সোনামুখী ইউনিয়নের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু সার দিচ্ছে না। দোকানদার বলছে কৃষি অফিস থেকে অনুমতি এলে দেওয়া হবে। জানি না কতটুকু সার পাব, এটা দিয়ে পুরো জমিতে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে কি না।’
একইভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষক সাবিনা হক অভিযোগ করে বলেন, ‘অন্যান্য জায়গায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে সার মজুত করছেন এবং বেশি দামে বিক্রি করছেন। পরে হয়তো সার পাওয়া যাবে না, এই আশঙ্কায় এসেছি। বড় কৃষকরা টিকে থাকতে পারলেও ক্ষুদ্র কৃষকরা চরম বিপাকে পড়বে।’
ডিলার নান্নু জানান, ‘এই মাসে সোনামুখী ইউনিয়নে ৮২৬ বস্তা ডিএপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাহিদা বেশি হওয়ায় এখন আর সার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি হিসাবে প্রতি বিঘায় ডিএপি সারের বরাদ্দ ২৭ কেজি। কিন্তু কৃষকদের বেড়ে যাওয়া চাহিদা ও ঘাটতির কারণে অনেক জায়গায় এক বস্তা করে দেওয়া হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শ দিচ্ছেন, স্বল্প পরিমাণ সার এখন ব্যবহার করে জমি বেঁধে দেওয়ার সময় প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগ করতে।
উপজেলা কৃষি অফিসার ও কৃষিবিদ মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘নভেম্বর মাসে ডিএপি সারের জন্য ৫৩৩ টন বরাদ্দ ছিল, যা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ডিসেম্বর মাসের জন্য ৩৭৭ টন বরাদ্দ নিশ্চিত করেছি। আজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছি—আগামী ২৬ নভেম্বর বরাদ্দপত্র পাওয়ার চেষ্টা চলছে। বরাদ্দপত্র পাওয়া মাত্র ডিলাররা টাকা জমা দিলে ১ ডিসেম্বর পয়েন্টে সার মজুদ হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জমিতে সার দিতে না পারলে ভালো ফলন আশা করা যায় না। তাই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং দ্রুত সার সরবরাহ বাড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।’

