- ৮ জেলার ৭৮৬টি চরে ৩৬ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ চলছে
- উৎপাদন লক্ষ্য ৩ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন ফসল
বন্যার পানি নামতেই উত্তরের তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বিস্তীর্ণ চরজমি এখন কার্যত কৃষির মরুদ্যান। আগে পরিত্যক্ত বালুময় এই জমিগুলো বেলে দোয়াশে রূপ নিয়ে চাষাবাদে প্রাণ ফিরিয়েছে। রংপুর কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, উত্তরের আট জেলায় রয়েছে প্রায় ৭৮৬টি চর। পানি সরে যাওয়ার পর এসব চরে আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে চরবাসী।
রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে এসব চরে ৩৬ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রকার ফসল। তার ভাষায়, ‘একবারের ফসলেই চরের মানুষের সারা বছরের জীবিকা চলে যায়। এবারও ভালো ফলনের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।’
তিস্তা নদীর চরঘেরা লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারী জুড়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কোথাও আলু, বেগুন ও মরিচ, আবার কোথাও শিম, ধনেপাতা, গাজর, কপি, মুলা, ভুট্টা, তিল, তিশিসহ নানা ফসলের আবাদ। কৃষকরা বলছেন, ফলন ভালো হলে এবার লাভের পরিমাণ বিগত বছরের চেয়েও বাড়বে।
রংপুরের গঙ্গাচরার ইচলির চরের কৃষক হোসেন মিয়া জানান, ‘৩ বিঘায় আলু, ৩ বিঘায় বেগুন আর ২০ শতকে ধনিয়াপাতা বপন করেছি। ফলন ভালো হলে খরচ বাদ দিয়ে দেড় লাখ টাকা আয় করতে পারব।’ একই আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষক হাবিবুর, রহিম ও খায়রুল। তাদের প্রত্যাশা, প্রতি জমিতে ৬০-৭০ হাজার টাকা লাভ হবে।
লক্ষ্মীটারি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী মনে করেন, তিস্তার চর বর্তমানে একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি জোনে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেক ফসল বাজারে উঠতে শুরু করেছে।
কৃষি কর্মকর্তা তুষার কান্তির মতে, চরাঞ্চলের মাটিতে পলি জমে স্বভাবতই উর্বরতা বাড়ে। ফলে রাসায়নিক সার ছাড়াই অধিকাংশ ফসলের ফলন ভালো হয়। বিশেষত ভুট্টা, গম, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, তিল ও তিশির আবাদ বাড়ছে দ্রুত।
চর নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করা রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘বন্যার পর জমিতে যে পলি পড়ে, তা অত্যন্ত উর্বর। তাই প্রতিবছরই বাম্পার ফলন দেখা যায়। কিন্তু চরবাসী ন্যায্য মূল্য পান না, কারণ যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল।’ তিনি মনে করেন, ‘তিস্তা ও অন্যান্য নদী খনন করা গেলে আরও নতুন চরজমি জেগে উঠবে এবং এ অঞ্চলের মানুষের আর দারিদ্র্য থাকবে না।’
কৃষি বিভাগ জানায়, উত্তরের ৭৮৬টি চরজুড়ে উৎপাদিত ফসল থেকে এবার প্রায় ২০০ কোটি টাকার বাজারমূল্য পাওয়া যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ইতোমধ্যে প্রণোদনা ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন