ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামে ১.৯ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ কাজে আওয়ামী-ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের আধিপত্য, সাব-কন্ট্রাক্ট বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এলজিইডির তত্ত্বাবধানে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সড়কের মান নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
উপজেলা প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১.৯ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণ প্রকল্পটির মূল কাজ পায় ‘বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে লভ্যাংশ রেখে প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় আওয়ামীপন্থি প্রভাবশালী ঠিকাদার আবু সাঈদের কাছে কাজটি বিক্রি করে দেয়। পরবর্তী সময়ে সাব-কন্ট্রাক্টের মাধ্যমে কাজটির দায়িত্ব পান নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী মনির। অভিযোগ রয়েছে, আবু সাঈদ লভ্যাংশ রেখে কাজটি মনিরকে দেন এবং প্রভাব খাটিয়ে মনির নি¤œমানের উপকরণ ব্যবহার করে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ পরিচালনা করছেন।
সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা গ্রামে ১.৯ কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম বিটুমিন দিয়ে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। শুধু তাই নয়, নির্ধারিত মানের নিচে নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। সড়কের মাটি ধরে রাখার জন্য সুরক্ষা দেয়ালের পিলারে পাথরের পরিবর্তে নি¤œমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও প্রয়োজনীয় মাটি সংক্ষেপণ ছাড়াই সড়কের বেস তৈরি করা হয়েছে। কাদা ও ধুলাযুক্ত অপরিচ্ছন্ন পাথরের মিশ্রণে অসম বেড নির্মাণ করা হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ করতে তাড়াহুড়ার কারণে মান নিয়ন্ত্রণে সুস্পষ্ট ঘাটতি চোখে পড়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই উপজেলার কাজ অন্য উপজেলা থেকে নি¤œমানের সামগ্রী এনে করা হচ্ছে। ঠিকাদার ইচ্ছামতো কম বিটুমিন দিয়ে কাজ করছেন। সুরক্ষা দেয়ালের পিলারগুলোও মজবুত নয়। রাতে নিয়মবহির্ভূতভাবে কাজ করছিল। এ কাররেণ নির্মাণকাজে বাধা দিলে ঠিকাদারের লোকজন স্থানীয়দের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে এবং একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আগের মেয়াদেও বিভিন্ন সড়কে নি¤œমানের কাজ করেছিলেন, যা অল্প সময়ের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। এবারও একই ধরনের অনিয়মের পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে অভিযোগ তাদের। এ কারণে তারা দ্রুত তদন্ত, উপকরণের মান যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটিতে প্রথম থেকেই নি¤œমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে রোলার মেশিন দিয়ে রোলিং করার পরে ইট পাউডার হয়ে গেছে। আবার কার্পেটিংয়ের সময় ধুলা-বালিযুক্ত পাথর ও নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহার করা হচ্ছে। তার মতে, এভাবে রাস্তা করার চেয়ে না করায় ভালো।
আরেক বাসিন্দা বাহারুল ইসলাম বলেন, রাস্তায় যেভাবে কাজ করা হয়েছে, এভাবে কাজ করলে রাস্তাটি বেশিদিন টিকবে না। আমরা মানা করা সত্ত্বেও ঠিকাদারের লোকজন ক্ষমতা দেখিয়ে নি¤œমানের ইট-খোয়া ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। তারা বলছেন, এলজিউডি সব জানে। তাদের নির্দেশে আমরা কাজ করছি। কিছু বলার থাকলে এলজিইডিকে বলেন।
এ বিষয়ে সাব-কন্ট্রাক্টের ছাত্রলীগের কর্মী মনিরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য তার মোবাইফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন। ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তা প্রকৌশলী আনিসুর রহমান বলেন, ঠিকাদারকে সড়কে নি¤œমানের বিটুমিন ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। এ ছাড়া কাজে নির্ধারিত মান ও পরিমাণ অনুযায়ী বিটুমিন ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজের মান নিশ্চিত করতে আমরা নিয়মিত সড়ক তদারকি। এবং সঠিকভাবে কাজ বুঝে নিয়ে বিল প্রদান করা হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন